• বিশ্বকাপ বাছাই
  • " />

     

    কেন এই পরিণতি আর্জেন্টিনার?

    কেন এই পরিণতি আর্জেন্টিনার?    

    লা বোম্বোনেরায় সাধারণত জাতীয় দলের ম্যাচ দেখার সুযোগ কমই হয় আর্জেন্টাইনদের। পেরুর বিপক্ষে ম্যাচে তাই সাজ সাজ রব ছিল শুরু থেকেই। ম্যাচটা জিতে গেলে বুক থেকে বড় একটা পাথরই নেমে যেত আর্জেন্টিনার। কিন্তু ম্যাচ শেষে সেই সমর্থকেরা বাড়ি ফিরেছেন আরও বড় একটা ধাক্কা খেয়ে। ১৯৭০ সালের পর বিশ্বকাপে না খেলার সম্ভাবনা এখন প্রবল আর্জেন্টিনার।

    গত বিশ্বকাপটা আর্জেন্টিনার হাতছাড়া হয়েছিল অল্পের জন্য। অথচ পরের আসরে সেই দলটাই বিশ্বকাপ খেলতে পারবে কি না সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বাছাইপর্বের শেষতম রাউন্ড পর্যন্ত। যে ম্যাচে জিততে না পারলে সেই ‘দুঃস্বপ্ন’ টাই সত্যি হবে। বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়বে আর্জেন্টিনা। চার বছরে এমন কী হল যে কারণে এই দুরবস্থা লা আলবিসেলস্তেদের? ঘরের মাঠে পেরু বাধা না পেরুতে পারারই বা কারণ কি? তার আগে সমীকরণটাই একটু মিলিয়ে দেখা যাক।

    বিশ্বকাপে খেলতে কি করতে হবে?

    ‘ডু অর ডাই’- সমীকরণটা এমনই। ইকুয়েডরকে হারাতে হবে শেষ ম্যাচে। আর্জেন্টিনা হেরে গেলে বাদ পড়া অনেকটাই নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে পেরুকে নিজেদের ম্যাচে হারতে হবে আর্জেন্টিনার চেয়ে বড় ব্যবধানে। অন্য ম্যাচে প্যারাগুয়েকেও নিজেদের মাঠে হারতে হবে ভেনেজুয়েলার কাছে। ড্র করলেও নির্ভর করতে হবে বাকি দুই ম্যাচের ফলের উপর।


     

    মোট কথা, একটা জয়ই পারে আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ স্বপ্ন বাঁচাতে। তবে সবচেয়ে বড় বাধাটা ইকুয়েডরের রাজধানী কিটো। বুধবার সকালে এখানেই খেলতে হবে আর্জেন্টিনাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৮৫০ মিটার অবস্থিত কিটোতে আর্জেন্টিনার অতীত রেকর্ড মোটেই সুখকর নয়। শেষবার বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ২০০১ সালে এখানে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এরপরের দুইবারই হার। ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অবশ্য ১-১ গোলে ড্র নিয়ে ফিরেছিল আলেহান্দ্রো সাবেয়ার দল। উচ্চতার চাপ তো আছেই, আছে সমর্থকদের চাপও।

    ম্যাচটা জিততে হলে বাকি সবকিছুর সাথেই লড়াই করতে হবে লিওনেল মেসিদের। পারবে কি আর্জেন্টিনা? এবারের বাছাইপর্বে যে আর্জেন্টিনার দেখা মিলেছে তার ভিত্তিতে প্রশ্নের উত্তর একটাই পাওয়া যায়। না।

    মূল সমস্যাটা কোথায়?

    এখন পর্যন্ত খেলা ১৭ ম্যাচে আর্জেন্টিনা গোল করেছে ম্যাচ প্রতি একটার চেয়েও কম। আর্জেন্টিনার চেয়ে কম গোল আছে কেবল বলিভিয়ার। শেষ চার ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে মাত্র একবারই মাত্র বল ঢোকাতে পেরেছে হোর্হে সাম্পাওলির দল। সেই গোলটাও প্রতিপক্ষেরই দেয়া, আত্মঘাতী গোল।

    ইউরোপিয়ান ফুটবলে এখনও মাঠ মাতাচ্ছেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকাররা। সিরি আ, লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকায় প্রথম স্থানটা লিওনেল মেসি ও পাউলো দিবালার। প্রিমিয়ার লিগে সার্জিও আগুয়েরোও আছেন শীর্ষ কয়েকজনের ভেতর। আরেক স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দিও ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করছেন প্রায় সব ম্যাচেই।

    অথচ আর্জেন্টিনার আকাশি-সাদা জার্সি গায়ে চড়ালেই মলিন তারা। এই দোষ চাপানো যায় আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডের ওপরই। বানেগা-ডি মারিয়াদের সৃজনশীলতার অভাব শুরু থেকেই ভুগিয়েছে আর্জেন্টিনাকে।

