বাটলার-কারান-স্টোকসের লড়াইয়ে এগিয়ে ইংল্যান্ডই
চতুর্থ টেস্ট, এজিয়েস বোল
তৃতীয় দিনশেষে
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৪৬ (কারান ৭৮, মইন ৪০, বুমরাহ ৩/৪৬, শর্মা ২/২৬) ও ২য় ইনিংস ২৬০/৮* (বাটলার ৬৯, রুট ৪৮, কারান ৩৭*, শামি ৩/৫৩, শর্মা ২/৩৬)
ভারত প্রথম ইনিংস ২৭৩ (পুজারা ১৩২*, কোহলি ৪৬, মইন ৫/৬৩, ব্রড ৩/৬৩)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংসে ২ উইকেট নিয়ে ২৩৩ রানে এগিয়ে
স্যাম কারানের টেস্ট গড় এখন জো রুটের চেয়ে বেশি। আচ্ছা, টেস্ট ম্যাচ সংখ্যায় তুলনাটা একটু কেমন যেন মনে হতে পারে। এ সিরিজে ইংল্যান্ডের শেষ চার ব্যাটসম্যানের গড় শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি। এ পরিসংখ্যানটা গুরুত্বপূর্ণ। সাউদাম্পটনে সাতে নামা জস বাটলারের ৬৯ রানের পর স্যাম কারানের অপরাজিত ৩৭ রানের সঙ্গে মাঝে স্টোকসের কষ্টার্জিত ইনিংসে ২৩৩ রানের লিডের ট্যালির সঙ্গে আরও কিছু যোগ করার আশা তাই দেখতে পারছে ইংল্যান্ড। আর ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের পেখম মেলতে না দিয়ে ভারতীয় বোলারদের কাজটা তারা প্রায় শেষ করে এনেছেন। চতুর্থ ইনিংসে এজিয়েস বোলের ধূলিময় উইকেটে চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে ব্যাটসম্যানদেরই। হয়তো রবি আশ্বিনের দিনে একমাত্র এক উইকেট পাওয়াটাই আশা জোগাচ্ছে তাদের! অথবা মইন আলি বা আদিল রশিদ ভাবছেন অন্য কিছু।
দিনের শুরুতে অন্য কিছু অবশ্য করতে পারেননি অ্যালেস্টার কুক। আরেকটি হতাশার দিন তার, জাসপ্রিত বুমরাহর অফস্টাম্পের বাইরে ফুললেংথের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে তৃতীয় স্লিপের বারকয়ের চেষ্টায় শেষ হয়েছে তার ইনিংস। এ ম্যাচ শেষে গড়টা কুকের নেমে আসবে ৪৫-এর নিচে, ওপেনিংয়ে সঙ্গী খুঁজতে খুঁজতে কি নিজেকেই হারিয়ে ফেলছেন কুক?
মোহাম্মদ শামির বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে কিটন জেনিংসের ৩৬ রানও খুব ভিন্ন গল্প বলেনি, যা একটু ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন শুধু। তিন নম্বরে আবারও আসেননি জো রুট, ওপরে ঠেলে পাঠানো মইন আলি মানিয়ে নিতে পারেননি, শর্মার বলে রাহুলকে দিয়েছেন ক্যাচ। জেনিংস আউট হয়েছিলেন লাঞ্চের ঠিক আগের বলে। লাঞ্চের ঠিক পরের বলে বোল্ড জনি বেইরস্টো, এই টেস্টেই সাবেক হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডের উইকেটকিপার। প্রথম বলেই যে শটটা খেলতে চাইলেন, এক কথায় সেটাকে কেউ যদি কুৎসিত বলেন, তাকে মোটেও দোষ দেওয়া যায় না! শামি জায়গামতো ফেলেছিলেন বলটা, তবে সেটা না দেখেই যেন ব্যাটটা চালিয়ে দিলেন বেইরস্টো!
ভারতের উল্লাস ম্লান না হলেও রঙ হারিয়েছে একটু
জো রুটের সঙ্গে বেন স্টোকস এরপর রানের জন্য সংগ্রাম করলেন। আর ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রুপান্তর করতে না পারার ট্যাগ গায়ে নিয়ে রুট রান-আউট হলেন এবার ৪৮ রানেই। মিড-অফ থেকে শামি সরাসরি থ্রোতে যে উইকেট ভাঙতে পারেন স্ট্রাইক-প্রান্তে, সেটা যেন রুট বিশ্বাসই করতে পারেননি! ওদিকে স্টোকস ডাইভ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতই ছিলেন, অথচ ডাইভটা দিলেন না শুধু রুটই!
ইংল্যান্ডও আরেকবার পিচ্ছিল পথে হাঁটা শুরু করলো। এবার অবশ্য স্টোকসের সংগ্রাম একটু কাজে দিল। শক্তিটা জোগালেন মূলত বাটলার। দুজনের জুটিতে এলো ৫৬ রান, ইংল্যান্ডের লিড পেরিয়ে গেল ১৫০। দিনে আশ্বিনের একমাত্র শিকার হওয়ার আগেই এ বছর সবচেয়ে ধীরগতির ব্যাটসম্যান হয়ে গেছেন ইংল্যান্ডের ‘একসময়ের বিস্ফোরক’ অলরাউন্ডার স্টোকস।
অবশ্য স্যাম কারান যেন দায়িত্ব নিয়েছেন ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের। বাটলারের সঙ্গে তার জুটি ৫৫ রানের, ৬৯ রানে সঙ্গী ফিরলেও কারান আদিল রশিদকে সঙ্গে নিয়ে এরপর যোগ করেছেন ২৭ রান। দিনের শেষ বলে তাকে ফিরিয়ে ভারতকে আরেকটু স্বস্তি এনে দিয়েছেন শামি।
তবে তাদের অস্বস্তি হয়ে আছেন কারান। তাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য অবশ্য আছেন শুধু ইংল্যান্ড ব্যাটিংয়ের টেন ও জ্যাক। টপ-অর্ডারের দুর্দশা, অধিনায়কের বুক চিতিয়ে না দাঁড়ানো, বেইরস্টোর কুৎসিত শটের পরও দিনশেষে এগিয়ে ইংল্যান্ড- এ চিত্রটাই যেন বুঝিয়ে দিচ্ছে, বড্ড অননুমেয় এক সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ড-ভারত। যে সিরিজে আর যাই হোক, অন্তত রোমাঞ্চের কমতি নেই।
আরেক রোমাঞ্চের জন্য প্রস্তুত তো আপনি? তাই থাকুন বরং। প্রস্তুতির মার নেই।