আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলছেন কুক
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অ্যালেস্টার কুক। ভারতের বিপক্ষে চলতি সিরিজের ওভাল টেস্টই হবে ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে তার শেষ ম্যাচ। ১৬০ ম্যাচে ১২২৫৪ রান করা কুকের বয়স ৩৪ পূর্ণ হয়নি এখনও, তবে বিদায় বলার জন্য এটাকেই সঠিক সময় মনে করছেন তিনি। চলতি বছরে ব্যাটে রান নেই তার সেভাবে, ৯ টেস্টে গড় ১৮.৬২। তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ করে দিতে এ সময়টাকেই উপযুক্ত মনে করছেন ইংল্যান্ডকে ৫৯ টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া এই বাঁহাতি ওপেনার।
“গত কয়েক মাস ধরে অনেক চিন্তা ও আলোচনার পর আমি ভারতের সঙ্গে টেস্ট সিরিজের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছি”, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জেতার একদিন পর বলেছেন কুক।
ইংল্যান্ড ক্রিকেটকে আর কিছু দেওয়ার বাকি নেই বলেও জানিয়েছেন তিনি, “যদিও এটা দুঃখের দিন, তবুও আমি মুখে হাসি রাখতে পারছি, কারণ আমি জানি, আমি সব দিয়ে দিয়েছি। আর দেওয়ার কিছু নেই। আমি কল্পনার চেয়ে অনেক বেশি অর্জন করেছি। ইংলিশ ক্রিকেটের বেশ কিছু কিংবদন্তির পাশে খেলেছি লম্বা সময় ধরে। সতীর্থদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করার ব্যাপারটা আমার সিদ্ধান্তের সবচেয়ে কঠিন অংশ ছিল। তবে আমি জানি, এটাই ঠিক সময়।
আরও পড়ুন- দ্য রিয়াল শেফ
“ছোটবেলায় বাগানের ক্রিকেট থেকে শুরু করে সারাজীবন ধরেই আমি ক্রিকেট ভালবেসে এসেছি। ইংল্যান্ড শার্ট গায়ে দেওয়ার ব্যাপারটা আমি কখোনই খাটো করে দেখতে পারব না। আমি জানি, পরবর্তী প্রজন্মের তরুণ ক্রিকেটারদের পালা এবার আমাদের বিনোদিত করার জন্য। নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার এই অসম গর্বটা অনুভব করবে তারা।
আলাদা করে কুক বলেছেন বার্মি-আর্মি ও তার দীর্ঘদিনের মেন্টর গ্রাহাম গুচের কথা, “ব্যক্তিগতভাবে অনেক মানুষকে আমার ধন্যবাদ দেওয়ার আছে। তবে বিশেষ করে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে বার্মি আর্মির কথা। এই দলের প্রতি তাদের ধারাবাহিক উৎসাহের কথা। গ্রাহাম গুচের কথাও আলাদা করে বলতে হবে। সাত বছর বয়সে এসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের সামনে তার অটোগ্রাফের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। আর পরে আমার ভাগ্য এতোটাই ভাল, আমি তাকে মেন্টর হিসেবে পেয়েছি। গ্রাহাম ছিল আমার জন্য “অনুনাদক”, বিশেষ করে আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিনগুলিতে। ঘন্টার পর ঘন্টা সে আমার দিকে বল ছুড়েছে। তার কাছ থেকেই আমি শিখেছি, আপনি যা অর্জন করতে চান, এজন্য সবসময় আপনাকে উন্নতি করে যেতে হবে।
আরও পড়ুন- বার্মি আর্মির আলি কুক
“আমি ও আমার পরিবার ১২টি অসাধারণ বছর কাটিয়েছি, আমার স্বপ্নের পেছনে তাড়া করতে। তাদেরকে ছাড়া এটা সম্ভব হতো না। আমি আমার বাবা-মা, ভাই, স্ত্রী ও তার পরিবারকে এই নিঃস্বার্থ সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। ক্রিকেটার হিসেবে আমাদের অনেক ভ্রমণ করতে হয়, আমরা বেশিরভাগ সময়ই আমরা বুঝতে পারি না, আমাদের সাফল্যের তুলনায় তারা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
ইংল্যান্ডকে বিদায় বললেও ক্রিকেটটা পুরোপুরি ছাড়ার ইচ্ছা নেই তার। খেলবেন তার কাউন্টি এসেক্সের হয়ে, “এসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবকে আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। ১২ বছর বয়স থেকেই তারা আমাকে সমর্থন দিচ্ছে, সাহায্য করছে। ২০১৯ মৌসুমে তাদের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত হওয়ার জন্য আমার তর সইছে না।
“ইংল্যান্ড দলকে আমার ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভ কামনা। অনেক রোমাঞ্চ নিয়ে আমি তাদের খেলা দেখব।”
হ্যাঁ, অ্যালেস্টার কুক ওভাল টেস্টের পর বাইরে থেকেই দেখবেন ইংল্যান্ডের খেলা। নাগপুরে ২০০৬ সালে যে যাত্রাটা শুরু হয়েছিল, যে যাত্রাপথে টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ওপেনার হয়েছেন কুক, যে যাত্রাপথে পরেছেন ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রান-সংগ্রাহকের মুকুট, সেই যাত্রাটা শেষ হয়ে যাচ্ছে তার। বাকি আর মাত্র একটি টেস্ট!