    এক ক্যাম্পেইনে তিনবার কোচ বদলের ঘটনাকেও কারণ হিসেবে দাঁড় করানো যায়। জেরার্দো মার্টিনোর অধীনে তিন ম্যাচ জয়ের পর, দুই ড্র আর এক হারে শুরুটা একেবারে মন্দ ছিল আর্জেন্টিনার। এরপর এদগার্দো বাউজা আর্জেন্টিনা কোচের সিটে টিকতে পেরেছিলেন মাত্র ৮ ম্যাচ।

    হোর্হে সাম্পাওলি এসেছিলেন নতুন স্বপ্ন দেখিয়ে। তার অধীনে সেভিয়া ও চিলির খেলা নজর কেড়েছিল সবারই। কিন্তু সেই সাম্পাওলিও কিছু করতে পারলেন না। তার অধীনে বাছাইপর্বে এখনও একটি ম্যাচও জিততে পারেনি আর্জেন্টিনা। বারবার কোচ বদলের সাথে দলেও এসেছে পরিবর্তন। দলের ভেতর সেই সমন্বয় গড়ে ওঠার সময়টাই পায়নি আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা।


    সাম্পাওলির দলের সেই খেলা কই?

    নতুন কোচ সাম্পাওলির বেশ কিছু সিদ্ধান্তও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পেরুর সাথে ম্যাচের আগে জানিয়েছিলেন দিবালা-মেসিকে একসঙ্গে খেলানোটা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন এই জুটির একসঙ্গে খুব বেশি না খেলাকে।

    কিন্তু সেই ম্যাচেই শুরুর একাদশে তিনি নামিয়ে দিলেন অনভিজ্ঞ দারিও বেনেদেত্তোকে। আর্জেন্টিনার হয়ে মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা বেনেদেত্তো পুরো ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন প্রায় আধ ডজন। অথচ গোলরক্ষককে একবারের জন্যও বিপদে ফেলতে পারেননি। গঞ্জালো হিগুয়াইনকে দলে না নেয়া, মাউরো ইকার্দিকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা- তারপর এমন গুরুত্বপুর্ণ ম্যাচে আনকোরা একজনকে নামিয়ে গোলের আশা করা দুরাশাই বটে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ডি মারিয়ার বদলে আরিয়েল রিগোনিকে নামিয়ে আরও বড় জুয়া খেলতে চেয়েছিলেন সাম্পাওলি। আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেকের দিনটা শেষ পর্যন্ত ভুলেই যেতে চাইবেন রিগোনি।

    সেভিয়াতে খেলার সুবাদে সাম্পাওলির দলে গ্যাব্রিয়েল মের্কাদোও কিছুটা সুবিধা পেয়েছেন। সাম্পাওলির নিযের পছন্দের রাইটব্যাকও হতাশ করেছেন। রক্ষণে যেমন-তেমন, আক্রমণে একেবারেই দুর্বল মেরকাদো। রাইট উইঙে থাকা খেলোয়াড়ের সাথে সমন্বয়হীনতা আর্জেন্টিনার আক্রমণে দৈন্য দশার অন্যতম কারণ।

    চিলি আর সেভিয়ার খেলা দেখে সাম্পাওলিকে চিনিছিলেন যারা তাদের জন্য এই আর্জেন্টিনা দুর্বিষহ এক যন্ত্রণার নাম। হাই প্রেসিং গেম প্ল্যান তো মরীচিকা। পেরুর সাথে শেষ আধ ঘণ্টার নখদন্তহীন আর্জেন্টিনার আক্রমণগুলো আর যাই হোক বিশ্বকাপের আশা দেখাতে পারে না।  


    মেসি নির্ভর দল আর মেসির উপর নির্ভরতা

    মেসি নির্ভর দলের সংজ্ঞাটা বুঝতে ভুল করেন অনেকেই। সাধারণ সমর্থকরা না বুঝলে সেটা মেনে নেয়াই যায়। কিন্তু খোদ আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রাও সেই পার্থক্য বোঝেন বলেও মনে হয় না! নয় কোচের কাছ থেকে পাওয়া দীক্ষাটাই হয়ত ভুল পেয়েছেন তারা।



     

    ডিবক্সের ভেতর শুট করার মতো পরিস্থিতিতেও মেসিকে খুঁজেছেন বেনেদেত্তো-গোমেজরা। আক্রমণে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েও আর্জেন্টিনার আক্রমণ থমকে গেছে, খেলোয়াড়রা খুঁজেছেন মেসিকে!

    কিন্তু মেসি নির্ভর দল হওয়ার কথা ছিল অন্যরকম। যে ছকের কেন্দ্রে থাকবেন মেসি। মাঝমাঠ থেকে তার কাছে আসবে বলের যোগান। কখনও বা মাঝমাঠ থেকে বলের যোগানদাতা হবেন তিনি। ছক থেকে গেছে সাম্পাওলির ডায়েরির পাতাতেই, মাঠের খেলায় সেই কৌশলের কোনো ছাপই ছিল না ।