কীর্তিময় ক্লাব কাহিনী - ৩: গুটমানের বেনফিকা ও একটি অভিশাপের গল্প
১৭৭৫ এর পর্তুগাল। রাণী প্রথম মারিয়ার শাসনামল চলছে। প্রথম মারিয়া মানুষ হিসেবে বেশ ধার্মিক প্রকৃতির, তাই জনগণ তাকে সম্মান করে ডাকে ‘Maria the Pious’ বা ‘সাধু মারিয়া’ নামে। ১ নভেম্বর। পুরো সাম্রাজ্যে সরকারী ছুটি। ঐদিন ঘটা করে পালিত হয় ‘অল সেইন্ট ডে’। সেবছরও ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু হঠাৎ করে আঘাত হানল দুর্যোগ।
কোন রকম প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়েই লিসবন শহরে ভয়াবহ ভূমিকম্প হল। সাথে সুনামিও। ধারণা করা হয়, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৮.৫-৯ এর মাঝে। এই ভূমিকম্পে বলতে গেলে রাজধানী লিসবন শহর প্রায় মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। মারা গিয়েছিল ৫০ হাজারের বেশি মানুষ।
দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে বিপুল পরিমাণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সবকিছুর অভাব তো ছিলই, সাথে দেখা দিল সামাজিক বিশৃঙ্খলা। রাণী প্রথম মারিয়া কোনক্রমে পরিস্থিতি সামাল দিলেন মাত্র। কিন্তু অনেক শিশু-কিশোরের তখন শিক্ষার সুযোগ নেই। বিশেষ করে যারা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বা এতিম। রাণী মারিয়া তাদের জন্য ১৭৮০ সালে স্থাপন করলেন ‘কাসা পিয়া’। এরপর দুশো বছরের বেশি সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়েছেন পর্তুগালের অজস্র বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, খেলোয়াড়, শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, সাহিত্যিক।
১৯০৩ সালে কাসা পিয়া থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে বের হলেন কসমে দামিয়াও এবং তার বন্ধুরা। তাদের সবারই ফুটবলের প্রতি দারুণ ভালোবাসা। ১৯০৪ সালে ১৮ জন বন্ধু মিলে লিসবনের বেলেম নামক এলাকায় মিটিং করে গঠন করলেন ‘স্পোর্ট লিসবোয়া’ নামের ক্লাব। যা ১৯০৮ সালে পরিণত হয় স্পোর্টিং ক্লাব ডি বেনফিকা-য়।
এরপর ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হতে থাকে বেনফিকা। ১৯৩৪ সাল থেকে শুরু হওয়া পর্তুগিজ প্রিমিয়ার লীগে চ্যাম্পিয়ন হয় ৯ বার। ১৯২২ থেকে চলা পর্তুগীজ কাপও জেতে ৯ বার। ১৯৫৯ পর্যন্ত ইতিহাস কেন বলছি? কারণ, এরপরের গল্পটা বেশ অন্যরকম।
বদরাগী গুটম্যান, জিনিয়াস গুটম্যান
১৯৫৯ সালে ক্লাবের কোচ হয়ে আসেন বেলা গুটম্যান। ভদ্রলোক ছিলেন ভয়াবহ রাগী, কিন্তু খেলোয়াড়দের দেখতেন নিজের সন্তানের মত। ছিলেন দারুণ মুখরা স্বভাবের, সমালোচনা করতেন রাখ-ঢাক না রেখে। বলা হয়, হোসে মরিনহোর যদি কোন আইডল থেকে থাকেন, তাহলে বেলা গুটম্যান নিঃসন্দেহে সেই আইডল।
খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন সেন্টার ব্যাক। ১৫ বছরে হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া এবং আমেরিকার ৮ ক্লাবের হয়ে খেলে ২ বার জিতেছেন হাঙ্গেরিয়ান লীগ, একবার অস্ট্রিয়ান লীগ। বিশ্বযুদ্ধের কারণে অসময়েই শেষ হয় ক্যারিয়ার।
কোচিং এ এসেই ফুটবলের ট্যাকটিকাল জগতে আনেন বড় ধরণের পরিবর্তন। ২-৩-২-৩ এর চিরচেনা ফর্মেশন বদলে ৫০ এর দশকে গুস্তাভ সেবেস, মার্তন বুকোভি এবং গুটম্যান, এই তিন প্রভাবশালী হাঙ্গেরিয়ান কোচ মিলে ৪-২-৪ ফর্মেশন উদ্ভাবন করেন, এবং ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকায় এর বিস্তার ঘটান। ব্রাজিল ১৯৫৮ বিশ্বকাপ জেতে এই ফর্মেশনে খেলেই।
গুটম্যানের সবচেয়ে বড় কুখ্যাতি ছিল কোথাও থিতু হতে না পারা। খেলোয়াড়ি জীবনে যেমন বারবার ক্লাব বদল করেছেন, তেমনি ৪০ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে ২৩টি ক্লাব সামলেছেন। তার সম্পর্কে বিখ্যাত উক্তি ছিল, ‘তৃতীয় মৌসুম ভয়ংকর’, কারণ কোন দলের হয়ে দুই মৌসুমের বেশি থাকতে পারেননি! ‘মত না মিললেই ক্লাব ছাড়ো’ – এই উক্তিতে বিশ্বাসীর কাছে আর কি আশা করা যায়!
