নাটকীয় জয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড, রেলিগেশনে ক্রোয়েশিয়া
এক ম্যাচের ওপর নির্ভর করছিল তিন দলের ভাগ্য। ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ ড্র হলে শীর্ষ স্থান নিশ্চিত হয়ে যেত স্পেনের। ওয়েম্বলিতে ম্যাচের ৫৫ মিনিট পর্যন্তও ইউয়েফা নেশনস লিগের এ৪ গ্রুপ থেকে স্পেনেরই ফাইনাল খেলার কথা ছিল। এরপর ক্রোয়েশিয়ার গোলের পর হিসাব গেল বদলে, তাতে রেলিগেশনে ইংলিশরা, আর ক্রোয়েশিয়াই গ্রুপের শীর্ষে। ৭৬ মিনিটে খেলার ফল ১-১ হওয়ার পর এক ধাপ নেমে গেল ক্রোয়েশিয়া, স্পেন সবার ওপরে, ইংল্যান্ড তলানীতেই থাকল। ৭৪৭ মিনিট ইংল্যান্ডের জার্সিতে গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে, অনেক অপেক্ষার পর স্বস্তির বৃষ্টির মতো হ্যারি কেইনের এক গোল যেন বদলে দিল ইংলিশদের সব খরা! সব সমীরকণ পেছনে ফেলে এরপর ৮৫ মিনিটে কেইনই ফিরিয়ে আনলেন ইংল্যান্ড, টেনে তুললেন সবার ওপরে। প্রথমে পিছিয়ে পড়েও ২-১ গোলের জয় নিয়ে ইংল্যান্ড তাই চলে গেছে ইউয়েফা নেশনস লিগের ফাইনাল রাউন্ডে।
অবশ্য ম্যাচটা এতো কঠিন বানিয়ে জেতায় ইংল্যান্ড কেবল নিজেদেরই দুষতে পারে। শুরুটা যদিও নড়বড়ে হয়েছিল তাদের। ৩ মিনিটে রক্ষণের ভুলে আনতে রেবিচ ভালো একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। ডিবক্সের বাইরে থেকে অবশ্য ফাঁকা বারেও তিনি মেরেছেন বাইরে দিয়ে। প্রথম দফায় বিপদ রক্ষা করতে এগিয়ে আসা জর্ডান পিকফোর্ড হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন এরপর। প্রথমার্ধে বাকিটা সময় আর ইংল্যান্ডের রক্ষণে তেমন আনাগোণা ছিল না ক্রোয়েশিয়ার। অন্যপ্রান্তের গোলরক্ষক লভ্রে কালিনিচই আসলে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইংল্যান্ড আর গোলের মধ্যে। ১১ মিনিটে হ্যারি কেইনের মিডফিল্ড থেকে দেওয়া পাসে রাহিম স্টার্লিংয়ের ওয়ান অন ওয়ানে করা শট ঠেকিয়ে শুরু কালিনিচের। ইংল্যান্ডের সেই আক্রমণ কালিনিচ কর্নারে পরিণত করলেও, সেখান থেকেই সুবর্ন সুযোগ এসেছিল ঘরের দলের কাছে। স্টোনসের হেডের পর সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ভেতর বল পেয়ে গিয়েছিলেন কেইন। অন টার্গেটে শট করতে পারলেই হয়ত গোল পেয়ে যেত ইংল্যান্ড, কিন্তু বলের সাথে সংযোগই ঘটাতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক।
এর মিনিট চারেক পর কেইন আবারও সুযোগ নষ্ট করেন। তিনিও ফাঁকা বারেই বল পেয়ে গিয়েছিলেন, ডিবক্সের ঠিক বাইরে। আগের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার স্পেনকে হারানোর নায়ক ইয়েদভা হেড মুহুর্তের জন্য বিপদমুক্ত করেন দলকে। ফিরতি শটে কেইন পরাস্ত হন সেই কালিনিচের কাছে। ২৫ মিনিটে আরও একবার চিলওয়েলের শট ঠেকিয়ে দেন কালিনিচ।
