স্টুয়ার্ট ব্রড থেকে আলাউদ্দিন বাবু: যেমন ছিল ক্রিকেটের খরুচে ওভারগুলো
এজবাস্টন টেস্টের দ্বিতীয়দিন। ৩৭৭/৯; ভারতের স্কোরবোর্ড। ভারতকে গুটিয়ে দিতে ৮৪তম ওভারে বেন স্টোকস বল তুলে দিলেন ৫৫০তম উইকেট পাওয়া স্টুয়ার্ট ব্রডের হাতে। সেই ওভারটাই ইতিহাসের অংশ হয়ে নতুন রেকর্ডের জন্ম দিল জাসপ্রিত বুমরাহর পাগলাটে ব্যাটিংয়ে। ব্রডের মতো ডাকাবুকো বোলারের ওভারে এলো ৩৫ রান! টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে ওভার।
ইতিহাসের সবচেয়ে খরুচে এই ওভারে ৩৫ রানের ২৯-ই এসেছে বুমরাহর ব্যাট থেকে, বাকি ৬ ব্রড দিয়েছেন অতিরিক্ত। ব্রডের করা সেই ওভারের প্রথম বলটা ছিল শর্ট লেংথে, বুমরাহর হুকে টপ এজ হয়ে ফাইন লেগ দিয়ে চার হয়। জ্যাক ক্রলি অল্পের জন্য হাতে জমাতে পারেননি ক্যাচটা। পরের ডেলিভারিও বাউন্সার করেন ব্রড, মাত্রাতিরিক্ত বাউন্সে ওয়াইডসহ ৫ রান যোগ হয় ভারতের স্কোরকার্ডে। পরের বলে আরও অতিরিক্ত রান; নো বল। বুমরাহ সেই বলে টপ এজে ব্রডকে আছড়ে ফেলেছেন ফাইন লেগের ওপারে। এরপরের তিন বলে টানা তিন চার, শেষ বলে সিংগেল। সব মিলিয়ে ব্রড গুনলেন ৩৫।
না চাইতেও ব্রড হয়ে গেলেন টেস্ট ক্রিকেটে এক ওভারে সর্বোচ্চ রান দেয়া বোলার। বিপরীতে বুমরাহ ছাপিয়ে গেলেন ব্রায়ান লারাকেও। এর আগে এক ওভারে সর্বোচ্চ ২৮ রান নেয়ার নজির ছিল ব্রায়ান লারা, জর্জ বেইলি ও কেশভ মহারাজের। ২০০৩ সালে জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার রবিন পিটারসনের ওভারে ২৮ রান তুলেছিলেন কিংবদন্তি লারা। এরপর ২০১৩ সালে পার্থ টেস্টে ব্রডেরই কাছের বন্ধু জেমস অ্যান্ডারসনকে তুলোধুনা করেছিলেন বেইলি। ২০২০ সালে আরেক ইংলিশ ক্রিকেটার জো রুট ২৮ রান গুনেছিলেন কেশভ মহারাজের কাছে।
টি-টোয়েন্টিরও সবচেয়ে খরুচে ওভার করা বোলার ব্রড। সেই রেকর্ডটাও ভারতের বিপক্ষেই। ২০০৭ সালে ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্র সংস্করণের প্রথম বিশ্বকাপে ব্রডকে ছয় বলে ছয় ছক্কা মেরে ৩৬ রান তুলেছিলেন যুবরাজ সিং; যা এক ওভারে সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেই রেকর্ড টিকে ছিল দীর্ঘদিন। অবশ্য ২০২১ সালে ব্রডের দলে নাম লিখিয়েছেন শ্রীলঙ্কার আকিলা দনঞ্জয়া। কাইরন পোলার্ডের কাছে ছয় বলে ছয় ছক্কা হজম করে এই স্পিনারও দিয়েছিলেন ৩৬ রান।
টি-টোয়েন্টিতে ৩৪ রানের ওভার দেখা গেছে একবার। ২০২০ সালে নিউজিল্যান্ডের টম সাইফার্ট আর রস টেলর মিলে শিভম দুবের ওপর ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন মাউন্ট মঙ্গানুইতে। ৩৪ রানের ওভার একটি থাকলেও ৩২ রান খরচ করা ওভার আছে মোট পাঁচটি।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৩৬ রানের ওভার দেখা গেছে দুইবার। মারকুটে ব্যাটিংয়ে সর্বপ্রথম এই রেকর্ড গড়েছিলেন হার্শেল গিবস। ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের ড্যান ভন বাঙ্গি ওভারের ছয় বলের প্রতিটিতেই গিবসের কাছে ছক্কা হজম করেছিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ছয় বলে ছয় ছক্কার নজির সেটিই প্রথম, একইসাথে সবচেয়ে খরুচে ওভারেরও। গিবসের সেই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন যুক্তরাষ্টের অধিনায়ক জাসকারান মালহোত্রা। ২০২১ সালে পাপুয়া নিউগিনির গৌদি তোকার এক ওভারে ছয়টি ছক্কা মেরে ৩৬ রান তুলেছিলেন জাসকারান।
৩৬ রানের ওভার দুটি থাকলেও, ৩৫ রানের ওভার আছে একটি। সেই ওভারটি করেছিলেন রবিন পিটারসন, ব্যাটসম্যান ছিলেন থিসারা পেরেরা। মজার ব্যাপার হচ্ছে বোলার হিসেবেও এই অভিজ্ঞতা আছে পেরেরার। ২০১৯ সালে জিমি নিশামের ব্যাটিংয়ে ৩৪ রান গুনেছিলেন ডানহাতি এই পেসার। ৩৪ রানের আরেক যে ওভারটি আছে, সেটি ক্রিকেটবিশ্ব দেখেছিল এবি ডি ভিলিয়ার্স-জেসন হোল্ডারের বদৌলতে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ডি ভিলিয়ার্সের সামনে অসহায় হোল্ডার দিয়েছিলেন ৩৪ রান।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের বিশাল ইতিহাসে ৩৬ রান দিয়ে সবচেয়ে খরুচে দুটি ওভারের মালিক দুজন, ম্যালকম ন্যাশ ও তিলক রাজ। ১৯৬৮ সালে কাউন্টি ম্যাচে গ্ল্যামরগানের ন্যাশ ছয় বলে ছয় ছক্কায় ৩৬ রান দিয়েছিলেন স্যার গ্যারফিল্ড সোবার্সের বিপরীতে বল করে। এর ১৭ বছর পর একই কান্ড করেছিলেন বারোদার তিলক রাজ। রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে রবি শাস্ত্রীকে বল করে ওভারে ছয়টি ছক্কা খেয়েছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। এর আগে ও পরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৪ ও ৩২ রানের ওভার দেখা গেছে পাঁচবার করে।
তবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের সবচেয়ে খরুচে ওভারটি ছাপিয়ে গেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব রেকর্ডকেই। নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্টের উইলেম লুডিক এক ওভারে দিয়েছিলেন ৪৩ রান! নর্দান ডিস্ট্রিক্টের দুই ব্যাটার জো কার্টার-ব্রেট হ্যাম্পটন মিলে ঝড় বইয়ে দিয়েছিলেন লুডিকের ওপর। সেই ওভারে টানা দুই নো বল করে দুই ছক্কা খাওয়ায়, লুডিকের দেয়া রান ছাড়িয়ে যায় চল্লিশ রানের কোটা।
দুর্ভাগা বোলারদের তালিকায় আছে এক বাংলাদেশির নামও; আলাউদ্দিন বাবু। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ২০১৩-১৪ মৌসুমে এলটন চিগম্বুরা তার ওভারে তুলেছিলেন ৩৯ রান। লুডিকের আগে আলাউদ্দিনের করা ওভারটিই ছিল লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের সবচেয়ে খরুচে। এছাড়া ৩৭, ৩৬ ও ৩৫ রানের ওভারের রেকর্ডও আছে লিস্ট ‘এ’ স্বীকৃত ক্রিকেটে।