হারার আগেই হেরে গেল বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ৪০.৪ ওভারে ১৬৯ (সাকিব ৬৩, সাব্বির ৩৯; প্যাটারসন ৩/৪৪)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৫০ ওভারে ৩৬৯/৬ (ডু প্লেসি ৯১ আহত অবসর, ডি কক ৭৩ ,মার্করাম ৬৬; মিরাজ ২/৫৯, তাসকিন ২/৬৬)]
ফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০ রানে জয়ী
৩৭০ লক্ষ্যের পর ম্যাচের ফল নিয়ে প্রায় আর কোনো অনিশ্চয়তা থাকেই না। তবে আগের ম্যাচে সেই পাহাড় টপকানোর ইচ্ছেটা অন্তত ছিল বাংলাদেশের। আজ তো তাও হলো না, দুই কদম এগুতেই বাংলাদেশ দলের দম ফুরিয়ে গেল, হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল খাদের অতলে। অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজার ৫০তম ম্যাচটাও হলো ভুলে যাওয়ার মতো। ২০০ রানে হেরে বাংলাদেশ দল ওয়ানডে সিরিজেও হয়েছে ধবলধোলাই। তার চেয়েও বড় কথা, প্রতিটা ম্যাচেই হেরে গেছে হারার আগেই।
আগের দুই ম্যাচে শুরুতে খুব বেশি হোঁচট খেতে হয়নি, টপ অর্ডার কিছু না কিছু রান করেছিল। আজ ম্যাচের ফল নিয়ে যেটুকু গাণিতিক অনিশ্চয়তাও ছিল, প্রথম কয়েক ওভারের পরেই তা মিলিয়ে গেল। শুরুটা ইমরুল কায়েসের ডেন প্যাটারসনের বলে মিড অফে ক্যাচ প্র্যাকটিস করানো দিয়ে। ১ রান করে উইকেটটা বলতে গেলে দিয়েই এসেছেন। লিটন দাস এরপর টিকলেন মাত্র ছয় বল, ছয় রান করে আরও একবার ব্যর্থ সুযোগটা কাজে লাগাতে।
তবে সুযোগটা সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারতেন সৌম্য সরকার। দলে জায়গাটা একেবারেই নড়বড়ে, আত্মবিশ্বাসের অভাবটা বোঝা যাচ্ছিল ব্যাটেও। শেষ পর্যন্ত ৮ রান করে স্লিপে নিজের উইকেটটা উপহার দিয়ে ফিরে গেছেন।
মুশফিকুর রহিম চাইলে হয়তো থিতু হয়ে আরেকটি মূল্যহীন বড় ইনিংস খেলতে পারতেন। তবে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলা রান রেটের সাথে তাল মেলানোর জন্য চেষ্টা করতে গিয়েই হয়তো ডাউন দ্য উইকেটে এসে ক্যাচ তুলে দিলেন। ৫১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের পরাজয় তখন সময়ের ব্যাপার। খানিক পরেই আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে আউট মাহমুদউল্লাহ, ৭১ রানে নেই ৫ উইকেট।
এরপর সাকিব আর সাব্বির মিলে একটু ভদ্রস্থ করার চেষ্টা করলেন স্কোরকার্ড। সাকিব পেলেন ওয়ানডেতে নিজের ৩৫তম ফিফটি, দুজনের জুটিতে রান এলো ৬৭ রান। কিন্তু পার্ট টাইম বোলার মার্করামকে আউট করতে গিয়ে আউট হলেন সাকিব। সাব্বিরও ফিফটিও পেলেন না, সেই মার্করামকেই দিয়ে এলেন উইকেট। শেষ পর্যন্ত ১৬৯ রানেই অলআউট বাংলাদেশ। একটুর জন্য অবশ্য একটা রেকর্ড হয়নি, রানের দিক দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে একবারই এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। (২০১১ সালে, ২০৬ রানে)
তবে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে একটা রেকর্ড হয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ স্কোর ইংল্যান্ডের ৩৯১, সেটি পেরিয়ে যাওয়াটা মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রেকর্ড আর হলো না, তবে বাংলাদেশের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটা ঠিকই হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার।
তবে হওয়ার কথা ছিল আরও অনেক বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে এগুচ্ছিল, তাতে ৪০০ মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। কিন্তু ৪১তম ওভারেই এসে হঠাৎ করে ছন্দপতন। ডাবলস নিতে গিয়ে হঠাৎ করেই কোমরে টান পড়ে ফাফ ডু প্লেসির। মাঠেই শুয়ে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক, সেখান থেকে তাঁকে ডেভিড মিলার পিঠে করে নিয়ে আসেন মাঠের বাইরে। ডু প্লেসির রান তখন ৯১, সেঞ্চুরি থেকে মাত্র নয় রান দূরেই নিতে হয় আহত অবসর।
ওই ওভারেই আরেকটি বড় ব্রেকথ্রু পেয়ে যায় বাংলাদেশ। অ্যান্ডাইল মার্করাম টেস্ট অভিষেকে একটুর জন্য সেঞ্চুরি পাননি। ওয়ানডে অভিষেকে আজ যেভাবে খেলছিলেন, কাছাকাছি চলে যাবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ওই ৪১তম ওভারেই ডাবলস নিতে গিয়ে ইমরুল কায়েসের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে যান।
তবে ডি ভিলিয়ার্স যখন ক্রিজে, তখন সামনে আরও বিভীষিকাই অপেক্ষা করছিল রুবেলদের জন্য। শুরুতেও তেমন আভাস দিচ্ছিলেন, মাশরাফিকে অফ সাইডে উড়িয়ে মেরেছিলেন ছয়ও। কিন্তু ২০ রান করে রুবেলের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন আকাশে। মাশরাফি খানিকটা দৌড়ে নিয়েছেন দারুণ একটা ক্যাচ।
হঠাৎ করেই যেন খানিকটা খেই হারিয়ে ফেলে আফ্রিকা। দুই ওভার পর আরেক অভিষিক্ত মুল্ডারকে এলবিডব্লু করে এই সিরিজে নিজের প্রথম উইকেট পান তাসকিন। ওই ওভারেই আরেকটি দারুণ বলে খোঁচা দিয়ে মুশফিককে ক্যাচ দিলেন ফেকলেকোয়াও, তাসকিন পেলেন জোড়া উইকেট। ৪৬ ওভার শেষে রান তখন ৩৩৫।
সেখান থেকে ৩৬৯ হওয়ার মূল কৃতিত্ব কাগিসো রাবাদার। শেষ দিকে ১১ বলে ২৩ রান করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকাও তাই শেষ ১০ ওভারে করতে পেরেছে ৮৮ রান।
দিন শেষে অবশ্য এসবের ভূমিকা ছিল সামান্যই। ম্যাচটা যে শুরুর আগেই এক অর্থে হেরে বসেছে বাংলাদেশ!