• সিরি আ
  • " />

     

    জয় দিয়েই 'অ্যাটলেটিকো মহড়া' সেরে নিল জুভেন্টাস

    জয় দিয়েই 'অ্যাটলেটিকো মহড়া' সেরে নিল জুভেন্টাস    

    গতকালের মাদ্রিদ ডার্বির পর এই সপ্তাহে ইউরোপিয়ান ফুটবলের হটকেকই যেন হয়ে গিয়েছিল 'ভিএআর'। অন্যান্য দলগুলো যেখানে দেখেছে ভিডিও রেফারির নামক মুদ্রার দুপিঠই, সেখানে নিজেদের ভাগ্যবানই মনে করতে পারে জুভেন্টাস। 'ভিএআর'-এর কারণে এই মৌসুমে সিরি আ-তে বেশ কয়েকবারই জয় নিয়ে ফিরতে পেরেছে তারা। তবে আজ সাসুউলোর মাঠে ভিডিও রেফারির দুপিঠই দেখল তুরিনের বুড়িরা। 'ভিএআর'-এর সাহায্যে পেনাল্টি বঞ্চিত হয়েছে সাসুউলো, আবার দ্বিতীয়ার্ধে একই কারণে পেনাল্টি পায়নি জুভেন্টাসও। তবে  জয় ঠিকই ছিনিয়ে এনেছে তারা। গতকাল শনিবার নাপোলি ড্র করায় জুভেন্টাসের সামনে সুযোগ এসেছিল শীর্ষস্থামটা আরও সুসংহত করার। সাসুউলোর মাঠে ৩-০ গোলে জিতে সুযোগটা ঠিকই কাজে লাগিয়েছে তারা। আবারও জয়ের নায়ক সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদই। গোল করেছেন, করিয়েছেন। ফাবিও কোয়াগলিয়ারেলাকে হটিয়ে সিরি আ-র শীর্ষ গোলদাতা এখন তিনিই (১৭)। ২৩ ম্যাচে ৬৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থাকল জুভেন্টাস।

    স্কোরলাইন দেখে অবশ্য বোঝার অবকাশ নেই, ম্যাচটা আসলে ঠিক কতটা কঠিন ছিল মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির দলের জন্য। ম্যাচে থিতু হওয়ার আগেই পেনাল্টির জোর আবেদন করে বসে জুভেন্টাস। ৫ মিনিটে ড্যানিয়েল রুগানির ভুলে গোলরক্ষক ওয়েচেক শেজনিকে একা পেয়ে যান সাসুউলো স্ট্রাইকার ডমিনিকো বেরার্দি। শেজনিকে ড্রিবল করার সময় ডিবক্সে পড়ে যান বেরার্দি। পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল হাত লাগালেও বেরার্দিকে ঠিকই ফাউল করেছিলেন শেজনি। কিন্তু কিছুটা বিস্ময়করভাবে 'ভিএআর'-ও অটুট থাকে মূল রেফারির সিদ্ধান্তে। ম্যাচের বাকিটা সময় তাই দুয়োই শুনতে হয়েছে শেজনি এবং রেফারিকে। ম্যাচের শুরুতেই এমন বিতর্ক কাঁপিয়ে দিয়েছিল জুভেন্টাসকেও। মাঝমাঠের দখলটা একেবারেই নিতে পারেননি ব্লেইজ মাতুইদি, মিরালেম পিয়ানিচরা। রোনালদোদের সাথে মাঝমাঠের বোঝাপড়ার অভাবে জুভেন্টাসের ওপর চড়াও হয় সাসুউলো। কিন্তু গোলের দেখা আর পাওয়া হয়নি। ১২ মিনিটে ডিবক্সের প্রায় ২৫ গজ থেকে বেরার্দির আগুনে শট ফিরিয়ে দেন শেজনি। ২০ কিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পায় সাসুউলো, এবারও দলকে বাঁচিয়ে দেন শেজনি।

     

     

