মইনের সাউদাম্পটন প্রেমে ডুবল ভারত
চতুর্থ টেস্ট, এজিয়েস বোল
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ২৪৬ (কারান ৭৮, মইন ৪০, বুমরাহ ৩/৪৬, শর্মা ২/২৬) ও ২য় ইনিংস ২৭১ (বাটলার ৬৯, রুট ৪৮, কারান ৪৬, শামি ৪/৫৭, শর্মা ২/৩৬)
ভারত প্রথম ইনিংস ২৭৩ (পুজারা ১৩২*, কোহলি ৪৬, মইন ৫/৬৩, ব্রড ৩/৬৩) ও ভারত দ্বিতীয় ইনিংস ১৮৪ ( কোহলি ৫৮, রাহানে ৫১, মইন ৪/৭১, স্টোকস ২/৩৪)
ইংল্যান্ড ৬০ রানে জয়ী ও সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে
বেন স্টোকসকে জায়গা করে দিতে সরে যেতে হয়েছিল স্যাম কারানকে। এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের হঠাৎ নায়ক বাইরেই বসে থাকলেন ট্রেন্টব্রিজে। ইংল্যান্ড হারল, ভারত ফিরল সিরিজে। সাউদাম্পটনে প্রথম ইনিংসে আটে নেমে কারান আবার ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দিলেন ৭৮ রানের ইনিংসে। দ্বিতীয় ইনিংসেও শেষ দিকে ৪৬ রান করে রাখলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। সেই কারানেই শেষ হলো সাউদাম্পটন টেস্ট। তার নীচু হওয়া বলে এলবিডব্লিউ রবি আশ্বিন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পরও হারল ভারত, আর এক টেস্ট বাকি রেখেই পাঁচ ম্যাচের সিরিজ জিতে গেল ইংল্যান্ড।
তবে প্রথম অনুচ্ছেদ আদতে ইংল্যান্ডের আরেক নায়কের গল্পের কিছুই বলেনি। তিনি মইন আলি। সাউদাম্পটনের সঙ্গে মইনের প্রেমটা পুরোনো, সেই তীব্র প্রেমেই ভেসে গেল ভারত! ২০১৪ সালে এখানে মইন নিয়েছিলেন ৮ উইকেট, ভারতের বিপক্ষেই। এবার নিলেন ৯ টি। এর মাঝে দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরিয়েছেন বিরাট কোহলি ও আজিঙ্কা রাহানেকে। যে দুজনই ব্যবধান হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইংল্যান্ড ও জয়ের মাঝে, যে দুজন ২২ রানে ৩ উইকেট যাওয়ার পর গড়েছিলেন ১০১ রানের জুটি। মইনের দুই বলে যেন অর্ধেক অর্ধেক করে ম্যাচ জিতে গেল ইংল্যান্ড! কারানের গল্পটা যদি এক টেস্ট পর প্রত্যাবর্তনের দারুণ গল্প হয়, তাহলে এ গ্রীষ্মে প্রথম টেস্ট খেলতে নামা মইনের গল্পটা অতুলনীয়! খেলতে নেমেই ম্যাচসেরা!
ভারতের এ টেস্টের লড়াইটাও দারুণ। ২৪৫ রানের লক্ষ্য, টপ অর্ডার ধসে গেল শীঘ্রই। ব্রডের নিচু হওয়া বলে নাগাল পেলেন না লোকেশ রাহুল, অ্যান্ডারসনের বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ প্রথম ইনিংসে ভারতের নায়ক পুজারা। ধাওয়ান স্লিপে স্টোকসের ভাল ক্যাচের শিকার, অ্যান্ডারসনের বলে। এজিয়েস বোলের এ উইকেটে স্পিন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, অথচ তখনও দৃশ্যপটে শুধুই পেস, শুধুই ব্রড-অ্যান্ডারসন, ভারতের পুরোনো শত্রু!
ইংল্যান্ডের সঙ্গেও গল্পটা নতুন নয় কোহলির। এ সিরিজ দিয়ে নতুন করে চিনিয়েছেন নিজেকে, ইংলিশ কন্ডিশনে। আরেকবার নামলেন মিশনে, এবার তার সঙ্গী রাহানে। বেশ কিছু সূক্ষ্ণ এলবিডব্লিউর কল থেকে বাঁচলেন, তবে ফিফটিটা করলেন ঠিকই। এ সিরিজে অন্য ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে দূরত্বটাও বাড়ালেন আরেকবার।
মইনকে খেলছিলেন পা অনেকখানি বাড়িয়ে, রাহানেও খেলছিলেন সেটাই। প্যাড-আপ করতে গিয়েই নিজের বিপদটা ডেকে আনলেন কোহলি। শর্ট লেগে উঠলো ক্যাচ, ক্যাচ পূর্ণ হওয়ার আগেই উল্লাসে মেতেছেন মইন, তিনি যে পেয়েছেন তার অমূল্য উইকেটটা! কোহলির মতো করে আর কেউ সঙ্গ দিতে পারলেন না রাহানেকে এরপর।
হারদিক পান্ডিয়া স্লিপে রুটকে ক্যাচ দিলেন স্টোকসের বলে, নিচু হয়ে ভাল ক্যাচ নিলেন ইংলিশ অধিনায়ক। এ সিরিজে ইংল্যান্ডের স্লিপ ক্যাচিংয়ের যেন নতুন কিছুর আভাস দিলেন তিনি। টিকে থাকার পুরোনো উপায় বাছলেন ঋশাভ পান্ট- আক্রমণ। তবে ঝুঁকিটা তো ছিলই সবসময়ই- আউট হওয়ার। আলিকে ইনসাইড-আউটে খেলতে গিয়ে হলো সেটাই, ১২ বলের ১৮ রানের ক্যামিওটাও শেষ ওখানেই।
এরপর আরেকবার আলি, এবার রাফে পড়ে টার্ন করা বলে এলবিডব্লিউ রাহানে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারলেন না। এরপর ইংল্যান্ডের শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইশান্তকে ফাঁদে ফেললেন স্টোকস, তুলে মারতে গিয়ে ধরা খেলেন শামি।
ম্যাচে দশ উইকেটে হাতছানি তখন ডাকছে আলিকে। উলটো বোলিংয়ে এসে আশ্বিনের ব্যাটে হজম করলেন ছয়! শেষ দৃশ্যে যে ইংল্যান্ডের নায়ক হবেন কারান। তা হন না কেন, আড়ালে থাকলেও ঠিকই জ্বলছিলেন আলি! সেই সাউদাম্পটনে। তার পুরোনো প্রেম যেখানে!