মোস্তাফিজের শেষ ওভারের জাদুতে 'উত্তরের রাজা' রাজশাহী
রাজশাহী কিংস ১৩৫/৮, ২০ ওভার (জাকির ৪২*, হাফিজ ২৬, রেজা ২/১৭, মাশরাফি ২/২২)
রংপুর রাইডার্স ১৩০/৬, ২০ ওভার (রুশো ৪৪*, মিঠুন ৩০, হাফিজ ২/২২, রাব্বি ২/২২)
রাজশাহী ৫ রানে জয়ী
শেষ ওভারে ৯ (৮) রানের সম্বল নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের দারুণ বোলিংয়ে উত্তরবঙ্গের আরেক দল রংপুরকে ৫ রানে হারিয়েছে রাজশাহী। ১৩৬ রানের লক্ষ্য ছিল রংপুরের, তবে রাজশাহীর বোলারদের তোপে তার আগেই থামতে হয়েছে তাদের। মোস্তাফিজ, ইসুরু উদানা ও মোহাম্মদ হাফিজ মোট ১২ ওভারে দিয়েছেন ৬১ রান, নিয়েছেন ৩ উইকেট। কম যাননি মিরাজও, ৪ ওভারে তিনি দিয়েছেন ২২ রান।
শেষ ওভারে ১০ রান দরকার ছিল রাজশাহীর। প্রথম বলে রাইলি রুশো সিঙ্গেল নিলেন, এরপর স্কোর ‘ঠিক’ করে দেখানো হলো শেষ ৫ বলে রংপুরের দরকার ৮ রান। এরপর মোস্তাফিজ দেখালেন জাদু, পরপর তিন বল ডট। শর্ট অফ লেংথ থেকে শুরু করে তিনি গেলেন ফুললেংথ, প্রতিবার ব্যাট চালিয়েও ব্যর্থ হলেন ফরহাদ রেজা। পঞ্চম বলে বাই থেকে ১ রান এলো, তবে শেষ বলে মিরাকল ঘটাতে পারলেন না ৪৫ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত রুশো। তিনি নিতে পারলেন শুধু সিঙ্গেল, উল্লাসে মাতলো রাজশাহী।
১৩৫ রানের সম্বল নিয়েও শুরুটা আশাজাগানিয়া ছিল রাজশাহীর। ওপেনিংয়ে নামা মাশরাফি খেয়েছেন গোল্ডেন ডাক, রাব্বির লাফিয়ে ওঠা বলে ব্যাট লাগিয়ে এজড হয়েছেন তিনি। গেইল ঝড় থামিয়েছেন রাব্বি, তৃতীয় ওভারের খেরোখাতা ছিল এমন- ছয়, চার, চার, ডট, ছয়, উইকেট (লো-ফুলটসে মিড-অনে ক্যাচ)।
মিরাজকে ছয় মেরে ইনিংস শুরু করেছিলেন মিঠুন, পরে আরাফাত সানিকে মেরেছেন আরেকটি। তবে রাইলি রুশোর সঙ্গে ৪০ রানের জুটিতে অবশ্য ছিলেন সুস্থির। হাফিজকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারতে গিয়ে লং-অফে এভান্সের সামনে ডাইভ দিয়ে ধরা দারুণ ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে করেছেন ৩১ বলে ৩০ রান।
এর মাঝে পাঁচ রানের পেনাল্টি গুণেছে রাজশাহী, মিরাজের 'ফেক ফিল্ডিং'-য়ের দায়ে। শেষ ওভারের আগে যেটাকে মনে হচ্ছিল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণী। এরপর হাওয়েল হয়েছেন রান-আউট, ক্যাচ মিস করেছিলেন হাফিজ, তবে মুমিনুলে দারুণ থ্রোতে স্ট্রাইকিং প্রান্তে রাজশাহী হয়েছে সফল। নাহিদুল ইসলামকে নিয়ে ৩৪ রানের জুটিতে ঠিক পথেই রংপুরকে রেখেছিলেন রুশো।
শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২২, ১৮তম ওভারে মোস্তাফিজ দিলেন ৪ রান। এরপরের ওভারে উদানা নাহিদুলকে ফেরালেন, অবশ্য দিলেন ৮ রান। শেষ ওভারে মোস্তাফিজের জন্য রাখলেন ৯, যেটা যথেষ্টর চেয়েও বেশি প্রমাণ করলেন এই বাঁহাতি।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে উইকেট হারিয়ে আরেকবার চাপে পড়েছে রাজশাহী। পাওয়ারপ্লেতে তারা হারিয়েছে মিরাজ, মুমিনুল ও সৌম্যর উইকেট। মাশরাফি এর মাঝে নিয়েছেন মিরাজ ও সৌম্যকে, ফ্লিক করতে গিয়ে শফিউলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়েছেন মিরাজ, নিজের মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই। স্লোয়ারে বলের পিচিংয়ে যেতে পারেননি সৌম্য, তুলে মারার চেষ্টায় ধরা পড়েছেন লং-অনে, ১৩ বলে ১৮ রান করে, এর আগে মেরেছিলেন একটি ছয়। সোহাগ গাজির ফ্লাইট বুঝতে না পারা মুমিনুল, ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে মারতে গিয়ে হয়েছেন স্টাম্পড।
জাকির হাসানের সঙ্গে মোহাম্মদ হাফিজের জুটি আগলে রাখার চেষ্টা করেছিল ইনিংস, দুজনের জুটি ফিফটিও ছাড়িয়েছে। তবে গিয়ার বদলানোর সুযোগ পাননি হাফিজ, ২৮ বলে ২৬ রান করে বোপারার মিড-অন থেকে সরাসরি থ্রোতে হয়েছেন রান-আউট। ৭ বলে ২ রান করে ফরহাদ রেজাকে ফ্লিক করতে গিয়ে মিডউইকেটে লরি এভান্সের ক্যাচ দেওয়াতে দুর্দশা বেড়েছে রাজশাহীর।
৪৮ বল ধরে বাউন্ডারি খরা ছিল রাজশাহীর ইনিংসে, ফরহাদ রেজাকে ছয় মেরে সেটা কাটিয়েছেন রায়ান টেন ডেসকাটে। তবে আরেকটি সরাসরি থ্রোয়ের রান-আউট ভুগিয়েছে রাজশাহীকে, এবার ফিল্ডার ফরহাদ রেজা। ১০ বলে ১৪ রান করে ফিরেছেন ডেসকাটে।
ইসুরু উদানা ও আরাফাত সানিকে ফিরিয়েছেন যথাক্রমে ফরহাদ ও শফিউল। একপ্রান্তে ছিলেন জাকির, তবে গিয়ার বদলাতে পারেননি তিনি। তার ৩৬ বলে ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস রাজশাহীকে নিয়ে যেতে পেরেছে ১৩৫ রান পর্যন্ত।
রাজশাহীর বোলাররা এরপর দেখিয়েছেন ঝলক। শেষে গিয়ে মোস্তাফিজ দেখিয়েছেন জাদু।