বাংলাদেশকে রেকর্ড 'ফিরিয়ে দিলেন' ডি কক-আমলা
বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৭৮/৭ (মুশফিক ১১০*, ইমরুল ৩১, সাকিব ২৯; রাবাদা ৪/৪৩)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪২.৫ ওভারে ২৮২/০ (ডি কক ১৬০*, আমলা ১১০*)
ফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরাঃ কুইন্টন ডি কক
দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে প্রথম সেঞ্চুরি, দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে প্রথম, তাদের মাঠেই সর্বোচ্চ স্কোর- বাংলাদেশ ব্যাট করার সময় বেশ কিছু রেকর্ডই নতুন করে লিখেছিল। কে জানত, ব্যাট করতে নেমে সেই রেকর্ডই বাংলাদেশকে এভাবে ফিরিয়ে দেবে দক্ষিণ আফ্রিকা? ১০ উইকেটের জয়টা তো বাংলাদেশের জন্য শুধু একটা হার নয়, বোলিং সামর্থ্য নিয়ে বড় একটা প্রশ্নচিহ্নও বটে।
ম্যাচটা ৪২.৫ ওভারেই কোনো উইকেট না হারিয়ে জিতে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা- এই তথ্য থেকে যতটা একপেশে ম্যাচের ধারণা পেতে পারেন, ম্যাচটা হয়েছে তার চেয়েও বেশি একতরফা। ৯৫ রানে তাসকিনের বলে কঠিন ফিরতি ক্যাচ আর ডি ককের দেড়শ পার করার পর নাসিরকে একটা সুযোগ দেওয়া ছাড়া কখনোই বাংলাদেশের বোলাররা সামান্যতম অস্বস্তিতেও ফেলতে পারেননি কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলা। ডি কক পেয়েছেন ১৩তম সেঞ্চুরি, আমলা ২৬তম। কাকতালীয়ই, ১৩ ও ২৬ পর্যন্ত আসতে ডি কক ও আমলাকেই সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলতে হয়েছে।
তবে এটা করতে গিয়েই দুজন নতুন করে লিখেছেন অনেক রেকর্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে তো বটেই, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে যে কোনো জুটিতেই সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড লিখেছে নতুন করে। পরে তাড়া করে এটাই কোনো উইকেট না হারিয়ে সবচেয়ে বেশি রান করার কীর্তি। ডি কক-আমলা ভেঙে দিয়েছেন গত বছর এজবাস্টনে শ্রীলঙ্কার ২৫৫ রান তাড়া করে ইংল্যান্ডের ১০ উইকেটে জয়ের রেকর্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় ওপেনিং জুটির রেকর্ডও হয়ে গেছে।
রুবেলের প্রথম বলেই চার মেরে ডি কক আভাস দিয়েছিলেন বড় কিছুর। নিজেরা দুর্দান্ত বল তো করেছেনই, বাংলাদেশের বোলাররা এলোমেলো বোলিং করে কাজটা করে দিয়েছেন আরও সহজ। আর বাজে ফিল্ডিং তো ছিলই। কিম্বার্লির ব্যাটিং স্বর্গে তাই বাংলাদেশের বোলাররা কোনো নম্বর ছাড়াই ফেল করেছেন মহাসমারোহে।
অথচ প্রথম ইনিংসে মুশফিকের সেঞ্চুরি অন্তত লড়াই করার আশা দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে। মুশফিক যখন ক্রিজে এসেছিলেন, বাংলাদেশ ৬৭ রানে হারিয়েছে ২ উইকেট। সাকিব আল হাসানের ৫৯ রানের জুটিতে এরপর আবার পথ ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ। দুজনেই খেলছিলেন দারুণ, সিঙ্গেলের সঙ্গে সুযোগ পেলে চারে সচলও রাখছিলেন স্কোরবোর্ড। কিন্তু ইমরান তাহিরের একটা গুগলি বুঝতে না পেরে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন সাকিব। বাংলাদেশের রান তখন ২৬ ওভার শেষে ১২৫।
এরপর ঘুরতে শুরু করা রানের চাকাটা মুশফিকের সঙ্গে মিলে চালু রাখছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ৩০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৩ উইকেটে ১৪৭, ক্রিকেটীয় সমীকরণে শেষ ২০ ওভারে তা দ্বিগুণই হওয়ার কথা।
মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ সেই পথে ছিলেন ভালোমতোই। এর মধ্যেই মুশফিকের বলে একটা এলবিডব্লুর সিদ্ধান্ত রিভিউ করলেন না তাহির। খানিক পরেই আবার তা নিলেন মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহরটা আউট ছিল না, কিন্তু মুশফিক রিভিউ নিলে আউট হয়ে যেতে পারতেন।
তবে রানের ওপর তা খুব একটা প্রভাব ফেলছিল না। মাহমুদউল্লাহ রাবাদাকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় মারলেন, আভাস দিচ্ছিলেন আরও বড় কিছুর। কিন্তু সেই ডাউন দ্য উইকেটে এসেই হলো সর্বনাশ, প্যাটারসনের বলে টাইমিংয়ের গণ্ডগোলে বল তুলে দিলেন আকাশে। সহজ ক্যাচটা নিতে ভুল করেনই মিলার।
বাংলাদেশের রান তখন ৩৮.১ ওভারে ১৯৫। শেষ ১২৫ ওভারে ১০০ না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। সাব্বির সেই কাজটা শুরুও করেছিলেন, প্যাটারসনের এক ওভারে চার ছয়ও মারলেন। কিন্তু রাবাদাকে অফে উড়িয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন সেই প্যাটারসনকেই।
মুশফিক ততক্ষণে পৌঁছে গেছেন আশির ঘরে। সাব্বিরকে নিয়ে শেষ ওভারগুলোতে যখন ঝড় তুলবেন, তখনই আবার ছন্দপতন। সাব্বির আউট হয়ে যাওয়ার পর সেভাবে চার-ছয়ও হলো না। এর মধ্যেই অবশ্য মুশফিক পেয়ে গেছেন নিজের পঞ্চম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের কারও প্রথম। খানিক পর দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের ওয়ানডের সর্বোচ্চ স্কোরও হয়ে গেল।
তবে সেঞ্চুরির আগেই পায়ের চোটে খানিকটা বেসামাল হয়ে পড়েন মুশফিক, শেষ দিকে তাই আর ঝড় তুলতে পারেননি সেভাবে। সেই কাজটা করার চেষ্টা করেছে নবাগত সাইফ উদ্দিন, তাঁর ১১ বলে ১৬ রানেই বাংলাদেশ গিয়েছে ২৭৮ পর্যন্ত। কে জানত, দিন শেষে তা এমন ফেলনা বানিয়ে ফেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা?