বাটলারের দিনে ধুঁকছে ভারত
পঞ্চম টেস্ট, ওভাল
দ্বিতীয় দিনশেষে
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৩৩২ (বাটলার ৮৯, কুক ৭১, জাদেজা ৪/৭৯, ইশান্ত ৩/৬২)
ভারত ১ম ইনিংস* ১৭৪/৬ (কোহলি ৪৯, রাহুল ৩৭, অ্যান্ডারসন ২/২০, স্টোকস ২/৪৪)
ভারত ৪ উইকেট নিয়ে ১৫৮ রানে পিছিয়ে
আগেরদিন জস বাটলার অপরাজিত ছিলেন ১১ রানে, শেষ ৩ উইকেট নিয়ে ১৯৮ রানে ইংল্যান্ড ঘুরপাক খাচ্ছিল অনিশ্চয়তায়। যেমন এই সিরিজের টেস্টগুলো, ঠিক ‘পার-স্কোর’ কতো, আগে থেকে বুঝার কোনোই উপায় নেই। নামটা বাটলার বলে হয়তো ভারতেরও শীঘ্রই শেষ ৩ উইকেট পাওয়া নিয়ে ছিল অনিশ্চয়তা।
যদি সেটাই হয়ে থাকে, তবে ভারতীয় বোলাররা ভুলটা করেছেন সেখানেই! বাটলারের মতো কারও বিপক্ষে আর যাই হোক, ‘দোনোমনো’ ভাবটা ঠিক চলে না। ২১৪ রানে ৮ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডকে বাটলার টানলেন ৩৩২ রান পর্যন্ত! ৯ম উইকেটে স্টুয়ার্ট ব্রডের সঙ্গে তুললেন ৯৮ রান, হতাশার একেবারে চূড়-চূড়ান্ত ভারতের জন্য। দিনশেষে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরাও সেই হতাশার ঘেরাটোপ থেকে বেরুতে পারেননি, ইনিংস বেশ শুরু করলেও ফিফটিই ছুঁতে পারেননি লোকেশ রাহুল, চেতেশ্বর পুজারা বা বিরাট কোহলিদের কেউ!
আগেরদিন বাটলারের সঙ্গী ছিলেন রশিদ। দুই বাউন্ডারির পর রশিদ এলবিডব্লিউ হয়েছেন বুমরাহর বলে। এরপরই যেন ‘অল-ইন’ লড়াইটা দিলেন বাটলার। আগেরদিন ৩১ বলে ১১ রান করেছিলেন, আজ শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে ১৩৩ বলে করেছেন ৮৯ রান। তার ৩৬ শতাংশ শটই ছিল আক্রমণাত্মক। আগেরদিন ২.২০ হারে ওভারপ্রতি রান তুলেছিল ইংল্যান্ড, আজ প্রথম সেশনে সেটা বেড়ে হয়েছে ৪.২৪! বাটলারকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন ব্রড, তাদের জুটিই ৯ম উইকেটে এ সিরিজে সর্বোচ্চ। এ সিরিজে ইংল্যান্ডের শেষ চার ব্যাটসম্যান মিলে গড়ে তুলেছেন ৫৫.৭৫ করে রান, ভারতীয় টেইলের গড় যেখানে ২৬.২৫! সিরিজের পার্থক্যটা স্পষ্ট এখানেও।
ব্রডের পর বাটলারকেও ফিরিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন রবীন্দ্র জাদেজা, আগেরদিন ভারতীয় পেসারদের নিয়ে অনেক কথা হলেও শেষ পর্যন্ত ইনিংসে সর্বোচ্চ চার উইকেট এই বাঁহাতি স্পিনারেরই।
শুরুটা অননুমেয় কিছু হয়নি ভারতের, ব্রডের সুইং লাইন লেংথ কিছু না বুঝে উঠার আগেই এলবিডব্লিউ শিখর ধাওয়ান। রাহুল ও পুজারা এরপর সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন, দুজনের ৬৪ রানের জুটি ভাঙতে প্রয়োজন হয়েছে স্যাম কারানের ‘বিউটি’র। ওভার দ্য উইকেট থেকে এসে ঠিক জায়গায় হিট করে ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা সোজা হয়ে ঢুকল স্টাম্পে, বাঁহাতি পেসারের কাছে যা পিকাসো-তুল্য শিল্পকর্ম! সিরিজে এই ৩৭ রানই রাহুলের সর্বোচ্চ।
এরপর বিরাট কোহলির গল্প। পুরো সিরিজে যিনি ইংল্যান্ডকে ছেড়ে কথা বলেননি, বরং নিজের উইকেটটার মূল্যই বাড়িয়েছেন শুধু। জেমস অ্যান্ডারসনের বলে লাইন মিস করে এলবিডব্লিউ হতে পারতেন, জো রুটের আত্মবিশ্বাসী রিভিউটা বিফলে গেছে ইমপ্যাক্ট সেন্টিমিটার ব্যবধানে আম্পায়ারস কল হওয়ায়। অ্যান্ডারসন যতো কিছুই করুন, এবার যেন কোহলির উইকেট পাবেন না, যেন নিয়তি হয়ে গেছে এটাই! অ্যান্ডারসন কোহলির উইকেট না পেলেও পেলেন রাহানেরটা। দেরিতে করা সুইংয়ে খেলতে বাধ্য হলেন রাহানে, স্লিপে ক্যাচ দেওয়ার আগে করতে পারলেন না কোনও রান। রাহানের আগে পুজারাকেও ফিরিয়েছেন অ্যান্ডারসন, ওই স্লিপেই ক্যাচ বানিয়ে।
রাহানে-পুজারা নেই, কোহলির সঙ্গী অভিষিক্ত হনুমা বিহারি। ৫১ রানের জুটি তাদের। স্টোকসের অফস্টাম্পের বাইরের বলে তাড়া করে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন কোহলি, ফিফটি থেকে ১ রান দূরে থাকতে। ইনিংসটা বড় হলো না, ভারতের ইনিংসও কি আটকে গেল সেখানেই?
বিহারি এখনও আউট হননি, অদ্ভুত এক ইনিংস খেলছেন তিনি। ইংল্যান্ড রিভিউ নিলে আউট হতে পারতেন, এরপর আবার আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউয়ে বেঁচে গেলেন, দুটির সময়ই তার রান শূন্য। স্টোকসের শর্ট বলে ঠিক নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও পার পেয়ে গেলেন, বাউন্ডারিও পেলেন। শেষদিকে একটু ধাতস্থ মনে হয়েছে তাকে, রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে দিনশেষে তিনিই অপরাজিত ২৫ রানে।
ঋশাভ পান্টের অতি-আক্রমণাত্মক নীতি কাজে দেয়নি, স্টোকসের বলে স্লিপে দিতে হয়েছে ক্যাচ। ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো টেস্টে ৪ উইকেট নিয়ে ভারত এখনও পিছিয়ে ১৫৮ রানে। ইংল্যান্ডকে বিস্মিত করতে এখন ভারতের কাউকে হয়ে উঠতে হবে জস বাটলার।
দ্বিতীয় দিনে দুদলের পার্থক্য তো শেষ পর্যন্ত বাটলারই, আর তার ওই ইনিংসই!