প্রথমার্ধে কালিনিচই ক্রোয়াটদের টিকিয়ে রেখেছিলেন। আর ইংলিশদের সহজ সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুল গুণতে হয় দ্বিতীয়ার্ধে। প্রতি আক্রমণেই ইংলিশদের ঘায়েল করতে চেয়েছিল ক্রোয়াট কোচ লাটকো ডালিচ। গোল পেতে শেষ পর্যন্ত ইভান রাকিটিচের অনুপস্থিতিও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ক্রোয়েশিয়ার। পুরো ম্যাচ ইংল্যান্ডের আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত থাকা ক্রোয়াটদেড় এগিয়ে নেন আন্দ্রে ক্রামারিচ। প্রতি আক্রমণ থেকেই ক্রস ডিবক্সের ভেতর বল পান ক্রোয়াট ফরোয়ার্ড। তাঁর সামনে ছিলেন ইংল্যান্ডের তিনজন ডিফেন্ডার। সময় নিয়ে শেষে ক্রামারিচের শট লাগলো এরিক ডায়ারের এক্সটেন্ডেড লেগে। তারপর পিকফোর্ডকে ফাঁকি দিয়ে বল জড়াল জালে। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের ক্রোয়াটদের জয়টাই তখন আরও একবার মনে করিয়ে দিয়ে গেল ওই গোল। এরপর কয়েক মিনিটে বেশকিছু সুযোগও পেয়েছিল তারা, কিন্তু ব্যবধান আর বাড়ানো হয়নি তাদের। ৭৬ মিনিটে মার্সেলো ব্রোজোভিচও দারুণ এক গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েও আর বাস্তবে পরিণত করতে পারেননি।
পুরো ম্যাচে আক্রমণাত্মক খেলা ইংলিশদের ভাগ্য ফেরে এর দুই মিনিট পরই। একটা গোল তাদের প্রাপ্যও ছিল হয়ত। জোসেপ গোমেজের লম্বা থ্রো ডিবক্সের ভেতর পেয়ে যান কেইন। এবার কালিনিচের পায়ের ফাঁক দিয়ে মারলেন, গোলের দিকে যেতে থাকা বল লাইন অতিক্রম করিয়ে ইংল্যান্ডকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন জেসি লিনগার্ড। দ্বিতীয়ার্ধে লিনগার্ড, আলি, সানচোরা বদলি নেমে আক্রমণে ধার বাড়িয়েছিলেন ইংল্যান্ডের আক্রমণে। ৮২ মিনিটে কর্নার থেকে ভিদার হেড ঠেকিয়ে দিয়ে জর্ডান পিকফোর্ডও কাজ এগিয়ে রেখেছিলেন। আর শেষ চিত্রে কেইনই হয়ে গেলেন আরও একবার ইংল্যান্ডের নায়ক। ১-১ এ সমতায় থাকলেও অ্যাওয়ে গোলে পিছিয়ে থেকে রেলিগেটেড হয়ে যেত ইংল্যান্ড। কিন্তু ৮৫ মিনিটে ত্রাতা হয়ে সেখান থেকেই ইংল্যান্ডকে টেনে তুললেন ইংলিশ অধিনায়ক। সেন্টার থেকে ডিবক্সের ভেতর স্লাইড মেরে খোঁচা দিয়ে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন কেইন। সবশেষ কলম্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন তিনি।
এই হারে রাশিয়া বিশ্বকাপের রানার আপ ক্রোয়েশিয়াকে নেমে যেতে হবে নেশনস লিগের দ্বিতীয় স্তরে। আর এই গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকল স্পেন। প্রথম দল হিসেবে আগের রাতে পর্তুগাল নিশ্চিত করেছিলেন নিজেদের জায়গায়, ফাইনালের দ্বিতীয় দল হিসেবে ইংল্যান্ড নাম লেখাল এরপর। নেশনস লিগের ফাইনালের আরও দুইদল নিশ্চিত হবে বাকি দুইদিনের ভেতরই।