চেষ্টাটাও করতে পারল না বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ৪৫.৪ বলে ২৪৯ (ইমরুল ৬৮, মুশফিক ৬০, মাহমুদউল্লাহ ৩৫; ফেকলেকায়ো ৪/৪০)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৫০ ওভারে ৩৫৩/৬ (ডি ভিলিয়ার্স ১৭৬, আমলা ৮৫; রুবেল ৪/৬২ )
ফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৪ রানে জয়ী
দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৫৪ রানের লক্ষ্য সিংহের ডেরায় ঢুকে অক্ষত অবস্থায় ফিরতে পারার মতোই কঠিন। তবে গর্জন শুনেই ভয় পেলে সেই কাজটা হয়ে যায় অসম্ভবই। বাংলাদেশও তাই ভালো একটা শুরুর পরও ম্যাচটা হেরে গেল হারার আগেই। ১০৪ রানে হেরে দক্ষিণ আফ্রিকার দুঃস্বপ্নের সফরটা লম্বা হলো আরেকটু, তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও হেরে গেল ২-০ ব্যবধানে।
পাহাড় টপকাতে যে ধরনের শুরু দরকার, বাংলাদেশ তার কাছাকাছি অন্তত করতে পেরেছিল। প্রায় বলপ্রতি রান করছিলেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। কিন্তু ৭.৪ ওভারে ৪৪ রান তোলার পরেই রাবাদার বলে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন তামিম, ২৩ রান করেই।
লিটন আর কায়েস ১৯ বলে তুলে ফেলেছিলেন ২৪ রান। লিটন ছন্দেই ছিলেন, একটা ছয়ও মেরেছিলেন। কিন্তু ফেকলেকোয়াওয়ের বলে এলবিডব্লু হয়ে ফিরে গেছেন ১৪ রান করেই। ওয়ানডে দলে নিজের জায়গা পাকা করার সুযোগটাও হারালেন আরও একবার।
৩৫৪ রানের লক্ষ্যটা তখন মনে হচ্ছিল অনেক দূরের বাতিঘর। সেটি একটু একটু কাছে আসতে শুরু করল তৃতীয় উইকেটে। মুশফিক-কায়েস বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই রান করছিলেন, অবশ্য এর মধ্যেই ডুমিনি সহজ একটা ক্যাচ ফেলে দেওয়ায় জীবন পান কায়েস। তার আগে কায়েস নিজেই ডুমিনির ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন, ‘প্রতিদানই’ যেন পেলেন।
কায়েস এর পরেই পেলেন ফিফটি, খানিক পর মুশফিকও যোগ দিলেন সেখানে। কিন্তু তখন রান রেট বেড়ে যাচ্ছিল চড়চড় করে, চার-ছয়টা দরকার ছিল খুব। কিন্তু সেট হয়েও সুযোগটা নিতে পারলেন না দুজন। প্রথমে ইমরান তাহিরের গুগলি বুঝতে না পেরে সহজ ক্যাচ দিলেন ইমরুল, ভাঙল ৯৩ রানের জুটি। খানিক পর সেই তাহিরের আরেকটি গুগলিতেই খোঁচা দিয়ে আউট হয়ে গেলেন সাকিব আল হাসান। ১৭১ রানেই ৪ উইকেট হারাল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে যিনি ম্যাচে রাখতে পারতেন, সেই মুশফিকও প্রিটোরিয়াসের স্লো বাউন্সারে বিভ্রান্ত হয়ে ক্যাচ দিলেন ডুমিনিকে। আশার প্রদীপ তখন প্রায় নিভুনিভু, বাংলাদেশ শুধু চেষ্টাই করতে পারত। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ-সাব্বির পরিস্থিতির দাবিটা সেভাবে মেটাতে পারলেন না। দুজনের ৩৫ রানের জুটিটা এলো ৪৩ বলে। তারপরও মনে হচ্ছিল, ৩০০র আশেপাশে যেতে পারে বাংলাদেশ।। কিন্তু ১৭ রান করে সাব্বির তাহিরকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেওয়ায় সেই আশাও খায় বড় একটা ধাক্কা।
