• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    কন্তের ব্যর্থতার কারণ আর করণীয়

    কন্তের ব্যর্থতার কারণ আর করণীয়    

    ইংল্যান্ডে এসে প্রথম মৌসুমেই চেলসিকে জিতিয়েছিলেন প্রিমিয়ার লিগ। চেলসি ম্যানেজার আন্তোনিও কন্তের সে সাফল্য এখন অতীত হয়ে গেছে দলের সাম্প্রতিক ফর্মে। গত ১০ ম্যাচে মাত্র ২ জয়, শেষ দুই ম্যাচে তুলনামূলক ছোট দলের বিপক্ষে বড় হার, বোর্ডের সঙ্গে কন্তের ঝামেলাটাও স্পষ্ট- সবমিলিয়ে চেলসির অবস্থা টালমাটাল।

    চেলসির অস্থির অবস্থাটা এতোটাই প্রকট যে কন্তেকে বরখাস্ত করার প্রশ্নও উঠে গেছে চেলসির শেষ দুই ম্যাচের পর। ইতালিয়ানের আগের দুইবার প্রিমিয়ার লিগজয়ী ম্যানেজারও মৌসুমের মাঝপথেই ছাঁটাই হয়েছিলেন চাকরি থেকে। আর ক্লাবটা যখন চেলসি, কন্তের বরখাস্ত হওয়ার প্রশ্নটা তাই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ক’দিন আগেও ছন্দে থাকা দলের এমন পরিণতি কেন?

    কস্তার শেষ, কন্তের শুরু...

    ডিয়েগো কস্তার সাথে কন্তের সম্পর্কের অবনতিটা ঘটেছিল গত মৌসুমের মাঝপথেই, পরিণতিটা ঘটেছে এবার। চেলসি ছেড়ে আবারও পুরনো ঠিকানায় ফিরতে হয়েছে কস্তাকে। স্প্যানিশ স্ট্রাইকারের অভাবটা মাঠের খেলায় হাড়ে হাড়েই টের পেয়েছেন কন্তে। আর সে সূত্র ধরে চেলসি বোর্ডের সাথে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে ইতালিয়ান ম্যানেজারের।

    অলিভিয়ের জিরু, রস বার্কলিদের দলে ভেড়ানোর পেছনে কন্তের চেয়ে চেলসি বোর্ডের পছন্দই প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। এমন গুঞ্জন ছিল শুরু থেকেই। সেটা যে কেবল গুজব নয়, তার প্রমাণ মিলেছে আগের ম্যাচেই। ওয়াটফোর্ডের সাথে ম্যাচে ইডেন হ্যাজার্ডকে কন্তে নামিয়েছিলেন স্ট্রাইকারের পজিশনে। আর আলভারো মোরাতার অনুপস্থিতিতে একমাত্র স্ট্রাইকার জিরু ওই ম্যাচ শুরু করেছিলেন বেঞ্চে। কন্তের কৌশলে যদি জিরু থাকবেনই, তাহলে শুরু থেকেই নয় কেন? বিশেষ করে আগের ম্যাচে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বোর্নমাউথের কাছে ৩-০ গোলে হারার পর স্ট্রাইকার ছাড়া ম্যাচ শুরু করাই বা কতোটুকু যৌক্তিক? শেষ পর্যন্ত ওয়াটফোর্ডের কাছেও ৪-১ গোলে হেরে শেষ হয়েছিল ওই ম্যাচ। সাথে লিগেও লিগেও চেলসি নেমে গেছে ৪ নম্বরে।  


     

    সেই কন্তে, এই কন্তে  

    ইতালি থেকে আসার পর ইংল্যান্ডে মানিয়ে নিতে কন্তে সময় নিয়েছেন বেশ কিছুটা। বিভিন্ন সময়ে তার কথাবার্তাতেই স্পষ্ট হয়েছে সেটা। সেই মানিয়ে নেওয়াটা অবশ্য সাময়িক ছিল বলেই মনে হচ্ছে এখন। দলের খারাপ সময় প্রভাব ফেলেছে কন্তের মানসিকতার ওপরও। শেষ কবে কন্তেকে ডাগআউটে বাধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়তে দেখেছেন? চেলসি সমর্থকেরাও হয়ত মনে করতে পারবেন না সেটা। কন্তেকে যারা অনেকদিন ধরে চেনেন, তারা জানেন এই লোক সেই লোক নয়!

    লন্ডনে থাকা, না-থাকা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে করা কন্তের মন্তব্য প্রভাব ফেলেছে দলের ওপরও। নিজের বানানো দলটাই এখন তাই অচেনা কন্তের কাছে। এই মৌসুমে দলকে এক সুতোয় গাঁথতেও ব্যর্থ তিনি। গত মৌসুমের কন্তের সাথে এবারের কন্তের তাই বিস্তর ফারাক!

    বোর্ডের সাথে কন্তের দ্বন্দ্ব

    চেলসি ম্যানেজারের মন্তব্য সময়ে-সময়ে অখুশি করেছে বোর্ড কর্তাদের। এর প্রভাব আসলে পড়েছে অন্য জায়গায়। গত দুই দলবদলের মৌসুমে চেলসি আর চেলসি ম্যানেজারের পছন্দের তালিকাটা আলাদাই ছিল। বারবার সংবাদ সম্মেলনে নিজের পছন্দের দল না পাওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ করেছেন কন্তে। নতুন খেলোয়াড়দের নিয়েও তেমন কোনো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি।

    গ্রীষ্মের দলবদল মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা খরচ করেও তাই দল নিয়ে খুশি হতে পারেননি কন্তে। প্রথম মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেননি চেলসি ম্যানেজার। কিন্তু পরেরবার কন্তের চাহিদা ছিল বড় বাজেটের দল। বোর্ডের সাথে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে পারেননি, উলটো দূরত্বই বেড়েছে কন্তের।

