• ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজ
  • " />

     

    কুকের শেষের শুরুতে উজ্জ্বল ইশান্তরা

    কুকের শেষের শুরুতে উজ্জ্বল ইশান্তরা    

    পঞ্চম টেস্ট, দ্য ওভাল
    প্রথম দিনশেষে 
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ১৯৮/৭* (কুক ৭১, মইন ৫০, ইশান্ত ৩/২৮, বুমরাহ ২/৪১)


    চা-বিরতি পর্যন্ত দিনটা ছিল অ্যালেস্টার কুকের। ওভালে ক্যারিয়ারের ১৬১তম টেস্ট- যা কিনা তার শেষ- খেলতে নামা বাঁহাতি ওপেনার ৬৬ রানে অপরাজিত তখন, সঙ্গী মইন আলির অনেক কষ্টে পাওয়া রানসংখ্যা ২৩। ব্যাটিংয়ে নামার সময় ভারতীয় দল ও আম্পায়ারদের কাছ থেকে কুকের পাওয়া গার্ড অব অনার তখন স্মৃতি, কুক শেষের শুরুর ইনিংসে আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন তার সব পুরোনো ইনিংস। ভারতীয় পেসাররা তখনও ধরে রেখেছেন ধৈর্য্য, ইশান্ত শর্মা, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামিদের লাইন-লেংথ ছিল অসাধারণ। শুধু সাফল্যই পাচ্ছিলেন না তারা, স্লিপে দুই ব্যাটসম্যানের ক্যাচও পড়লো দুইবার। আর মইনের ব্যাটের এজ বল ফাঁকি দিল আরও অনেকবার। 

    চা-বিরতির পর চিত্রটা বদলালো। এই এক সেশনেই ভারত নিল ৬ উইকেট, বিনিময়ে দিল ৬৫ রান। দিনশেষে আদিল রশিদকে সঙ্গে নিয়ে অপরাজিত জস বাটলার, ৭ উইকেটে ইংল্যান্ড তুলতে পেরেছে ১৯৮ রান। এমন চিত্র এ সিরিজে প্রথম নয়, ইংলিশ টেইল-এন্ডারদের চাপে এর আগেও পিষ্ট হয়েছে ভারত। ওভালে সেটি হবে কিনা, তা বলবে দ্বিতীয় দিন সকাল, তবে এখান থেকে যেন প্রতিটি রানই গুরুত্বপূর্ণ। দিনের শেষ বলে রশিদকে করা বুমরাহর ইয়র্কারটাও ইঙ্গিত দিচ্ছে, প্রথম দিনের দারুণ পরিশ্রমটা খুব সহজে বিলিয়ে দেবে না ভারত! 

    ওভালের উইকেটে পেসাররা পেয়েছেন কার্যকরী মুভমেন্ট, সুযোগ মিস না করলে ভারত ইংল্যান্ডকে ধরাশায়ী করতে পারতো আরও আগেই। কুকের সঙ্গে ২১তম ইনিংসে এসে পঞ্চমবার ফিফটি পেরুলো কিটন জেনিংসের ইনিংস, রবীন্দ্র জাদেজার সোজা বলে নাজ করতে গিয়ে লেগস্লিপে তার ক্যাচে শেষ হয়েছে যেটা। এরপর কুক আর মইনের জুটি। 

    ওভাল অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন কুক/ক্রিকইনফো

    দিনশেষে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট কুকেরই। কুক আবার তার ইনিংসে খেলেছেন ১৮ শতাংশ আলগা শট, ফিফটি পেরুনো ইনিংসে যা তার সর্বোচ্চ। এসবই বলে দেয়, ব্যাটিংটা সহজ ছিল না এ উইকেটে। সেটা কঠিন বানানোর মূল কৃতিত্ব অবশ্যই ভারতীয় পেসারদের। দিনশেষে ইশান্তের ফিগারটাও চমৎকার, ২২-১০-২৮-৩। 

    তার আগে সাফল্য এনেছেন বুমরাহ। হঠাৎ ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ডিফেন্ড করতে গিয়ে স্টাম্পে বল ডেকে এনেছেন কুক, গোটা ওভালে এরপর শোনা গেছে এক দীর্ঘশ্বাস। সেঞ্চুরি থেকে ২৯ রান দূরে থাকতে থামতে হয়েছে তাকে, দাঁড়ানো সম্ভাষণ অবশ্য পেয়েছেন ঠিকই। 

    জো রুট ও জনি বেইরস্টো এরপর ফিরেছেন দ্রুত- দুজনই শূন্য রানে। বুমরাহকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ রুট, আম্পায়ার জো উইলসন এ সিদ্ধান্ত নিতে যেন নিয়েছেন জন্ম-জন্মান্তরের সময়! সেটা দেখেই কিনা রিভিউয়ে উৎসাহিত হলেন রুট, তবে সেটা গেল বিফলেই। অফস্টাম্পের বাইরে লাইন ধরে এগুনো বলে এজড বেইরস্টো, ইশান্ত পেতে শুরু করেছেন সাফল্য তখন! 

    অসাধারণ ছিলেন ইশান্ত/ক্রিকইনফো

    জাদেজার স্কিড করা বলে এলবিডব্লিউ স্টোকস, করেছেন ১১ রান। পেসাররা সব আলো কেড়েছেন, তবে জাদেজা ঠিকই নিয়েছেন দুই উইকেট। ঠিকঠিক ফিফটি করে থেমেছেন মইন, যেসব বলে এর আগে বেশ কয়েকবার বেঁচেছেন, তেমনই হালকা মুভমেন্টের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন ইশান্তের দ্বিতীয় শিকার বনে যাওয়ার পর। এদিনও তিনেই নেমেছিলেন, তার ৫০ রানের ইনিংস যেন এমন পজিশনে তার সংগ্রামের চিত্রটাই ফুটে তুলছে আরেকবার। 

    ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বিস্ময় স্যাম কারান এবার নিজেই চমকে গেছেন, ইশান্তের বল ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও তার নাছোড়বান্দা ব্যাট ঠিকই ঠিক সময়ে বলে খেয়েছে চুমু। আগের টেস্টে ৭৮ ও ৪৬ রান করা কারান এবার কিছু করতেই পারেননি! 
    শেষবেলায় বাটলারও ‘প্রায়’ আউট হয়ে ফিরেছিলেন, শেষ মুহুর্তে নেওয়া রিভিউয়ে বেঁচেছেন আল্ট্রা-এজে ইনসাইড-এজ দেখানোয়। 

    সিরিজের শেষ টেস্ট, কুকের শেষ টেস্ট। শুরুর দিনে কুক তার কাজটা ঠিকই করলেন, তবে তার চেয়েও বেশি  কিছু যেন করে রাখলেন ভারতীয় পেসাররা, তাদের দলের জন্য। যথেষ্ট হবে কি সেটাই?