এসি মিলানকে ৫৪-৫৫ মৌসুমে দারুণ খেলিয়ে লীগ শিরোপার যখন একদম কাছে, বোর্ডের সাথে মতবিরোধে হন বরখাস্ত। সাথে সাথেই বোমা ফাটান গুটম্যান, “I have been sacked even though I am neither a criminal nor a homosexual!”
অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি, ব্রাজিলের বিভিন্ন ক্লাবকে কোচিং করিয়ে ১৯৫৮-তে পা দেন পর্তুগালে। যোগ দেন এফসি পোর্তোতে। বেনফিকার সাথে ৫ পয়েন্টের ব্যবধান রেখে দলকে করেন লীগ চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু হঠাৎ করেই পরের মৌসুমে হঠাৎ যোগ দেন প্রতিদ্বন্দ্বী শিবির বেনফিকাতে।
''দ্য টিম হু ফিয়ার নাথিং''
পাকা জহুরীর চোখ ছিল গুটম্যানের, খেলোয়াড় চিনতে এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসতে রীতিমত দক্ষ ছিলেন এই হাঙ্গেরিয়ান-অস্ট্রিয়ান।
বেনফিকাতে এসেই দলকে নিজের মত করে তৈরি করেন তিনি। রাইট উইং এ খেলার জন্য পর্তুগালের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে স্কাউটিং করে নিয়ে আসেন পিন্তো ডি আলমেইদাকে। গতি ছিল দারুণ, সাথে স্ট্যামিনা; ৯০ মিনিট জুড়ে উইং ধরে ওঠানামা করে খেলতে পারতেন।
লেফট উইং এ সাইন করান ১৫ বছরের কিশোর আন্তনিও সিমোয়েস কস্তাকে। যিনি টানা প্রায় ১৫ বছর ধরে ফরোয়ার্ডদের দিয়ে গোল করানোর কাজে সার্ভিস দিয়ে গেছেন।
সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে আনেন হোসে অগুস্তো তোরেসকে। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চির এই বিশাল বপু খেলোয়াড়কে সমর্থকরা ডাকতেন ‘দয়ালু দৈত্য’ নামে। বেনফিকার হয়ে ১৭১ ম্যাচে করেছিলেন ১৫১ গোল!
তবে গুটম্যানের সেরা সাইনিং ছিল মোজাম্বিকে জন্ম নেওয়া দ্রুতগতি সম্পন্ন অচেনা এক স্ট্রাইকার। এই খেলোয়াড়ের সাথে চুক্তি করার ঘটনা ছিল খুবই অদ্ভুত। গুটম্যান গিয়েছিলেন সেলুনে চুল কাটাতে, সাথে ছিলেন পর্তুগাল সফরে আসা ব্রাজিলের খেলোয়াড় কার্লোস বুয়োর। তিনি মোজাম্বিকের এক স্ট্রাইকারের অসাধারণ খেলার বর্ণনা করছিলেন, হঠাৎ সেই সেলুনে আসেন সেই খেলোয়াড়। বুয়োর তাকে দেখে পরিচয় করিয়ে দিলেন গুটম্যানের সাথে। গুটম্যান তৎক্ষণাৎ চুক্তি সই করলেন তার সাথে। খেলোয়াড়টির নাম ইউসেবিও দা সিলভা ফেরেইরা, যিনি পরবর্তীতে পর্তুগালের ইতিহাসের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের সম্মান অর্জন করেন নিজ নৈপুণ্যে।
ক্লাবে আগে থেকেই ছিলেন ‘পবিত্র দৈত্য’ খ্যাত মারিও কলুনা। এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের যেমন ছিল স্ট্যামিনা এবং শক্তি, তেমনি নিখুঁত ক্রস, দূরপাল্লার শট আর টেকনিকাল দক্ষতা ছিল দেখার মত।
গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন আলবার্তো পেরেইরা। আর ছিলেন বিখ্যাত সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার জার্মানো, ইউয়েফার সর্বকালের সেরা ৫০ ডিফেন্ডারের তালিকায় ছিলেন অগ্রগণ্য। ছিলেন ফরোয়ার্ড হোসে আগুয়াস, ১৩ বছর ধরে বেনফিকায় খেলে কোন মৌসুমেই ১৮ গোলের কম করেননি!