    খেলোয়াড়েরাও ডুবিয়েছেন তাঁকে

    মৌসুমের শুরুটা দারুণ করেছিলেন নতুন আসা মোরাতা। সময় গড়িয়েছে কিন্তু সেই ফর্ম তিনি টেনে আনতে পারেননি ডিসেম্বর পর্যন্তও। চেলসির শেষ চার ম্যাচে অবশ্য দলে ছিলেন না মোরাতা। তার অভাবটাও স্পষ্টই ছিল। দলে ফিরলেও কতোটুকু পার্থক্য গড়তে পারবেন তিনি, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

    মোরাতার করা ১০ গোলের ৬ টিই এসেছে হেড থেকে। কিন্তু বাতাসে বল দখলের লড়াইয়ে পিছিয়ে তিনি। হেডেড ডুয়েলসে ৫২ শতাংশ বারই প্রতিপক্ষের কাছে বল হারিয়েছেন মোরাতা। লিগে এখন পর্যন্ত ৫৬ বার গোলে শট নিয়ে জালের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছেন ওই ১০ বারই। প্রিমিয়ার লিগের গতি নির্ভর খেলায় মোরাতা মানিয়ে নিতে পেরেছেন অল্পই। 



     

    মোরাতার আরেক স্প্যানিশ সতীর্থ পেদ্রো রদ্রিগেজও হতাশ করেছেন এই মৌসুমে। অক্টোবরের পর আর কোনো অ্যাসিস্টও  করতে পারেননি তিনি। এ ক্ষেত্রে আলাদা চেলসির আরেক স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ফ্রান্সেস ফ্যাব্রিগাস। এই মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের সুযোগ তৈরি করেও তিনি অবশ্য অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন দলে। দল বাছাইয়ের ব্যাপারেও তাই দায় এড়াতে পারছেন না কন্তে।

    নতুন আসা তিমুয়ে বাকেয়োকো শুরু থেকেই ধুঁকছেন স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে। আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখে চেলসির জন্য বিপদটা ডেকে এনেছিলেন তিনিই। এই দলে অধিনায়ক গ্যারি কেহিলও যোগ দিয়েছেন ব্যর্থদের দলে, একাদশে জায়গাটাও সম্ভবত হারাচ্ছেন খুব তাড়াতাড়ি।

    খেলোয়াড়দের ‘খেলা ভুলে যাওয়ার’ এই অভ্যাসটা অবশ্য চেলসিতে নতুন কিছু নয়। এর আগে ড্রেসিংরুমের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হোসে মরিনহোকেও ছাড়তে হয়েছিল চেলসি। শিরোপা জেতার কয়েক মাস পরই!

    পরের ৫ ম্যাচই কন্তের জন্য ভাগ্য নির্ধারনী

    চেলসি মালিক রোমান আব্রামোভিচের ম্যানেজার বরখাস্ত করার রীতিটা তো পুরনোই। হোসে মরিনহো থেকে শুরু এরপর ডি মাত্তেও, আন্দ্রে ভিয়াস বোয়াস, লুই ফিলিপে স্কলারি, কার্লো আনচেলত্তিরাও ক্লাব মালিকের সিদ্ধান্তে ছাঁটাই হয়েছিলেন চাকরি থেকে। তাদের কারো ক্ষেত্রেই আগের মৌসুমের সাফল্য বিবেচনায় আসেনি।

    শেষ ১০ ম্যাচে মাত্র ২ জয় নিয়ে এখনও চেলসি ম্যানেজারের পদে বহাল থাকায় অবশ্য নিজেকে ভাগ্যবান ভাবতে কন্তে। এই পদে তার পূর্বসুরিরা বরখাস্ত হওয়ার আগের ১০ ম্যাচে গড়ে ৫০ শতাংশ বার জয়ের মুখ দেখেছেন।  ডি মাত্তেও ও মরিনহো (দুই দফায়) ৪০ শতাংশ, স্কলারির ৫০ শতাংশ জয়ের হারও ছাঁটাই হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি তাঁদের। শেষ ১০ ম্যাচে মাত্র ২০ শতাংশ জয়ের হার নিয়েও কন্তেকে ধরে রাখার পেছনে একটাই কারণ থাকতে পারে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সেলোনার সাথে চেলসির ম্যাচ। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য খুব সম্ভবত দুই লেগের ওই ম্যাচই শেষ সুযোগ কন্তের সামনে।

    তবে ‘ফাইনাল’ পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার আগে আরও কিছু ‘মিড টার্ম’ টেস্ট দিতে হবে কন্তেকে। সোমবার রাতে ওয়েস্টব্রমউইচ আলবিওনের সাথে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ, এরপর এফএ কাপের ফোর্থ রাউন্ডে হারাতে হবে হাল সিটিকে। তৃতীয় ম্যাচে ঘরের মাঠে বার্সেলোনার সাথে প্রথম লেগের পর প্রিমিয়ার লিগে পরের দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব। প্রথমটা ওল্ড ট্রাফোর্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাথে, পরেরটা স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে। ওই দুই ম্যাচের ফল অনেকটাই নির্ধারণ করে দিতে পারে লিগে চেলসির এবারের অবস্থান। চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রথম লেগে বার্সার সাথে ম্যাচ আর লিগের এ দুই ম্যাচের ফল বিপক্ষে গেলে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে কন্তের ভাগ্য। আর ন্যু ক্যাম্পের পর্যন্ত চেলসির ডাগআউটে টিকে গেলে হয়ত রেহাই পেয়ে যাবেন এ দফায়। এর সবটাই অবশ্য নির্ভর করছে আব্রামোভিচের সিদ্ধান্তের ওপর।