সিটির শিরোপা জয়ের সাক্ষী হতে হলো না ইউনাইটেডকে
ইতিহাদ স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধেই দেখা গেল নীল ধোঁয়া, ততোক্ষণে উৎসব মেতে গেছে ম্যানচেস্টারের নীল অংশ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ম্যাচটা জিতলেই তো শিরোপা! প্রথমার্ধেই দুই গোল দেওয়ার পর তো অনেকটা নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটির শিরোপা জয়। কিন্তু ইতিহাদ মানেই যেন নাট্যমঞ্চ! সেই মঞ্চে দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচ জিতে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের শিরোপা জয়ের সাক্ষী হতে হলো না ইউনাইটেডকে। হোসে মরিনহোর দলের কাছে ৩-২ গোলে হেরে প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা ঘরে তোলার অপেক্ষাটা বেড়ে গেল পেপ গার্দিওলার।
ম্যাচের আগে পল পগবাকে নিয়ে কথা বলেছিলেন গার্দিওলা। সিটি ম্যানেজার গত দলবদলের বাজারে সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁকে কেনার। দ্বিতীয়ার্ধে ২ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে সিটির উৎসবে জল ঢেলেছিলেন পগবাই। আর অ্যালেক্সিস সানচেজ ছিলেন ইউনাইটেডের ডার্বি জয়ের পর্দার পেছনের নায়ক। ইউনাইটেডের সবগুলো গোলেই অবদান আছে চিলিয়ান ফরোয়ার্ডের।
সিটিজেনদের প্রথমার্ধের উৎসবটা অবশ্য একেবারেই বেমানান ছিল না। বিরতির সময় বোধ হয় কেউ কেউ স্মৃতি রোমন্থনও করলেন। ২২ মিনিটে কর্নার থেকে ভিনসেন্ট কোম্পানির করা প্রথম গোলটা তো ২০১২ সালের সেই গোলের কার্বন কপি। এমন এক এপ্রিলের রাতেই কোম্পানির গোলে ডার্বি জিতে তালিকার শীর্ষে উঠেছিল সিটি। সেদিনও তার মার্কিংয়ে ছিলেন ক্রিস স্মলিং। আজও কর্নার থেকে লাফিয়ে উঠলেন, স্মলিংকে হারিয়ে হেডে বল জড়ালেন জালে। এরপর ম্যাচের পুরো কর্তৃত্ব সিটির কাছে। আধ ঘন্টা না পেরুতেই ইলকে গুন্ডোয়ানের গোলে দুই গোলে এগিয়ে গেল সিটি। ততোক্ষণে ম্যাচের ৫ মিনিটে করা পেনাল্টির আবেদনে রেফারির সাড়া না পাওয়ার দুঃখ ভুলে গেছেন সিটি খেলোয়াড়েরা।
কিন্তু ওই প্রথমার্ধটাই শেষ পর্যন্ত আফসোসে পোড়াবে গার্দিওলার দলকে। প্রথমার্ধে তো চাইলেই দুই গোলের লিডটা দ্বিগুণ করতে পারত তার দল। রাহিম স্টার্লিংই দুইবার সুযোগ পেয়েছিলেন, গোলরক্ষকের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ানে থেকেও দুইবারই মেরেছিলেন বারপোস্টের অনেক ওপর দিয়ে। আর প্রথমার্ধে পাস মাস্টার সিটির সাথে মাঝমাঠে পেরে না উঠে 'পাস্ট মাস্টার' ইউনাইটেড সমর্থকেরা ততোক্ষণে হারের ক্ষণ গুণছিলেন। প্রথম ৪৫ মিনিট শেষে ইউনাটেডের শট অন টার্গেট শূন্য, সিটির চেয়ে বল পজেশনে পিছিয়ে, আর পিছিয়ে দুই গোলে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কেমন বদলে গেল সবকিছু, বদলে গেল ইউনাইটেড, বদলে গেল সিটিও। বিরতির পর ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পগবা সময় নিলেন ৮ মিনিট। ডানদিক থেকে সানচেজের করা ক্রস ডিবক্সের ভেতর থেকে চেস্ট দিয়ে নামিয়ে দিয়েছিলেন অ্যান্ডার হেরেরা। উদ্দেশ্য ছিল পগবা, পেলেনও তিনি। এগিয়ে আসা এডারসন মোরায়েস যেদিকে ঝাপ দিয়েছিলেন, তার বিপরীত পাশ দিয়ে করলেন গোল। ইউনাইটেডের প্রথম, ইউনাইটেডে ফেরত আসার পর শীর্ষ ছয় দলের বিপক্ষেও পগবার প্রথম। দুই মিনিট পর এবার সেন্টার করলেন সানচেজ, সোজা পগবার কাছে। এবারও ভুল করলেন না, দারুণ এক গোল করে ইউনাইটেডের রোমাঞ্চকর জয়ের রাস্তা প্রস্তুত করে দিলেন পগবা। আর সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ভেতর পগবাকে মার্ক না করে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনলেন সিটি ডিফেন্ডাররা।
কেভিন ডি ব্রুইন, কাইল ওয়াকার, সার্জিও আগুয়েরোদের ছাড়াই দল নামিয়েছিলেন গার্দিওলা। তাদের অভাবটা প্রথমার্ধে টেরই পায়নি সিটি, ২-২ থাকা ম্যাচেও টের পেলেন না গার্দিওলা। বুঝলেন স্মলিংয়ের ম্যাচ জেতানো গোলের পর। সানচেজের ফ্রি কিক থেকে ভলিতে গোল করে ইউনাইটেড অধিনায়কই শেষ পর্যন্ত হেসেছেন জয়ের হাসি। পিছিয়ে যাওয়ার দুই মিনিট পরই ডি ব্রুইনকে নামিয়ে দেন গার্দিওলা, মিনিট চারেক পর নামেন আগুয়েরো। তিনিও আজ ফিরে যেতে পারতেন সিটির প্রথম শিরোপা জয়ের সেই দিনে। কিন্তু সিটি সমর্থকদের সেই স্মৃতি রোমন্থন করার সুযোগ দেননি ডেভিড ডি গিয়া। আক্রমণে দল কাজটা করে দিয়েছে, ইউনাইটেডের জয়ে বাকি কাজটা করলেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক। ৮৯ মিনিটে আগুয়েরোর হেড ঠেকিয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ডি গিয়াও কেড়ে নিয়েছেন শিরোনাম। এক মিনিট পর স্টার্লিংও সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন দলের হার এড়ানোর, সে দফায়ও অন টার্গেটে গেল না তার শট। লাগলো বারপোস্টে, ফিরতি বল ফেরালেন সেই ডি গিয়াই।
শুরুর নীল উৎসব তাই শেষ পর্যন্ত মিলিয়ে গেল লাল রঙে। ক্যারিয়ারের প্রথমবার দুই ম্যাচে ৬ গোল হজম করলেন গার্দিওলা, ৪৯০ দিন পর হারলেন ঘরের মাঠে। প্রিমিয়ার লিগের দ্রুততম শিরোপা জয়ের রেকর্ডটা থেকে গেল অধরা। নিজেদের রেকর্ডটা নিজেরাই সামলে রাখল ইউনাইটেড।