পর্তুগিজ সাম্রাজ্য এবং ইউরোপের রাজমুকুট
“I never minded if the opposition scored, because I always thought we could score another.”-- এই মন্ত্রে দীক্ষিত কোচ যদি আকর্ষণীয় খেলা না উপহার দেন আর কে দেবেন?
একদল তরুণ খেলোয়াড় আর সাথে অজানা এক আফ্রিকান চিতা। সুন্দর ফুটবল বলতে কি বোঝায়, তা দেখিয়েছিলেন গুটম্যান। রক্ষণদুর্গ, তার সামনে ঢাল, আর সবার সামনে পর্তুগিজ সিংহ আর আফ্রিকান চিতা, ঐ দল যা খেলত, যেভাবে খেলত, তাই ভাল লাগত।খেলার মাঝে হঠাৎ করেই কারো পজিশন বদলে দিয়ে বিপক্ষ দলকে অবাক করতে মজা পেতেন এই কোচ।
গুটম্যান পুরোটা সময় না থাকলেও তাঁর গড়ে দেওয়া এই দলটি একসাথে ছিল প্রায় ১১ বছর। এর মধ্যে পর্তুগিজ লীগ জেতে ৮ বার। এর মধ্যে '৬৩-'৬৫ এবং '৬৭-'৬৯ সময়ে দুবার করে হ্যাটট্রিক শিরোপার রেকর্ড। ১৯৬২, ’৬৪ এবং ’৬৯ এ চ্যাম্পিয়ন হয় পর্তুগিজ কাপের। ১৯৬৩-৬৪ এবং '৬৮-৬৯ মৌসুমে ডাবল জেতে দলটি।
তবে ''দ্য ঈগলস'' খ্যাত বেনফিকার এই দলটি মূল আধিপত্য দেখায় ইউরোপের সেরা আসরে। প্রথম ক্লাব হিসেবে তারা রিয়াল মাদ্রিদের টানা ৫ শিরোপার যুগ শেষ করে ১৯৬১ এবং ১৯৬২-তে পরপর দুবার ইউরোপিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে। সাথে ফাইনালে ওঠে ১৯৬৩, ১৯৬৫ এবং ১৯৬৮ সালে।
১৯৬০-৬১ মৌসুমে লীগ জেতে গুটম্যানের ছাত্ররা। ইউরোপিয়ান আসরে ফাইনালের আগে ৮ ম্যাচে ২৩ গোল করে বেনফিকা। ফাইনালে বার্নের ওয়াঙ্কডর্ফ স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় ককসিস-জিবর-কুবালার বার্সেলোনার। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রিয়াল মাদ্রিদবিহীন প্রথম ফাইনালে বার্সাকে ৩-২ গোলে হারায়। এই ম্যাচে ৮ মিনিটেই আঘাত পেয়ে নাক ভাঙে কলুনার, তারপরও তিনি মাঠ ছাড়েননি। ৫৫ মিনিটে দলের পক্ষে তৃতীয় গোলটি করেন কলুনা, যা ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোল। বার্সার আক্রমণ থেকে বল পেয়েই ভলি করেন গোলকিপার, বল যায় রাইট ব্যাক কাভেমের কাছে, তিনি ক্রস করেন বার্সার পেনাল্টি বক্সের সামনে, সেখানে ভাসমান বলে ভলি করে গোল করেন নাকভাঙা কলুনা। আসরে ১১ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন হোসে আগুয়াস।
১৯৬১-৬২ মৌসুমে লীগ না জিতলেও ঘরোয়া কাপ দখল করে তারা। ইউরোপিয়ান আসরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে বেনফিকা। ফাইনালের পথে ৬ ম্যাচে করে ১৭ গোল। অ্যামস্টারডামের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ফাইনালে দেখা হয়, ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদের সাথে। ইউরোপের সেরা দুই আক্রমণভাগ মুখোমুখি হয় সেরার লড়াইয়ে।
একদিকে পুসকাস-স্তেফানো-জেন্টোর রিয়াল; আরেকদিকে আগুয়াস-ইউসেবিও-তোরেসের বেনফিকা। শুরু থেকেই সমান তালে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের খেলায় পুসকাসের হ্যাটট্রিকে প্রথমার্ধে ৩-২ গোলে এগিয়ে যায় রিয়াল। তবে দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে থাকা দুই দলের বাকি ২১ জনকে ছাপিয়ে তারকা হয়ে ওঠেন এক তরুণ স্ট্রাইকার - ইউসেবিও। ৬১ ফাইনালে খেলতে পারেননি চোটের কারণে। তবে এই ফাইনালে হয়ে ওঠেন দলের ত্রাণকর্তা। দুর্দান্ত গতি, ড্রিবলিং, জোরালো শট – নিজের সব নৈপুণ্য দিয়ে রিয়ালের রক্ষণ আর গোলপোস্টকে তছনছ করে ফেলেন ''ব্ল্যাক প্যান্থার'' বা ''কালো চিতা'' খ্যাত এই তরুণ। ইউসেবিও ৫০ মিনিটে সমতাসূচক গোল বানিয়ে দিয়ে এবং ৬৪ ও ৬৯ মিনিটে ২ গোল করে ৫-৩ গোলে হারিয়ে দেন রিয়াল মাদ্রিদকে।
