....বোল্ড প্রিয়তমেষু
টেস্টে চার ইনিংসে চারবার, এরপর ওয়ানডেতে তিনদফায় আরও দুইবার শিমরন হেটমায়ার আউট হলেন মেহেদি হাসান মিরাজের বলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এ সফরে হেটমায়ারের উইকেটকে যেন নিজস্ব বানিয়ে ফেলেছেন বাংলাদেশী অফস্পিনার, টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাড়তে পারে যে সংখ্যাটা। মিরাজ-হেটমায়ারের ‘জুটি’-তে ভর করে ফিরে তাকানো যাক পেছনে, যখন ক্রিকেটে জমে উঠেছিল ব্যাটসম্যান-বোলারের জুটি। যখন এক ব্যাটসম্যান বারবার আউট হয়েছেন একই বোলারের বলে…...
পিজিয়নে বন্দী আথারস
মাইক আথারটন, কট হিলি বোল্ড ম্যাকগ্রা। ১৯৯৫ অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্ট, পার্থ। ম্যাকগ্রা দৃশ্যপটে হাজির হওয়ার আগে ১৩ অ্যাশেজ টেস্টে আথারটনের গড় ছিল ৩৬.২০, ১৯৯১ সালে সিডনিতে সেঞ্চুরিও ছিল একটা। ম্যাকগ্রা এলেন, আথারটনের কপাল পুড়লো। অ্যাশেজে গড় নেমে এলো ২০.৫১-তে। ১৭ টেস্টে আথারটন ম্যাকগ্রার শিকার হলেন ১৯ বার। টেস্টে একই বোলারের বলে সবচেয়ে বেশিবার আউটের রেকর্ডটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক।
ম্যাকগ্রার পরিকল্পনা ছিল সাধারণ- চতুর্থ স্টাম্প লাইন ধরে বোলিং করে যাওয়া, আথারটন যেগুলোতে খোঁচা দিতেন। এরপর পুড়তেন আক্ষেপে, তার ‘আহ’ চিৎকার যেন শোনা যেত বাইরে থেকেই! ম্যাকগ্রার বিপক্ষে আথারটনের অসহায়ত্ব যেন ওই সময়ে অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের দুর্দশাই ফুটিয়ে তোলে। টেস্টে একই বোলারের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি আউট হওয়ার তালিকায় তিন ও চারেও আছে আথারটনের নাম। এক্ষেত্রে বোলাররা হলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিখ্যাত জুটি- কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোস। দুজনের বলেই ১৭ বার করে আউট হয়েছেন আথারটন, হতাশ করেননি কাউকেই!
লোকগাঁথা, ওয়ার্নের ‘প্রিন্স’গাঁথা
সংখ্যা বলবে, ড্যারিল কালিনান শেন ওয়ার্নের বলে আউট হয়েছিলেন মাত্র চারবার। তবে ওয়ার্নের বিপক্ষে তার অসহায়ত্ব ঢুকে গেছে ক্রিকেটীয় লোকগাঁথায়। এমনিতে স্পিনে ভাল, এমন সমসাময়িক দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কালিনান এগিয়েই ছিলেন, তবে ওয়ার্নের ক্ষেত্রেই যেন গড়বড় হয়ে যেতো সব। এই লেগস্পিনারের বিপক্ষে কালিনানের গড় ছিল ২.৭৫, ওয়ার্ন খেলেছেন এমন ম্যাচে সেটা ১২.৭৫। ওয়ার্নের ভূত তাড়াতে পরে মনোবিদের সহায়তাও নিয়েছিলেন কালিনান! অবসরের পর তার স্বীকারোক্তিটাও অবশ্য উল্লেখ করার মতো- “আমার জন্য ওয়ার্ন একটু বেশিই সেরা ছিল”!
নব্বইয়ের দশক ও এর পরের সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া লড়াইয়ে অবশ্য কালিনান নন, ওয়ার্নের ‘বানি’ ছিলেন অ্যাশওয়েল প্রিন্স। এই বাঁহাতি ওয়ার্নের শিকার হয়েছিলেন টানা আট ইনিংসে, এক্ষেত্রে যেটা রেকর্ড। সব মিলিয়ে প্রিন্স ওয়ার্নের বলে আউট হয়েছিলেন ১১ বার।
তবুও, ‘বানি’ বা ‘জুজু’-এর কথা উঠলে ওয়ার্ন-কালিনানই আসে আগে!
