• বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • " />

     

    মুমিনুলের সেঞ্চুরির পর গ্যাব্রিয়েলের ভয়ঙ্কর তিন ওভার

    মুমিনুলের সেঞ্চুরির পর গ্যাব্রিয়েলের ভয়ঙ্কর তিন ওভার    

    চট্টগ্রাম টেস্ট
    প্রথম দিন, স্টাম্পস 
    বাংলাদশ ৩১৫/৮* (মুমিনুল ১২০, ইমরুল ৪৪*, তাইজুল ৩২*, নাঈম ২৪*)


     

    দিনটা বাংলাদেশেরই হতে পারতো শুধু। দিনটা হতে পারতো শুধু মুমিনুল হকের। চট্টগ্রামে তার আরেকটি সেঞ্চুরির উপলক্ষটা রঙিন হতে পারতো আরও। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের তিন ওভার হতে দিল না সেটা। ২২২ রানে ৩ উইকেট থেকে ২৩৫ রানে ৭ উইকেটে পরিণত হওয়া বাংলাদেশকে অবশ্য এরপর ধাতস্থ করেছে ৯ম উইকেটে তাইজুল ইসলাম ও অভিষিক্ত নাঈম হাসানের অবিচ্ছিন্ন ফিফটি পেরুনো জুটি, যাতে ৩০০ পেরিয়েছে বাংলাদেশ। সঙ্গে ক্রেইগ ব্রাথওয়েটের মতো স্পিনারদের পাওয়া টার্নও হয়তো উৎসাহ বাড়িয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের শক্তিশালী স্পিন-আক্রমণকে। দ্বিতীয় দিনও তাই ইঙ্গিত দিচ্ছে প্রথম দিনের মতোই জমজমাট খেলার। প্রথম সেশনে ১০৫ রানে বিপরীতে ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশ পরের সেশনে ১১১ রান তুলেছিল মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে। তবে এরপরের সেশনে বদলে গেল সব, ৯৯ রান তুলতে বাংলাদেশ হারিয়েছে ৫ উইকেট। 

    এর আগে চট্টগ্রামকে আরেকবার নিজের করে নিয়েছেন মুমিনুল। সাগরিকার এই মাঠ আর মুমিনুল হক- যেন দুজন দুজনার। বছরের শুরুতে এ মাঠে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন এই বাঁহাতি, সেখানে করলেন আরেকটি। লাঞ্চের আগেই ফিফটি পেয়েছিলেন, স্কয়ার অব দ্য উইকেটে খেলেছেন দারুণ। লাঞ্চের পর অবশ্য শুরু খেলছিলেন ধীরলয়ে, নব্বইয়ে যাওয়ার আগে এ সময়ে মেরেছিলেন মাত্র একটি বাউন্ডারি। ৮৮ থেকে তিন নিয়ে নব্বইয়ের ঘরে গেলেন, এরপর বিশুকে ছয়ের পর চেজকে কাট করে চার মেরে পূর্ণ করলেন সেঞ্চুরি। এ মাঠে ৮ম ম্যাচে ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি করলেন তিনি। তামিম ইকবালের সঙ্গে বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে এখন যৌথ সর্বোচ্চ ৮টি সেঞ্চুরি হলো তার। ৬৭ রানে শেন ডাওরিচের হাতে জীবন পেয়েছিলেন মুমিনুল, আউট হওয়ার আগে এছাড়া সুযোগ দেননি আর সেভাবে। 

    তার আগে দ্বিতীয় সেশনে ড্রিংকসের পর প্রথম ওভারে বিশুকে স্লগ করতে গিয়ে খাড়া ওপরে ক্যাচ তুলে উইকেটটা বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন মোহাম্মদ মিঠুন। কিন্তু এর পরের ঘন্টায় সাকিব-মুমিনুলে আধিপত্য বেড়েছিল বাংলাদেশের। ফিফটি পেরুনো জুটি নিয়ে চা-বিরতিতে গেলেন দুজন, বাংলাদেশের নিচে তখন শক্ত ভিত, আর দৃষ্টিসীমায় বড় স্কোর। তবে এরপরই বদলে গেল চিত্রটা। 

     

     

    চার ওভারের এক স্পেল, যার প্রথম তিন ওভারে চার উইকেট। আর বাংলাদেশের ধস। যেন সাজানো সংসার এলোমেলো হয়ে যাওয়া। গ্যাব্রিয়েল এখানে ‘খলনায়ক’ বাংলাদেশের জন্য। শুরুটা করলেন মুমিনুল হক, অফস্টাম্পের বাইরের বলে আলগা শট খেলতে গিয়ে এজড। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ গ্যাব্রিয়েলের তীক্ষ্ণ সিম মুভমেন্টের শিকার, প্রথমজনের উইকেট উইন্ডিজ পেলো রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউতে, পরেরজন বোল্ড। বোল্ড হলেন সাকিবও, এবার শর্ট অব আ লেংথ থেকে লাফিয়ে উঠে বল ভাঙলো অফস্টাম্প। মিরাজও টিকলেন না বেশিক্ষণ, ওয়ারিকানের বলে বোল্ড হয়ে তিনি ফেরার সময় বাংলাদেশের রান ছিল ২৫৯। 

    এরপর অভিষিক্ত নাঈমকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েছেন তাইজুল। তাকে অবশ্য দুইবার আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার আলিম দার, দুইবারই তিনি বেঁচেছেন রিভিউ নিয়ে। ব্রাথওয়েট-ওয়ারিকান-গ্যাব্রিয়েলদের দুজন সামালও দিয়েছেন ভালভাবে। দিনশেষে দুজনের জুটি অবিচ্ছিন্ন ৫৬ রানে। শেষের মতো শুরুটা অবশ্য আশাজাগানিয়া ছিল না বাংলাদেশের জন্য। 

    ওপেনিং নিয়ে বাংলাদেশের সমস্যা কাটছেই না, এই ইনিংসের পর তা বাড়বে নিশ্চিত। ইমরুল ও সৌম্য সরকারের আজকের ওপেনিং জুটিটা স্থায়ী হলো মাত্র তিন বল। কেমার রোচের মুখোমুখি প্রথম বলে কোনো রান পেলেন না সৌম্য, রোচের দ্বিতীয় বলটা অফ স্টাম্পের ঠিক পাশ ঘেঁষে। তাতে খোঁচা দিয়ে উইকেটকিপার ডওরিচকে ক্যাচ দিলেন সৌম্য, ফিরলেন কোনো রান না করেই। বলটা ভালো ছিল অবশ্যই, তবে সৌম্যর দায় তাতে খুব একটা কমে না।

    দুঃস্বপ্নটা বাড়তে পারত আরও। ইমরুল ৩ ও ১৬ রানে দুইবার জীবন পেয়েছেন, তবে সেটা কাজে লাগিয়ে করতে পেরেছেন ৪৪। লাঞ্চের ঠিক আগে জোমেল ওয়ারিকানের নির্বিষ বলে শর্ট লেগে তুলেছেন ক্যাচ, যেটা দারুণভাবে নিয়েছিলেন শন আমব্রিস।