এক চোখের বাঘ
১ লা জুলাই, ১৯৬১।
ইংল্যান্ডের হোভে গাড়ি করে যাচ্ছিলেন অক্সফোর্ডে পড়ুয়া এক ভারতীয় তরুণ। একটা ক্রিকেট ম্যাচ শেষ করেই। হঠাৎই এক দুর্ঘটনায় পড়লেন। আরেকটু হলেই হতে পারত প্রাণসংশয়। তবে সেবার তেমন কিছু হয়নি। রাতটা কাটালেন তেমন কোনও চিকিৎসা ছাড়াই। তবে রাতভর চোখে যন্ত্রণা, সেটা নিয়ে সকালে হাজিরা ডাক্তারের কাছে। সেখান থেকে অস্ত্রোপচারের টেবিল, সেখান থেকে দৃষ্টি চলে যাওয়া এক চোখ থেকে।
সেই এক চোখ নিয়েই এরপর বিশ্ব মাতিয়েছেন তরুণটি। বন্ধুবান্ধবরা তাকে আদর করে ডাকত টাইগার, শরীরে তাঁর পতৌদির বিখ্যাত নবাব ইফতেখার আলী খানের রক্ত। প্রথম যখন দলে আসেন, তাকে কী নামে ডাকা হবে, এটা নিয়েই সতীর্থদের মাঝে ছিল সংশয়! আর যাই হোক, তিনি তো নবাব! সেটার সমাধান করে দিয়েছিলেন তিনিই। সতীর্থরা তাকে 'টাইগ' বলতেন, টাইগার বলতেন, বা বলতেন নবাব!
এক চোখ হারালে অনেকেই হয়তো ক্রিকেটটাই ছেড়ে দিত। কিন্তু “টাইগার” তো অন্য ধাতুতে গড়া। জন্মেছিলেন নেতা হওয়ার সহজাত প্রতিভা নিয়ে, ভারতের ইতিহাসের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়কই বলা হয় তাকে। অধিনায়কত্বও পেয়েছিলেন এক দূর্ঘটনায়। নড়ি কন্ট্রাক্টর ভারতের অধিনায়ক তখন, তিনি চোট পেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। যে চোট ক্যারিয়ারই শেষ করে দিয়েছিল তার। সে ম্যাচেই অধিনায়ক বনে গেলেন নবাব পতৌদি জুনিয়র। ৩৪.৯১ টেস্ট গড়, ছ'টা সেঞ্চুরি, ১৬টি ফিফটি তার সামর্থ্যের খুব কমই জানান দেবে। ভারতকে আক্ষরিক অর্থেই বুক চিতিয়ে লড়ার পথটা তো তারই দেখিয়ে দেওয়া। রাজ্য-টাজ্য ভুলে সবাই ভারতীয়, এ নীতিটাও বুনেছিলেন তিনি। তার আমলেই দারুণ কার্যকর হয়েছিল ভারতের স্পিন চতুষ্টয়।
সবচেয়ে কম বয়সী টেস্ট অধিনায়ক (২১ বছর ৭৭ দিন) হওয়ার রেকর্ডটা অনেকদিনই ছিল তার দখলে। ২০০৪ সালে এসে সেটা ভেঙে দিয়েছেন জিম্বাবুয়ের টাটেন্ডা টাইবু।
তবে টাইগারের রেখে যাওয়া প্রেরণার অজস্র উদাহরণ আর তার লড়াই করার চেতনা, সেগুলো তো হারানোর নয়!