৩১ বছর পর স্পেনের মাঠে জিতল ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ডের হয়ে ৬ বছর খেলে রাহিম স্টার্লিংয়ের গোল ছিল ২ টি। স্পেনে প্রথমার্ধে ২২ মিনিটের ব্যবধানে সেই ট্যালি দ্বিগুণ করলেন স্টার্লিং। ৩১ বছর স্পেনের মাঠে গোলই করতে পারেনি ইংল্যান্ড, তারাই ৩৮ মিনিটের ভেতর এগিয়ে গেল ৩-০ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধে স্পেন আরও দুই গোল শোধ দিল ঠিকই, কিন্তু সেভিলের রাতটা ঢুকে গেল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে। ইউয়েফা নেশনস লিগের লিগ এ, গ্রুপ ৪ এর ম্যাচে ইংল্যান্ড স্পেনকে হারিয়ে দিয়েছে ৩-২ গোলে।
প্রীতি ম্যাচের বদলে নেশনস লিগের সংযোজন কেন দরকারি ছিল, সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে এই ম্যাচ। দুই দলের লড়াইতেই বোঝা গেল প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাই থাকে ভিন্ন। ইউয়েফা খুশি হলেও, অবশ্য স্পেন একটা রেকর্ড হারাল। ১৫ বছর প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে ঘরের মাঠে অপরাজিত ছিল তারা। লা ফুরিয়া রোহারা প্রথমার্ধে তিন গোলও হজম করেনি কখনও, অনেক কিছু হারানোর ম্যাচে না চাওয়ার রেকর্ডও করে বসল লুইস এনরিকের স্পেন।
শুরুটা অবশ্য তারাই ভালো করেছিল। ৬ মিনিটে মার্কোস আলোন্সোর স্লাইড করে মারা শট, গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড ঠেকিয়ে দেন অনেকটা সৌভাগ্যবশত। তখনই হয়ত কিছু একটা আঁচ করে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। স্পেনের পজেশন ধরে রাখা ফুটবলেও এরপর আর খুব বেশি নড়ল না ইংল্যান্ডের রক্ষণ।
সার্জিও রামোস ম্যাচের ১২ মিনিটেই আরেকটু হলে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন দলকে। যদিও রামোসের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়েও স্পেনের ডিবক্সের ভেতর রেফারির রায়টা গেছে এরিক ডায়ারের বিপক্ষে, বেঁচেও গেছেন রামোস। বল ধরে রাখলেও রক্ষণে স্পেনের নড়বড়ে অবস্থাটা শুরু থেকেই টের পেয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড প্রথম আঘাতটা আনে ১৬ মিনিটে। মার্কোস র্যাশফোর্ডের ডানদিক থেকে দেওয়া বল রিসিভ করে ডিবক্সের ভেতর দৌড়ে ঢোকেন স্টার্লিং। এরপর টপ কর্নারে জড়িয়ে স্পেনে ইংলিশদের গোলখরা কাটান। এরপর আবার ওই একই গল্প ম্যাচের স্পেনের পায়ে বল আর ইংলিশদের লং বলে স্পেনের হাই ডিফেন্সিভ লাইনকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা। তাতে পুরোপুরি সফল ইংলিশরা। স্পেনের একটা আক্রমণ থেকেই বল পেয়েছিলেন পিকফোর্ড। গোলরক্ষকের উড়িয়ে মারা বল হ্যারি কেইন নিজের নিয়ন্ত্রণে এনে দেন ডিফেন্সচেরা পাস, ডিবক্সের ভেতর ঢুকতে থাকা র্যাশফোর্ড এরপর ক্লাব সতীর্থ ডেভিড ডি গিয়াকে বোকা বানানোর কাজটা করেন নিখুঁতভাবে। ম্যাচের আধ ঘণ্টা না পেরুতেই ঘরের মাঠে স্পেন পিছিয়ে দুই গোলে!
স্প্যানিশ সমর্থকদের অবিশ্বাস অস্বস্তিতে পরিণত হতে এরপর সময় লেগেছে ৯ মিনিট। কেইন ফর্মে নেই, গোল পেতে ধুঁকতে হচ্ছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের জয়ে তার বিরাট অবদান। পরের অ্যাসিস্টটাও আসল তার পা থেকে। মিডফিল্ড থেকে উড়িয়ে মারা বলে কেইনকে খুঁজে পেয়েছিলেন রস বার্কলি। কেইন ডিবক্সের ভেতর বাম প্রান্ত থেকে করেন ক্রস, পরের টাচেই গোল স্টার্লিংয়ের।
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য দিশা খুঁজে পায় স্পেন। মাঠে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই এক গোল শোধও করেন পাকো আলকাসের। স্পেন স্ট্রাইকার এই মৌসুমে ১০ বার শট করেছেন গোলে, ১০ বারই করলেন গোল। কর্নার থেকে হেডে করা গোলে আলকাসেরের হাসিটাই ছিল তাই চওড়া। সতীর্থদের অবশ্য তখনও অনেকদূর কাজ বাকি। স্পেনের দ্বিতীয় গোলটা যখন সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছিল তখনই একবার ভাগ্য সহায় হয় ইংল্যান্ডের। লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসনের ভুলের পর পিকফোর্ড বলেছিলেন, বল নিয়ে তিনি খুব বেশি কারিকুরি পছন্দ করেন না। কথার সঙ্গে কাজের মিল রাখলেন না, ৬৫ মিনিটে বল পায়ে রেখে আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছিলেন স্ট্রাইকার রদ্রিগোকে। এরপর বল হারালেন, রদ্রিগো ফাঁকা বারপোস্টে গোল দেওয়ার জন্যও এগিয়ে যাচ্ছিলেন। পিকফোর্ড পেছন থেকে ধরে তাকে ফেলেও দিয়েও রেফারির চোখ এড়িয়ে গেছেন। স্পেনও তাই লাইফলাইন গোলটি পায়নি।
যখন পেল তখন আক্ষরিক অর্থেই ম্যাচ শেষ। ইনজুরির টাইমের শেষ মুহুর্তে, ৯৭ মিনিটে, ম্যাচের শেষ কিকে। কর্নার থেকে লাফিয়ে দারুণ এক হেড করেছিলেন রামোস। ৮৪ আর ৮৭ মিনিটে দুইবার মার্কোস আসেনসিও বারপোস্টে বাঁধা না পেলে রামোসই হয়ত আরেকবার নায়ক হয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু দিনটা তার ছিল না, স্পেনেরও কাজে দেয়নি কোনো চেষ্টা। এই জয়টা ইংল্যান্ড মনে রাখবে বহুদিন, আর স্পেনের জন্য হয়ে থাকল অস্বস্তির।