স্বর্ণালী সময়, রাজপুত্রদের লড়াই
ডেলিভারি স্ট্রাইডের দুই ধাপ আগেও বলটা থাকতো বাঁ হাতে। এরপর ডানহাতে নিতেন, তার বোলিং জুড়ে ছিল রহস্য। বলা হতো, এক গুগলি ছাড়া সিডনি বার্নস করতে পারতেন সব ডেলিভারিই। তখনও সুইং প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বলের মুভমেন্টকে বলা হতো ‘সয়ার্ভ’। উনবিংশ শতাব্দির শুরুর দিকে বার্নস মুখোমুখি হলেন ভিক্টর ট্রাম্পারের। ট্রাম্পারের জন্ম-মৃত্যু, দুটিই ছিল সিডনিতে, বার্নসের প্রথম নাম যেটা! ট্রাম্পার অনেকের কাছেই ব্যাটিং-সৌন্দর্যের শেষ কথা, তখন অস্ট্রেলিয়ার সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান। তখন ক্রিকেটেরও সেরা সময়, স্বর্ণালী সময়। সিডনি বার্নস ও ভিক্টর ট্রাম্পার সে সময়ে ক্রিকেটের দুই রাজপুত্র। বার্নসের সঙ্গে প্রথম দেখায় ট্রাম্পার টিকলেন মাত্র ৫ বল, তবে এরপর ১৭ টেস্টে তার বলে আউট হলেন ১৩ বার। বার্নসের মুখোমুখি হয়ে ট্রাম্পার ফিফটি পেয়েছিলেন দুইটি, তবে তার বিপক্ষে গড়টা আটকে গিয়েছিল ১৪.৮৪-তেই।
স্টেইনগানে বিদ্ধ হাফিজ
আর কেউ না করুন, ডেল স্টেইন মিস করতেই পারেন মোহাম্মদ হাফিজকে। অন্তত টেস্ট সিরিজে তো বটেই! বক্সিং ডে টেস্টে ফিট থাকলে স্টেইনের না খেলার সম্ভাবনা নেই প্রায়, তবে তার প্রিয় শিকার যে অবসর নিয়ে ফেলেছেন ঠিক আগের টেস্টেই! বেশ কিছুদিন পর টেস্টে ফেরা হাফিজ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে পুরো মনযোগ দেবেন বলে অবসরে গেছেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় টেস্ট দিয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সামনের টেস্ট সিরিজে তাই দেখা যাবে না ২০০৭ থেকে ২০১৩ সালের মাঝে ‘পরিচিত’ হয়ে ওঠা সেই দৃশ্যটা- স্টেইনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিচ্ছেন হাফিজ!
২০০৭ সালের ২৬ জানুয়ারি কেপটাউন টেস্টে প্রথমবার হাফিজের বিরুদ্ধে বোলিং করেছিলেন স্টেইন। প্রথম বলে হাফিজ ফ্লিক করে চার মেরেছিলেন। 'সকাল দিনের আভাস দেয়'- এই প্রবাদটা মিথ্যে করে। হাফিজ এরপর সব ধরনের ফরম্যাট মিলিয়ে স্টেইনের মুখোমুখি হয়েছেন ২৮ বার, আউট হয়েছেন ১৫ বার। এর মধ্যে সাতবার উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন, ১০ বার পেরুতে পারেননি ১০।
টেস্টে না হলেও ওয়ানডেতে অবশ্য ফিরে আসতেই পারে স্টেইন-হাফিজের একপেশে দ্বৈরথটা!
জিমির শো-কেসের দামী ট্রফি
টেস্টে শচীন টেন্ডুলকার ব্যাটিংয়ে নেমেছেন ৩২৯ বার। আউট হয়েছেন ২৯৬ বার, এর মাঝে ২৮৭ বার তার উইকেট পেয়েছেন বোলাররা। তবে এই বিশাল ক্যারিয়ারে মাত্র চারজন বোলার টেন্ডুলকারের উইকেট পেয়েছেন চার বা এর বেশিবার। গ্লেন ম্যাকগ্রা ও জ্যাসন গিলেস্পির এই সৌভাগ্য হয়েছে ছয়বার করে, মুত্তিয়া মুরালিধরনের বলে টেন্ডুলকার আউট হয়েছেন আটবার। এ তালিকার সবার ওপরের নামটা একটু চমকজাগানিয়া- জেমস অ্যান্ডারসন! টেন্ডুলকার তার বলে মোট আউট হয়েছেন নয়বার- তিনবার এলবিডব্লিউ, তিনবার কট বিহাইন্ড, দুইবার করে বোল্ড ও স্লিপে ক্যাচ।
টেন্ডুলকারের সঙ্গে যার তুলনা হয়, সেই কোহলিকেও একসময় প্রিয় শিকার বানিয়ে ফেলেছিলেন অ্যান্ডারসন। ২০১৪ সালে ভারতের ইংল্যান্ড সফরে নাকি পরিচিত দৃশ্য ছিল এমন- ভারতের দ্বিতীয় উইকেট পড়লে মাঠের যেখানেই থাকুন না কেন, অ্যান্ডারসন বোলিংয়ের জন্য ওয়ার্ম-আপ শুরু করে দিতেন! কোহলি সে সিরিজে উইকেটের পেছনে অ্যান্ডারসনের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন চারবার। তবে এরপর সেই জুজু কাটিয়েছেন কোহলি, ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের ভারত সফরে অ্যান্ডারসনকে উইকেট দেননি একবারও।