লোয়ের সামনে অনেক প্রশ্ন
জার্মানি আর জোয়াকিম লোয়ের জন্য কাজটা কঠিনই হচ্ছে দিন দিন। রাশিয়া বিশ্বকাপে জার্মানি গিয়েছিল ফেভারিটের তকমা নিয়ে। পরের গল্পটা জানাই, গ্রুপপর্বেই বিধ্বস্ত জার্মানি। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষ হলেও ব্যর্থতার সেই বৃত্তে থেকে বের হতে পারছে না জোয়াকিম লোয়ের দল। ইউয়েফা নেশনস লিগেও দুই ম্যাচেই জয়শুন্য তারা। ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর, কাল নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে জার্মানি হেরে বসেছে ৩-০ গোলে। তাতে শঙ্কা জেগেছে, নেশনস লিগ থেকে না রেলিগেটেডই হয়ে যায় জার্মানি।
সেই শঙ্কা অবশ্য অযৌক্তিক নয় একেবারেই। দুই ম্যাচ শেষে লিগ এ এর গ্রুপ ১ এ তলানিতে আছে জার্মানি। আর পরের ম্যাচে খেলতে হবে ফ্রান্সের বিপক্ষে, তাও ফ্রান্সের মাঠেই। কঠিন এক ম্যাচ অপেক্ষা করছে জার্মানির জন্য। প্রতিপক্ষ নিয়ে দুশ্চিন্তা তো আছেই, কিন্তু জার্মান কোচের জন্য আপাতত সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় দলের গোল করতে ভুলে যাওয়া। জার্মানির রেলিগেটেড হওয়ার প্রশ্নটা আসছে তাই ঘুরে ফিরেই।
শেষ ৯ ম্যাচের ৫টিই হেরেছে জার্মানি। ডি মানশাফটদের সাথে এই এই পরিসংখ্যান মোটেই মানানসই নয়। জার্মানির বেহাল দশার পেছনে সবচেয়ে বড় দায়টা স্ট্রাইকারদের। এই নিয়ে টানা ৩ ম্যাচ গোলশূন্য জার্মানি। জার্মানরা তো দূরে থাক, ফুটবল ইতিহাসেই এমন কিছু দেখেনি এর আগে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও ধুঁকেছে তারা। টিমো ভার্নার, থমাস মুলাররা গোলের সামনে গিয়েই খেই হারিয়ে ফেলেছেন, নইলে প্রথমার্ধে অন্তত একটি গোল হয়ত পেতেই পারত জার্মানি। গোলের সামনে গেলেই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে জার্মানির খেলা। আমস্টারডামে জার্মানি শট নিয়েছিল মোট ২১ টি। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের গোল বরাবর অন টার্গেট শট করতে পেরেছে মাত্র চারটি। শেষ ৫ ম্যাচের পরিসংখ্যান আরও হতাশাজনক জার্মানদের জন্য। ১০২ বার শট নিয়ে জার্মানির গোল পেয়েছে মাত্র দুইবার। সুইডেনের বিপক্ষে বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের ম্যাচে টনি ক্রুসের সেই ম্যাচ বাঁচানো গোলের পর আর জালের ঠিকানা খুঁজেই পায়নি জার্মানি। শেষ ৫ ম্যাচেও জার্মানির ওই একটাই জয়।
ব্যর্থতার বৃত্ত থেকেও তাই বের হওয়া হচ্ছে না ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ীদের। অথচ গত বছর দ্বিতীয় সারির দল নিয়েও কনফেডারেশন কাপ জিতে এসেছিলেন লো। তাহলে কি নিয়ন্ত্রণটা হারিয়েছেন জার্মান কোচ? জাতীয় দলের এক যুগেরও বেশি সময়ের বেশিরভাগটাই লোয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু গত কয়েক মাসে যে পরীক্ষার দিতে হচ্ছে তাকে- তাতে এরই মধ্যে প্রশ্নও উঠে গেছে তাকে নিয়ে। লোয়ের সময় কি ফুরিয়ে আসছে? নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ম্যাচের আগে ক্রুস কোচের পক্ষে নিজের শক্ত অবস্থানের কথা জানান দিয়েছিলেন। আবার সাবেক জার্মান অধিনায়ক মাইকেল বালাকের মতে লোয়ের সরে দাঁড়ানোর সময় চলে এসেছে। জার্মানির কোচকে অবশ্য খুব বেশি দায় দিয়েও লাভ নেই। লোয়ের একাদশের একটা বড় অংশই ক্লাবের হয়ে খেলেন বায়ার্ন মিউনিখে। সেখানেও তো সময় ভালো যাচ্ছে না তাদের। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিটা তাই সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় হচ্ছে আক্রমণভাগে। আর গোলখরায় ভুগছে জার্মানি। তবে বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পরও একই দল আর একই কৌশল অনুসরণ করার একগুঁয়েমির জন্য দোষ এড়াতে পারেন না লো।
আক্রমণভাগের মতো অতোটা না হলেও রক্ষণেও বেহাল দশা জার্মানির। ম্যাটস হামেলস, জেরোম বোয়াটেংদের ইস্পাত দৃঢ় রক্ষণ এখন অনেকটাই ইতিহাস। ডিফেন্ডারদের ভুল থেকে প্রতিপক্ষ সুযোগ খুঁজে নিলেও, অন্যপ্রান্তেও ঘটছে না একই ঘটনা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দু'টো সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল জার্মানি, নেদারল্যান্ডস উপহারই দিয়েছিল। দুইবারের একবারও অন টার্গেটেই শট রাখতে পারেননি জার্মান খেলোয়াড়েরা।
এতোসব ঝামেলা নিয়েই তাই জার্মানিকে যেতে হচ্ছে ফ্রান্সে। বিশ্বকাপ ব্যর্থতার পর নেশনস লিগ থেকেই রেলিগেটেড হয়ে গেলে জার্মান ফুটবলের জন্যই সেটা হবে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার ইতিহাস। রাতারাতি দলের চেহারা বদলে দিতে পারবেন লো? তাও আবার বিশ্বজয়ীদের বিপক্ষে? লোয়ের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা বোধ হয় এই ম্যাচটাই।