• " />

     

    চার বছর পর এক টেস্ট খেলেই কেন অবসর নিয়েছিলেন আফ্রিদি?

    চার বছর পর এক টেস্ট খেলেই কেন অবসর নিয়েছিলেন আফ্রিদি?    

    ২০১০ সালে চার বছর পর টেস্টে ফিরেছিলেন শহীদ আফ্রিদি, তাকে দেওয়া হয়েছিল পাকিস্তানের অধিনায়কত্ব। তবে এক টেস্ট খেলেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি, ‘টেস্টে আর আগ্রহ পাচ্ছেন না’ বলে। তার সে সিদ্ধান্তে সে সময় সমালোচনাও হয়েছিল অনেক। এরপরই পাকিস্তানের নেতৃত্ব পান সালমান বাট, যার হাত ধরে আসে স্পট ফিক্সিংয়ের বিষ। এবার আফ্রিদি বলছেন, ফিক্সিংয়ের ব্যাপারটা কাকতালীয়ভাবে টের পেয়েছিলেন তিনি, তবে ম্যানেজমেন্টকে জানানোর পরও তাদের নির্লিপ্ততায় সিস্টেমের ওপর ‘হতাশ হয়েই’ বিদায় বলেছিলেন টেস্ট ক্রিকেটকে। সদ্য প্রকাশিত আত্মজীবনী ‘গেম চেঞ্জার’-এ আফ্রিদি বলেছেন, কিভাবে সেই ইংলিশ গ্রীষ্মে পুরো ব্যাপারটা গোচরে এসেছিল তার। 

    সে বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ খেলেছিল পাকিস্তান, লাহোর আক্রমণের পর তখনও আরব আমিরাতে আবাস গড়েনি তারা। সে সফরের আগে পাকিস্তান গিয়েছিল শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপ খেলতে, ক্যারিবীয়তে ওয়ার্ল্ড টি-টোয়েন্টি খেলতে। শ্রীলঙ্কা সফরের সময় পাকিস্তান দলের সঙ্গে ছিলেন মাজহার মাজিদ, পরবর্তীতে স্পট-ফিক্সিংয়ের অন্যতম হোতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে বাটের এজেন্টও ছিলেন মাজিদ। 

    শ্রীলঙ্কা সফরেই মাজিদের ফোন পানিতে ফেলে দিয়েছিলেন তার ছেলে। সেটা ঠিক করাতে মাজিদ আশ্রয় নিয়েছিলেন লন্ডনে, যার কাছে ঠিক করাতে দিয়েছিলেন, তিনি আবার আফ্রিদির বন্ধুর বন্ধু। সেখান থেকেই পাকিস্তান ক্রিকেটারদের সঙ্গে আদান-প্রদান করা টেক্সটগুলো হাতে আসে আফ্রিদির। 

    “আমি যখন শ্রীলঙ্কায় মেসেজগুলো হাতে পেলাম, ওয়াকার ইউনিসকে দেখিয়েছিলাম, সে তখন আমাদের কোচ ছিল। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, সে ব্যাপারটা উপর মহলকে জানায়নি। ওয়াকার ও আমি দুজনই ভেবেছিলাম, ব্যাপারটা চলে যাবে, ক্রিকেটার ও মাজিদের মাঝে জোর হলে এটা ফন্দি আঁটার মতো কোনও কথাবার্তা। তবে সেসব মেসেজ যে আরও বড় কিছু ছিল, সেটা বিশ্ব কদিন পরেই জানতে পারে।” 

    এরপর ইংল্যান্ড সফরেও মাজিদকে পাকিস্তান ড্রেসিংরুমের আশেপাশে দেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন আফ্রিদি, “যারা কদিন পরই অভিযুক্ত হবে, সেসব ক্রিকেটারের সঙ্গে মাজিদ ও তার সঙ্গীদের দেখি আমি। ব্যাপারটা আমার কাছে সতর্কতা জাগানিয়া ছিল। টিম ম্যানেজার ইয়াওয়ার সাঈদকে তখন অফিশিয়ালি ব্যাপারটা জানাই, যাতে মাজিদকে ক্রিকেটারদের থেকে দূরে রাখা হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়েও দলের কেউ যাতে তাকে সহায়তা না করে, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলি। আমি টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক ছিলাম, আমার স্কোয়াডের পারফরম্যান্সের ওপর বিতর্ক আঘাত করতে পারতো।” 

    সাঈদকে মেসেজ এমনকি প্রিন্ট করে দেখিয়েছিলেন আফ্রিদি, তবে সে ব্যাপারে তিনি ভ্রূক্ষেপ করেননি বলে দাবি আফ্রিদির। “এ ব্যাপারে আমরা কী করতে পারি? বেশি কিছু না”, আফ্রিদির কথার জবাবে বলেছিলেন সাঈদ। এরপরও তাকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলেছিলেন বলে আত্মজীবনীতে বলেছেন আফ্রিদি। অবশ্য ২০১০ সালে স্পট-ফিক্সিংয়ের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর সাঈদ দাবি করেছিলেন, মাজিদের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল পাকিস্তান ক্রিকেটারদের। 

    “খোলাখুলি বলতে, আমার মনে হয় না ম্যানেজমেন্ট কোনও পাত্তা দিয়েছে। এটা কারও সমস্যা ছিল না যেন, কেউই তাই এগিয়ে আসেনি। হয়তো ম্যানেজমেন্ট এর ফলে যা হবে সেটা ভেবে ভয় পাচ্ছিল। হয়তো তারা সেসব ক্রিকেটারের ওপর বিনিয়োগ করছিল ভবিষ্যত তারকা বা অধিনায়ক হিসেবে। অথবা তাদের দেশ বা খেলার প্রতি কোনও সম্মান ছিল না, আমি আসলে বলতে পারবো না।” 

     

     

    “লর্ডসে প্রথম টেস্টের সময়ই আমার সন্দেহ হয়, পুরো ব্যাপারটা নিয়ে। পাকিস্তান ক্রিকেটের সমস্যাটা কী? আমাদের সবার সমস্যাটা কী ছিল? এরপরই আমি আমার মতো করে এর একটা শেষ টানি। ম্যাচের চতুর্থ দিনই আমি সালমান বাটকে বলি, সে দায়িত্ব নিয়ে নিতে পারে।

    “আমাদের রান ছিল ৬ উইকেটে ২২০ রান। মার্কাস নর্থ বোলিং করছিল, আমি তাকে সুইপ করতে গিয়ে ডিপে ক্যাচ দিয়েছিলাম। বল আকাশে থাকার সময়ই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমার সবকিছুর সঙ্গে ইতি ঘটে গেছে।

    “হয়তো সময়ের আগেই অবসর নিয়েছিলাম, তবে পুরো প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি। টিম ম্যানেজমেন্ট যা হচ্ছিল সেসব ব্যাপারকে পাত্তা দেয়নি, পুরো ব্যাপারটা বরং গড়িয়ে যেতে দিয়েছে। আমি নিজেরসহ সবার ওপরই হতাশ ও রাগান্বিত ছিলাম। এ কারণেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ শেষ না করেই পরিবারের কাছে ফিরেছিলাম। 

    “হ্যাঁ, খাতা-কলমে আমি হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।”