বাকি গল্পটা শুধু ব্যবধান কমানোর। মাহমুদউল্লাহর ৪২ বলের ৩৩ রানের ইনিংসে সেটাই শুধু হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ২৪৯ রানেই অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচটা অবশ্য তার আগেই অনেকটুকু হেরে গেছে বাংলাদেশ, এক এবি ড ভিলিয়ার্সের কাছেই। এই সিরিজে বাংলাদেশের বোলিং মানেই দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের রেকর্ডবুকে অনেক কিছু নতুন করে লেখানো। ডি ভিলিয়ার্সের রেকর্ড হতে পারত অনেক কিছুই। নিজের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান অবশ্য পেরিয়ে গেছেন, কিন্তু আর ১৪ রান করলেই ভেঙে যেত দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড। ১০ রান করলে হতো বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আর প্রথম মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ডও খুব বেশি দূরে মনে হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত রুবেলের বলে ক্যাচ দিয়েই ফিরে গেছেন ১৭৬ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে, সঙ্গী হয়েছে পার্ল দর্শকদের মুহূর্মুহূ অভিবাদন।
এই রুবেলই সেঞ্চুরির পর ডি ভিলিয়ার্সের ক্যাচটা ধরতে পারেননি। সেজন্য মুশফিক আর অধিনায়ক মাশরাফির অশ্রাব্য বকুনিও শুনতে হয়েছে। সেটি নিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার রান হয়তো ৩০০ হয় না। তার চেয়েও বড় কথা, এক আর দুই রানেই সুযোগ দিয়েছিলেন ডি ভিলিয়ার্স। ১৮ তম ওভারের চতুর্থ বলেই রান আউট হতে পারতেন, কিন্তু মাহমুদউল্লাহ পারেননি বলটা ধরতেই পারেননি। এক ওভার পর সাকিবের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন স্লিপে, কিন্তু নাসির হাতেই লাগাতে পারেননি।
এরপর সুযোগ পেয়ে ডি ভিলিয়ার্স যা করেছেন, সেটা অবশ্য তাঁর জন্য নতুন কিছু নয়। শট খেলেছেন দুহাতে, তাঁর ট্রেডমার্ক শটগুলো তো ছিলই। ১৫টি চার ও সাতটি ছয়ে সবচেয়ে বেশি ঝড় বইয়েছেন মাশরাফি-তাসকিনের ওপর। মাশরাফি তো ওয়ানডে ক্যারিয়ারেই সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছেন আজ।
অথচ একটা সময় বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরেছিল ভালোমতোই। ডি কক-আমলা একটু সতর্ক শুরুই করেছিলেন আজ। প্রথম ১০ ওভারে রান উঠেছিল ৫০, বাউন্ডারি ছিল মাত্র তিনটি। দুই ওপেনার মিলে যখন ১০০ করার অপেক্ষায়, তখনই সাকিবের আঘাত। ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে এসে ডি কককে এলবিডব্লু করলেন সাকিব। ৬০.২ ওভার এবং ৩৭২ রান দেওয়ার পর ওয়ানডেতে উইকেটের দেখা পেল বাংলাদেশ। তিন বল পর আবারও সাকিবের আঘাত। এবারের বলটা আরও দুর্দান্ত, ফ্লাইট আর লুপে ডু প্লেসিকে বিভ্রান্ত করে বলটা গিয়ে লাগল অফ স্টাম্পে। শুন্য রানেই ফিরে গেলেন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক। কিন্তু কে জানত, ওই দুই আউটই দিনে বাংলাদেশের একমাত্র আশার আলো হয়ে থাকবে? এই সিরিজে বাংলাদেশের গল্পটা যে বেদনার বালুচরে খেলাঘর ভাঙার গল্প!