কুক-রোমাঞ্চের অপেক্ষার সঙ্গে বাড়ছে ইংল্যান্ডের লিড
পঞ্চম টেস্ট, ওভাল
তৃতীয় দিনশেষে
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৩৩২ (বাটলার ৮৯, কুক ৭১, জাদেজা ৪/৭৯, ইশান্ত ৩/৬২) ও ২য় ইনিংস* ১১৪/২ (কুক ৪৬*, রুট ২৯*, জাদেজা ১/৩৬)
ভারত ১ম ইনিংস ২৯২ (জাদেজা ৮৬*, বিহারি৫৬, অ্যান্ডারসন ২/৫৪, মইন ২/৫০)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংসে ৮ উইকেটে ১৫৪ রানে এগিয়ে
অ্যালেস্টার কুক অপেক্ষা করছিলেন।
হয়তো নিচে ভারতের গোল হয়ে দাঁড়ানো টিম মিটিং শেষ হওয়ার অপেক্ষা, হয়তো সঙ্গী কিটন জেনিংসের তৈরি হওয়ার অপেক্ষা। অপেক্ষা করছিল ওভাল। মাঠের প্রতিটি মানুষ দাঁড়িয়ে, কেউ হয়তো ফোনটা হাতে প্রস্তুত দৃশ্যটা ধারণ করে রাখতে। অ্যালেস্টার কুকের শেষের শুরুটা হতে যাচ্ছিল।
ভারতীয় দল, আম্পায়াররা গার্ড অব অনারের কাজটা সেরে রেখেছিলেন প্রথম ইনিংসেই। বিরাট কোহলি তবুও এগিয়ে এসে হাতটা মিলিয়ে গেলেন আরেকবার। ১২ বল খেলার পর জাসপ্রিত বুমরাহ হাঁটুর ওপরে, কোমরের নিচে বলটা করলেন, কুক ফ্লিক করে মারলেন চার। কুকের শেষের শুরুটা হয়ে গিয়েছিল আগেই, এরপর তার সামনে থাকলো শুধুই শেষ।
সেই শেষটা হয়নি এখনও। ১৫৪ রানে এগিয়ে গেছে ইংল্যান্ড, কুক দাঁড়িয়ে আছেন দিনশেষে ৪৬ রানে। সঙ্গে যেন থমকে গেছেন আরও অনেকেই। শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭১, দ্বিতীয় ইনিংসে কি তবে আরও বড় কিছু? আরও স্পেশাল কিছু? স্পেশাল এক ক্যারিয়ারের শেষটাতেও কি থাকবে “শেফ-স্পেশাল”? উত্তরগুলো রোমাঞ্চ জাগাচ্ছে, যে রোমাঞ্চের শেষে অপেক্ষা করে আছে এক হাহাকার! ক্যারিয়ারের ২৯১তম ইনিংসে ব্যাটিং করছেন কুক, যে ক্যারিয়ারটা শেষ হয়ে যাবে এই ইনিংসের পরই!
জেনিংসের সিরিজে ব্যাটিং শেষ হয়ে গেছে এর আগেই। এ নিয়ে ৯ ইনিংস ব্যাটিং করলেন এই বাঁহাতি ওপেনার, ২৫ পেরুতে পেরেছেন মাত্র দুইবার। পরপর দুই টেস্টে বল ছেড়ে দিয়ে আউট হয়েছেন, আজ মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড। টেকনিকে সীমাবদ্ধতার চেয়েও যেন বড় হয়ে ধরা দিচ্ছিল অফ-ফর্মে থাকা এক ব্যাটসম্যানের চিত্রটা, যিনি নিশ্চিত নন ঠিক কী করা উচিৎ এই মুহুর্তে।
মইন আলিও কুককে আজ সঙ্গ দিতে করেছেন ২০, রবীন্দ্র জাদেজার বলে বোল্ড হওয়ার আগে। দিনের শুরুর ভাগে রোমাঞ্চের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এই জাদেজাই।
সিরিজে প্রথমবার খেলতে নেমেছেন, প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিলেও যেন সবটা জমা করে রেখেছিলেন ব্যাটিংয়ের জন্য। আগেরদিন ইংল্যান্ড এগিয়ে ছিল ১৫৮ রানে, ভারত ইনিংস শেষ হতে সেটা নেমে এলো ৪০ রানে। কৃতিত্বটার মূল অংশ যাবে জাদেজার কাছেই।
জেমস অ্যান্ডারসনকে মাথার ওপর দিয়ে মারা ছয়ে, স্পিনে বাউন্ডারিতে, অথবা সঙ্গী ব্যাটসম্যানকে উৎসাহ দিতে, রান চুরি করতে- জাদেজা সাজিয়েছিলেন পসরা। আগের দিন জস বাটলার যা করেছিলেন, আজ জাদেজা করলেন সেরকমই।
আটে নেমে ১৫৬ বলে করেছেন অপরাজিত ৮৬ রান, ক্যারিয়ারের ৯ম ফিফটির পর দেখা গেছে ‘তলোয়ার-উদযাপন’। খাপখোলা তলোয়ারটা হাতে নিয়ে অদৃশ্য কিছুর ওপর দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছেন যেন। জাদেজার ব্যাটিংয়ে ছিল পরিণতবোধের ছাপ। ভারতের হারানোর কিছু ছিল না, জাদেজার ব্যাটিংয়ে তারা পেলেন অনেক কিছু!
পরিণতবোধ ছিল হনুমা বিহারির ব্যাটিংয়েও। আগের দিন বেশ নড়বড়ে শুরু করেছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারে, আজ ছিলেন সুযোগের অপেক্ষায়। প্রথম ইনিংসেই পেয়ে গেছেন ফিফটি, মইনের বলে সামনে বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন বেইরস্টোর হাতে। ইশান্ত শর্মাও একই প্রক্রিয়াতেই দিয়েছেন ক্যাচ।
রাশিদকে উড়ে মারতে গিয়ে লং-অনে ধরা পড়েছেন শামি। ভারত তখনও ৭২ রানে পিছিয়ে। শেষ উইকেটে জাদেজা-বুমরাহ মিলে তুললেন ৩২ রান, ২৭ বলে। ভারতের শেষ ব্যাটসম্যানের অবদান এখানে শূন্য রান, ১৪ বলে!
স্ট্রাইক ধরে রাখতে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়েছিলেন জাদেজা, বুমরাহ হয়েছেন রান-আউট। ভারতের ইনিংস শেষ তখন। কুক দৌড় দিলেন, ব্যাটিংয়ে নামার জন্য ওপেনারদের যা করতে হয়।
কুক যেটা করেছেন ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার। এদিনও করলেন। শেষবারের মতো। কুকের শেষের শুরুটা হয়ে গেল এরপর। আর তারও পর, কুক অপেক্ষায় রাখলেন অনেককেই।