প্রথম ক্লাব হিসেবে রিয়ালকে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে হারায় বেনফিকা। এই ফাইনালকে ইউরোপিয়ান কাপের সেরা ৫ ফাইনালের একটি হিসেবে গণ্য করা হয়। এই আসরে আগুয়াস ৬ এবং ইউসেবিও ৫ গোল করে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় দ্বিতীয় এবং তৃতীয় হন। সিমোয়েস কস্তা ১৮ বছর ৪ মাস বয়সে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়ন হবার রেকর্ড গড়েন।
গুটম্যানের অভিশাপ এবং অতঃপর...
এই ফাইনালের পরপর ক্লাবের পরিচালকদের কাছে বেতন বাড়ানোর দাবি পেশ করেন বেলা গুটম্যান। এত সাফল্যের পরও পরিচালকরা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলে তিনি পদত্যাগ করেন। এই সময় অভিমান করে ক্লাবের ওপর দিয়ে যান অভিশাপ। ‘‘আগামী ১০০ বছরে একবারও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না বেনফিকা’’। যদিও, এটা কতটুকু সত্যি সেটা নিয়ে ফুটবল লেখকদের অনেকেরই সন্দেহ আছে। তবে আশ্চর্য হলেও সত্য, এরপর ৫৩ বছরেও ইউরোপিয়ান কোন আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বেনফিকা।
৮ বার ইউরোপিয়ান আসরের ফাইনালে খেললেও প্রতিবারই হেরেছে দলটি। এর মধ্যে ১৯৬৩, '৬৫, '৬৮, '৮৮, '৯০ ইউরোপিয়ান কাপ (চ্যাম্পিয়নস লীগ) এবং ১৯৮৩, ২০১৩, ২০১৪ সালে উয়েফা কাপ (ইউরোপা লীগ) ফাইনালগুলোতে উঠেও হারে দলটি। এরমধ্যে ১৯৯০ সালের ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনাল হয় ভিয়েনাতে, যেখানে গুটম্যান চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। ঐ ফাইনালের আগে ইউসেবিও তার শবাধারে গিয়ে প্রার্থনা করেন এবং ক্ষমা চেয়ে অনুরোধ করেছিলেন যেন অভিশাপটি ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ঐ আজীবন রাগী ভদ্রলোকের মন তখনো গলেনি। পরে বেলা গুটম্যান আবার ফিরে এসেছিলেন ক্লাবে। ১৯৬৫-৬৬ সময়ে ১ বছর কোচ থাকলেও নিজের দেওয়া অভিশাপ ভঙ্গ করতে পারেননি।
গুটম্যানের অভিশাপ যদি সত্যি হয়ে থাকে, সেটা শেষ হতে বাকি আছে ৪৭ বছর। হয়ত তার আগেই তিনি ক্ষমা করবেন বেনফিকা নামক ক্লাবকে যাদের তিনি সর্বকালের সেরাদের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইউসেবিও চলে গেছেন, গুটম্যান তো তার আগেই! তবে যেদিন বেনফিকা আবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হবে, এই অভিমানী ভদ্রলোক সবার অলক্ষ্যে একটু হলেও মুচকি হেসে বলবেন, ‘যাহ! মাফ করে দিলাম। আর আমাকে বিরক্ত করবেন না, ঘুমোতে দিন!’
আরো পড়ুনঃ
"বুসবি বেবস" ও একটি ট্র্যাজেডির গল্প
রিয়ালের গ্যালাক্টিকো আর অন্তরালের ধ্রুবতারা- পর্ব ১
রিয়ালের গ্যালাক্টিকো আর অন্তরালের ধ্রুবতারা - পর্ব ২
রিয়ালের গ্যালাক্টিকো আর অন্তরালের ধ্রুবতারা-পর্ব ৩