• " />

     

    শেখ কামাল স্টেডিয়াম ও একটি আক্ষেপের গল্প

    শেখ কামাল স্টেডিয়াম ও একটি আক্ষেপের গল্প    

     

    একপ্রান্তের পুরোটা জুড়ে ঝাউবন। ঝাউবনের ফাঁকে একটু উঁকি দিলেই সাগর, কান পাতলেই শোনা যায় সমুদ্রের গর্জন। চারপাশে শুধুই সবুজের ছড়াছড়ি। প্রেসবক্সে বসলে এক মুহূর্তের জন্য হলেও মনে খটকা লাগতে বাধ্য, আচ্ছা এটা নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো স্টেডিয়াম নয় তো! নাহ, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম এই বাংলাদেশের চিরচেনা কক্সবাজারেই। স্টেডিয়ামটি দেখে যতটুক মুগ্ধ হবে হৃদয়, ঠিক ততোটুক হতাশাও হয়ত ছুঁয়ে যাবে। কক্সবাজারের এই স্টেডিয়ামটি যে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের আক্ষেপের সবচেয়ে বড় জায়গাগুলোর একটি।


    কিন্তু গল্পটা তো হতাশার হওয়ার কথা ছিল না। কত স্বপ্ন, কত আশা। মেলবোর্নের মতো দেশে হবে ‘লাখ আসনের স্টেডিয়াম’! ৪ বছর আগে ৫১ একর জমিতে যখন উদ্বোধন হয়, স্টেডিয়ামকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ ছিল তুঙ্গে। এই স্টেডিয়ামেই কক্সবাজার পাবে পর্যটনের নতুন মাত্রা। কক্সবাজারের মাটিতে হবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ। দৃষ্টিনন্দন একাডেমিক ভবন, তারকা মানের হোটেল, জিমনেশিয়াম, সুইমিং জোন; শেখ কামাল স্টেডিয়ামকে ঘিরে কম স্বপ্ন দেখানো হয়নি।


    স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে গেছে। স্টেডিয়ামের প্রবেশ পথেই খাবেন প্রথম ধাক্কা। কোনো 'আন্তর্জাতিক' স্টেডিয়ামে ঢুকছেন না পরিত্যক্ত বাড়িতে, জঙ্গলের মতো গজিয়ে ওঠা ঘাসের সারি আপনাকে দ্বিধায় ফেলে দেবে। ঘাস এত বড় হয়ে ওঠার 'রহস্য' কী?  গেটের পাশে বসা দুই ব্যক্তির নির্লিপ্ত উত্তর, 'গরু-ছাগলের খাবার'। 

     


    আচ্ছা, স্টেডিয়ামের কল্যাণে যদি বেচারা গরুছাগল কিছু খাবার পায় তাতে কী আর ক্ষতি! প্রবেশদ্বার পেরিয়ে কিছুদূর হাঁটলেই দেখা মিলবে সেই স্টেডিয়ামের। মূল কমপ্লেক্সের সিঁড়ি, দেয়ালের কোনা, ছাদের সিলিং; ময়লা জমেছে সবখানেই। মরচেও ধরেছে দর্শকের বসার জায়গার বেশ কিছু স্থানেও। ভাগ্যিস ক্রিস গেইল এখানে খেলতে আসেননি। নাহলে কয়টা বল যে মাঠের পাশের ডোবাতে পড়ে হারিয়ে যেত কে জানে! স্টেডিয়াম জুড়েই এমন ডোবা আছে বেশ কয়েকটি। সেখানে হয়ত দিব্যি মাছের চাষও চলছে। স্টেডিয়ামের ঠিক পাশেই থাকা একাডেমি মাঠের হাল দেখে আর মায়া লাগতে বাধ্য। আহা, এটাই নাকি আমাদের মেলবোর্ন হবে! 


    মেলবোর্ন দূরে থাক, শেখ কামাল স্টেডিয়ামের সুযোগ সুবিধা মিরপুরের ধারেকাছেও নেই। টয়লেট থেকে শুরু করে প্রেসবক্স, অযত্ন আর অবহেলার ছাপ সবখানেই। বিদ্যুৎ বিভ্রাট যেন অতি 'সাধারণ' ঘটনা, বিকল্প ব্যবস্থা নিতেও উদ্যোগ নেই। প্রেসবক্সে ইন্টারনেটের গতি 'সহ্য' করে কাজ চালিয়ে  যেতে আপনাকে টেস্ট ম্যাচের মতো ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। 


    এই ধৈর্যটাই হয়ত সবার খানিকটা বেশি। চোখের সামনেই এত এত অনিয়ম। নাকি স্বপ্ন দেখতে দেখতে এখন সবাই ধরেই নিয়েছেন, এই স্বপ্ন আর পুরন হওয়ার নয়? 


    'স্বপ্নের স্টেডিয়ামে' চলছে ওয়ালটন মাস্টার্স ক্রিকেট। বাংলাদেশের সাবেক ক্রিকেটাররা তৃতীয়বারের মতো খেলতে এসেছেন এই টুর্নামেন্টে। রাজশাহী-সিলেট ম্যাচ দেখতে হাজির হলেন জন পঞ্চাশেক দর্শক। খালেদ মাসুদ পাইলটরা একটি করে চার মারছেন, ছোট্ট গ্যালারি তখন করতালিতে মুখর। সেই করতালিতেই কিনা এক তরুণের কণ্ঠে ঝরল আক্ষেপ, 'আহারে, এই তালিটা যদি জাতীয় দলের খেলার সময় সাকিব-তামিম ভাইদের জন্য দিতে পারতাম!'


    মাসুদ-হান্নান সরকারদের জায়গায় সাকিব-তামিম। রাজশাহী-সিলেটের জায়গায় বাংলাদেশ-ভারত কিংবা বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া। পঞ্চাশজনের জায়গায় হাজার পঞ্চাশেক দর্শক। ঝাউবনে ঘেরা কক্সবাজার স্টেডিয়াম অপেক্ষায় আছে। যে অপেক্ষার হয়ত কোনো শেষ নেই.........