    দলের এমন বেহাল দশা দেখে ৪-৩-৩ থেকে সরে এসে দলকে ৪-৪-২ ফর্মেশনে খেলান আলেগ্রি। লাভ হয় তাতে। মাঝমাঠে একজন বেশি পেয়ে ম্যাচে ফেরে মাতুইদিরা। ২৩ মিনিটে লিডটাও নিয়ে নেয় তারা। অন্যপ্রান্তে রুগানির মতই ভুল করে বসেন সাসুউলোর কনসিগলি। বল পেয়েই জোরাল শট নেন রোনালদো। 'সিআর৭'-এর শট ফিরিয়ে দেন সাসুউলো গোলরক্ষক, কিন্তু ফিরতি বল জালে পাঠাতে ভুল করেননি স্যামি খেদিরা। এরপর থেকেই ম্যাচে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে আলেগ্রির দল। প্রেসিং করেও তুরিনের বুড়িদের তেমন অসুবিধায় ফেলতে পারছিল না সাসুউলো। ৩২ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন মারিও মানজুকিচ, কিন্তু রোনালদোর নিখুঁত ক্রসে তার হেড চলে যায় গোলের বাইরে দিয়ে। তবে প্রথমার্ধের শেষদিকে মানজুকিচের চেয়েও সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেন খেদিরা। ৪৫ মিনিটে ফেদেরিকো বার্নার্দেশির ক্রস থেকে ডিবক্সের একেবারে সামনে দাঁড়িয়েও শট বাইরে মারেন জার্মান মিডফিল্ডার। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন রোনালদো। খেদিরা পা না ছোঁয়ালে হয়ত বল জালে পাঠাতেন তিনিই। প্রথমার্ধের শেষে তাই রোনালদোর অসন্তোষ প্রকাশ ছিল দেখার মত।


    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও ব্যবধানের বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেছে জুভেন্টাস। ৪৯ মিনিটে খেদিরার মিসের রীতিমত 'কার্বন কপি' মিস করেন রুগানি। মিসের মহড়ার মাঝে অবশ্য ৫৩ মিনিটে বল জালে ঠিকই পাঠিয়েছিলেন রোনালদো। কিন্তু অফসাইডে বাতিল হয় গোলটি। সাসুউলো যেমন গোল করতে না পারার চড়ামূল্য দিয়েছিল, তেমনি ব্যবধান দ্বিগুণ করতে না পারার মাশুলটাও আরেকটু হলেই দিতে বসেছিল জুভেন্টাস। ৫৫ মিনিটে ডিবক্স থেকে বল ক্লিয়ার করতে এসে মিস করেন শেজনি। ফাঁকা পোস্ট পেয়ে বল নিয়ন্ত্রণে না এনেই শট নেন বেরার্দি। কিন্তু অল্পের জন্য বল চলে যায় গোলের বাইরে দিয়ে। কিন্তু তাতেও টনক নড়েনি জুভেন্টাসের। মিসের মহড়ার বৃত্ত থেকে যেন বেরুতেই পারছিল না তারা। ৬৩ মিনিটে আবারও গোলের সামনে থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি খেদিরা। প্রথমার্ধে 'ভিএআর'-এর এপিঠ দেখে থাকলে দ্বিতীয়ার্ধের ৬৯ মিনিটে অন্যপিঠটাও দেখে জুভেন্টাস। বার্নার্দেশির শট ডিবক্সে সাসুউলোর কনসিগলির হাতে লাগলেও পেনাল্টির বাঁশি দেননি রেফারি। সিদ্ধান্ত বদলাননি ভিডিও রেফারিও। এজন্য অবশ্য খুব একটা পুড়তে হয়নি তাদের। মিনিটখানেক পর পিয়ানিচের কর্ণারে হেড করে জয় নিশ্চিত করেন রোনালদো। টানা ১১ মৌসুমে ২০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি।

    গোলের পর নিজের সেলিব্রেশনের শেষে সতীর্থ পাউলো দিবালার 'গ্ল্যাডিয়েটর'-এর মত মুখভঙ্গি করেন রোনালদো। সময়টা ভাল যাচ্ছেনা দিবালার। জায়গা পাচ্ছেন না আলেগ্রির মূল একাদশে। সতীর্থকে হয়ত অনুপ্রাণিত করতেই এমনটা করেছিলেন রোনালদো। মুখে 'গ্ল্যাডিয়েটর'-এর ভিঙ্গি দেখিয়েই ডাগআউটে দিবালার দিকে উদ্দেশ্য করে হাত নাড়ান রোনালদো। ডাগআউট ছেড়ে উঠে এসে রোনালদোর প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন দিবালা। এই গোলের পরই মূলত ম্যাচে ফেরার ইচ্ছাশক্তিও হারিয়ে ফেলে সাসুউলো। প্রতি-আক্রমণে আরও কিছু সুযোগ পেয়েছিল জুভেন্টাস। কিন্তু কাজে লাগাতে অয়ারেনি সবগুলো। কিন্তু সাসুউলোর কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা বাকি ছিল তখনই। ৮৬ মিনিটে বদলি হিসেবে নেমে সেই কাজটাও করে ফেলেন এমরে চান। রোনালদোর পাস থেকে গোল করেন সাবেক লিভারপুল মিডফিল্ডার। আজলের জয়ে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলর প্রস্তুতিটাও সেরে নিল তুরিনের বুড়িরা।