৮৩ মিনিট টিকতে পারলো বাংলাদেশ
১ম টেস্ট, পচেফস্ট্রুম
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯৬/৩ ডিক্লে. এবং ৪৫ ওভারে ২৪৭/৬ ডিক্লে. (ডু প্লেসি ৮১, বাভুমা ৭১; মুমিনুল ৩/২৭, মুস্তাফিজ ২/৩০)
বাংলাদেশ ৩২০ এবং ৯০ অল-আউট, ৩২.৪ বল (ইমরুল ৩২, মুশফিক ১৬, মহারাজ ৪/২৫, রাবাদা ৩/৩৩)
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩৩ রানে জয়ী
বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশনে। ছিলেন না মরনে মরকেল। ড্র ছিল বাংলাদেশের আশা। কিন্তু বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত যেতে পারলো না, ৮৩ মিনিটের মাঝেই ড্রয়ের আশা পরিণত হলো দুরাশায়। ৫ম দিনের প্রথম সেশনেই গুটিয়ে গেছে বাংলাদেশ, প্রথম টেস্ট হেরেছে ৩৩৩ রানে।
২০০৩ সালে চট্টগ্রামের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ৪৬৮ রানের লক্ষ্যে ১৩৮ রানেই শেষ হয়েছিল বাংলাদেশের ৪র্থ ইনিংস। মাশরাফি বিন মুর্তজা চোটের কারণে সেবার ব্যাট করতে পারেননি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ২০১৩ সালে ৪৮৩ রানের লক্ষ্যে ৪র্থ ইনিংসে ১৪৭ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার হারারেতে অবশ্য ব্যাট করেছিলেন সবাই। ৪র্থ ইনিংসে হেরে যাওয়া ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন স্কোর ছিল এর আগে এসবই, পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশ করতে পারলো আরও কম।
ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্নের সকালটা শুরু হয়েছিল মুশফিককে দিয়ে। এক বল আগেই একটা বাউন্সার আঘাত করেছিল মুশফিকের গ্লাভসে। তাতেই নড়বড়ে হয়ে গেলেন, রাবাদার পরের শর্ট বলে বাড়িয়ে দিলেন ব্যাট। আউট হওয়ার পর শ্যাডো করছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, হয়তো ভুলটাই শোধরাতে চাইছিলেন। তবে প্রথম স্লিপে আমলা ভুল করেননি, লাফিয়ে উঠে ক্যাচটা নিয়েছেন ঠিকঠাক। দিনের তৃতীয় ওভারেই প্রথম আঘাত পেয়েছে বাংলাদেশ।
দিনের দ্বিতীয় বলেই চার মেরে শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আভাস ছিল প্রতি আক্রমণের? না, এরপরই খোলসবন্দী হয়ে গেলেন। রাবাদার অফস্টাম্পের বাইরে বলটাতেও থাকলেন খোলসববন্দী হয়েই। পেছনের পায়ে গিয়ে ঠেলে খেলতে গেলেন, বলকে শুধু স্টাম্পেই ডেকে আনলো তার ব্যাট, ১৮ বলে করতে পারলেন ৯ রান। প্রতি আক্রমণ ভুলে বাংলাদেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লো আফ্রিকান বোলারদের আক্রমণ ঠেকাতে।
সে আক্রমণে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না লিটন দাস বা সাব্বির রহমানের কেউই। ১৬ বলে ৪ রান করে প্যাড আপ করতে গিয়েছিলেন লিটন, রাবাদার ভেতরের দিকে ঢোকা বলে। বলের পেস বুঝলেনই না, এলবিডাব্লিউ দিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিলেন, বল ট্র্যাকিংয়ের তিন ‘লাল’ লিটনকে শুধু বিদায়ই করলো না, খেয়ে দিল রিভিউও।
সাব্বির অবশ্য রিভিউয়ের চেষ্টা করেননি। তিনিও মহারাজকে চার মেরে ইনিংস শুরু করেছিলেন, এরপর টার্ন করা বল বা সোজা থাকা বলে যেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও সন্দিহান হয়ে গেলেন শুধু। এরকমই এক সোজা বলে সুইপ করতে গিয়েছিলেন, হলো না তেমন কিছু। হলো শুধু এলবিডাব্লিউ, তারও সংগ্রহ ৪, পার্থক্য শুধু তিনি খেলেছেন ৮ বল।
তাসকিনও করলেন ৪ রান, তিনিও এলবিডাব্লিউ হলেন মহারাজের বলে। মহারাজের বল পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যানরাই বুঝলেন না, তাসকিন বুঝবেন কিভাবে! তীক্ষ্ণ টার্ন তাসকিনের লেগস্টাম্প ভেঙ্গে দিতো, এলবিডাব্লিউ দিতে অসুবিধা হয়নি আম্পায়ারের।
অন-ফিল্ড আম্পায়ারের অসুবিধা হয়নি শফিউলকে সরাসরি রান-আউট দিতেও। অলিভিয়ার বোলারস ব্যাকড্রাইভে হাত লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, মিড অফ থেকে ছুটেছিলেন ডু প্লেসি। দুই রান নিয়েই খুশি ছিলেন শফিউল, মিরাজ ডাকলেন তিনের জন্য। ডু প্লেসি বলটা বাড়িয়ে দিলেন রাবাদাকে, তিনি থ্রো করলেন ব্যাটিং প্রান্তে। সহজেই স্টাম্প ভাঙলেন ডি কক, বাংলাদেশ ধ্বসে যাওয়ার পথে এগিয়ে গেল আরেকধাপ।
মেহেদী এরপর একটা ছয় মারলেন, চেষ্টা করলেন আরেকটার। তিনি অপরাজিত থাকলেন, কিন্তু শেষটা হলো মহারাজের হাতেই। তার বলে তার হাতেই ক্যাচ দিলেন মুস্তাফিজ। শেষ হলো প্রথম টেস্ট, যার শুরুতে ছিল টসের 'অদ্ভুত' সিদ্ধান্ত, আর শেষে থাকলো ৮৩ মিনিটের 'অদ্ভুতুড়ে' ব্যাটিং।