• ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজ
  • " />

     

    'চে' আর 'মো'-এর প্রত্যাবর্তনের দিন

    'চে' আর 'মো'-এর প্রত্যাবর্তনের দিন    

    চতুর্থ টেস্ট, এজিয়েস বোল
    প্রথম দিনশেষে 
    ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৪৬ (কারান ৭৮, মইন ৪০, বুমরাহ ৩/৪৬, শর্মা ২/২৬) ও ২য় ইনিংস ৬/০*
    ভারত প্রথম ইনিংস ২৭৩ (পুজারা ১৩২*, কোহলি ৪৬, মইন ৫/৬৩, ব্রড ৩/৬৩)
    ইংল্যান্ড ২য় ইনিংসে ১০ উইকেটে ২১ রানে পিছিয়ে


    দৃশ্যপটে ছিলেন মইন আলি। এ টেস্ট দিয়েই ফিরেছেন ইংল্যান্ড দলে, ব্যাটিংয়ে শুরুটা ভাল করলেও শেষটা করতে পারেননি। সাউদাম্পটনের উইকেটে পেসারদের রেখে যাওয়া ‘ফুট-হোল’সহ তার লাইন-লেংথ এনে দিল সাফল্য, রীতিমতো একটা ধস নামলো ভারতীয় ইনিংসে। ১৪ রানে নেই ভারতের ৪ উইকেট, চারটিই নিলেন ‘মো’। গত ১২ মাসে যে কোনও ইংলিশ স্পিনারের যা সেরা সাফল্য। এরপর আরেকটি নিয়ে পূর্ণ করলেন পাঁচ। শুধু টলাতে পারলেন না এক চেতেশ্বর পুজারাকে। অন্য ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যখন দাঁড়াতে পারলেন না, এমনকি বিরাট কোহলিও না, তখন ত্রাতা হয়ে এলেন ‘চে’-ই, যিনি প্রথম টেস্টে ভারত দলেই ছিলেন না! তার ১৩২ রানের দারুণ এক ইনিংসে ম্যাচে টিকে রইল ভারত, দিনশেষে ইংল্যান্ড ১০ উইকেট নিয়ে পিছিয়ে ২১ রানে। 

    কোহলির সঙ্গে পুজারার তৃতীয় উইকেট জুটিতে এসেছিল ৯২ রান, সে সময় মনে হচ্ছিল, ভাল একটা লিডের দিকেই যাচ্ছে ভারত। ইংল্যান্ডে কোহলির অফস্টাম্পের বাইরের ভূত ফিরে এল স্যাম কারানের বলে, স্লিপে নিচু হয়ে ভাল ক্যাচ নিলেন অ্যালেস্টার কুক। ইংল্যান্ডের স্লিপ কর্ডনে যেন ফিরল স্বস্তি। আর ভারত এগিয়ে গেল ধসের দিকে!

    চোট থেকে পুরোপুরি সারেননি বেন স্টোকস, তার জায়গায় একসময় বোলিংয়ে এসেছিলেন কিটন জেনিংসও। সেই স্টোকসই থাকলেন দিনে সবচেয়ে ‘আলোচিত’ ঘটনার। রাহানেকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার, রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। স্টোকসের ফ্রন্টফুট আর পপিং ক্রিজ যেন পরীক্ষা নিতে বসল চোখের, লাউডস্পিকারে থার্ড আম্পায়ার জোয়েল উইলসন যখন বলে উঠলেন ‘ফেয়ার ডেলিভারি’, গোটা এজিয়েস বোল যেন মাতল উল্লাসে। 

     

     

    পুজারা এরপর থেকেই খুঁজে ফিরেছেন সঙ্গী। ২৯ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারলেন না রিশাভ পান্ট, চা-বিরতির ঠিক আগে হলেন এলবিডব্লিউ। এরপর পরপর দুই বলে ফিরলেন রবি আশ্বিন ও মোহাম্মদ শামি। রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন আশ্বিন, বোল্ড হয়েছেন শামি। এর আগে মইনের ফ্লাইটে ফ্লিক করতে গিয়ে রুটের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন পান্ডিয়া।হ্যাটট্রিক বলটা ঠেকিয়ে দিলেন ইশান্ত শর্মা, পুজারার সঙ্গে গড়লেন এরপর ৩২ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। এলেন বুমরাহ, শেষ উইকেটে এলো ৪৬ রান। মোটামুটি লিড নেওয়ার অবস্থা থেকে উলটো ২৭ রানে পিছিয়ে গেল ইংল্যান্ড! 

    এর মূল কারণ অবশ্যই পুজারা। এশিয়ার বাইরে যার বাজে ফর্ম নিয়ে হয়েছে বিস্তর আলোচনা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ভুগেছেন, ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেটেও ইয়র্কশায়ারের হয়ে হাসেনি তার ব্যাট। আজ জ্বলে উঠলেন, ড্রেসিংরুমের বারান্দায় থেকে কোহলির হাসিটাই বলে দিচ্ছিল- একজন সতীর্থর এমন পারফরম্যান্সের আশাতেই ছিলেন সিরিজজুড়ে! 

    যে স্পিনে ইংল্যান্ড পেল দিনের সবচেয়ে বেশি সাফল্য, সেই স্পিনের বিপক্ষে পুজারা আলগা শট খেলেছেন মাত্র ৩ শতাংশ আজ। পেসারদের চেয়ে তাদেরকেই করেছেন বেশি আক্রমণ। সব মিলিয়ে পুজারা খেলেছেন মাত্র ১০ শতাংশ আলগা শট, এ সিরিজে গড় আলগা শটের পরিমাণ যেখানে ছিল তার ১৬ শতাংশ। 

    পুজারাকে মুখোমুখি হতে হয়েছে টেইল-এন্ডারদের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের সেই চিরায়ত সমস্যাটাও- স্ট্রাইক অদল-বদলের জটিল সমীকরণ। সেঞ্চুরি করেছেন মইনকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে লফটেড শট খেলে। সব মিলিয়ে পুজারার এটি ১৫তম সেঞ্চুরি, এশিয়ার বাইরে মাত্র দ্বিতীয়। 

    শেষ পর্যন্ত পুজারার প্রতিরোধ থেমেছে ব্রডের বলে কুকের হাতে বুমরাহ ক্যাচ দেওয়ার। এর আগে ইংল্যান্ডকে দিনে প্রথম সাফল্য এনে দিয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রডই। লোকেশ রাহুলকে ফেলেছেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে, তার ফুললেংথে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়েছেন শিখর ধাওয়ান। আর দিনের শেষটা বিপদ ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছেন ধাওয়ান-রাহুলের বিপরীত জুটি- কুক- জেনিংস। 

    তবে এসবের মাঝের রোমাঞ্চটাই আজ দিনের সব আলো কেড়ে নিয়েছে। যে রোমাঞ্চে আছে দুই প্রত্যাবর্তনের গল্প। একদিকে চে, আরেকদিকে মো!