• বিশ্বকাপের ক্ল্যাসিক মুহুর্ত
  • " />

     

    ২০০৩ : ভুল, সবই ভুল

    ২০০৩ : ভুল, সবই ভুল    


    অঙ্ক পরীক্ষা শেষে প্রশ্নের সঙ্গে উত্তর মিলিয়েছেন তো? এরপর যদি দেখেন, একটা জানা জিনিস ভুল করে এসেছেন, তখন কেমন লাগে? সঙ্গে যদি সেই ভুলের জন্য আপনার পাশ-ফেইলের হিসাবটা এসে ভর করে, তখনকার অনুভূতিটা? ২০০৩ বিশ্বকাপে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুভূতি ছিল এর চেয়েও তিক্ত। 

    ১৯৯২, সিডনি- বৃষ্টির পর ১ বলে ২২ রানের অদ্ভুত সমীকরণ। ১৯৯৯, এজবাস্টন- সেমিফাইনালে নাটকীয় শেষ ওভারে অদ্ভুতুড়ে টাই। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকা বের করে অদ্ভুত সব উপায়, ২০০৩ সালের ডারবান এলো তারই ধারাবাহিকতায়। এবার বৃষ্টিও এলো, ম্যাচও হলো টাই। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা করে ফেললো হিসাবে গড়মিল। পরের রাউন্ডে যাওয়ার বদলে যা বিদায় করে দিল তাদের!  

    সুপার সিক্সে যেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কিংসমিডে ম্যাচটা জিততেই হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। মারভান আতাপাত্তুর দারুণ সেঞ্চুরি ও অরবিন্দ ডি সিলভার ৭৪ রানে শ্রীলঙ্কা তুললো ২৬৮ রান। হার্শেল গিবস ও গ্রায়েম স্মিথ মিলে রানতাড়ায় শুরুটা দারুণই করলেন। ৮৮ বলে ৭৩ রান করে ফিরলেন গিবস, পরের বলে বোয়েটা ডিপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়লো দক্ষিণ আফ্রিকা। 

    শন পোলক ও মার্ক বাউচারের ৬৩ রানের জুটি ম্যাচে ফেরালো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। পোলক ফেরার পর এলেন ল্যান্স ক্লুজনার, চার বছর আগে এজবাস্টন-টাই দিয়ে যিনি ঢুকে গেছেন ক্রিকেট মহাকাব্যে। তবে সেদিন ভুগছিলেন তিনি, প্রথম ৭ বলে রানের কলামটাই পূর্ণ করতে পারলেন না। ডারবানের আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম, বোলিংয়ে এলেন মুত্তিয়া মুরালিধরন, ৪৫তম ওভারটা করতে। 

    সে ওভারের আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ড্রেসিংরুম থেকে বার্তা গেল বাউচার-পোলকের কাছে, আর কোনও উইকেট না গেলে ৪৫ ওভার শেষ দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ জিততে প্রয়োজন ২২৯ রান। সে হিসেবে সে ওভারে লাগবে ১৩ রান। 



    প্রথম বলে বাউচার সিঙ্গেল নিয়ে দেওয়ার পর ক্লুজনার দিলেন দুটি ডট, এরপর ওয়াইড থেকে ৫ রান দিলেন মুরালিধরন। ক্লুজনার সিঙ্গেল নিয়ে দিলেন, বাউচার এরপর লং-অন দিয়ে উড়িয়ে মারলেন মুরালিধরনকে। দক্ষিণ আফ্রিকার রান ২৯৯। হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করলেন বাউচার, মিশন শেষের উল্লাসে। পরের বলটা মিডউইকেটে ঘোরালেন, সিঙ্গেলের চেষ্টা করলেন না। 

     

     

    ধারাভাষ্যে টনি গ্রেগ আগে থেকেই চিৎকার করছেন, বাউচারের ওই ছয়ের পর থেকেই। দক্ষিণ আফ্রিকার ২২৯ রান তাদের জয় নাকি টাই নিশ্চিত করলো, ধন্দে ছিলেন তারাও। গ্রেগ বাক্য শেষ করলেন, “ইজ ইট?” দিয়ে। এই প্রশ্নবোধকটাই ঠিক করে দিল যেন দক্ষিণ আফ্রিকার ভাগ্য। 

    আদতে জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল ২৩০ রান, ২২৯ হলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে হওয়ার কথা টাই। দক্ষিণ আফ্রিকা ভুল করে ফেলেছিল সে হিসাবেই। ৪৬তম ওভার করতে এসেছিলেন রাসেল আরনল্ড, তবে তার আগেই আম্পায়াররা কাভার ডেকে বন্ধ করে দেন খেলা। 

    একটু আগেই উল্লাসে মাতা বাউচারের চোখমুখে তখন অনিশ্চয়তা। শীঘ্রই সেটা পরিণত হলো হতাশায়। ঘরের মাটির বিশ্বকাপ থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা বিদায় নিল গ্রুপপর্বেই, অথচ হিসাবটা ঠিকঠাক করতে পারলে সেই ম্যাচটা ছিল তাদের হাতের মুঠোয়। 

    অধিনায়ক শন পোলক যেন অধিক শোকে হয়ে গেলেন দার্শনিক, “আপনি সব ‘যদি’, ‘কিন্তু’র দিকে তাকাতে পারেন, তবে সেসবে আর কিছু যায় আসবে না’!

    এরপর কী ঘটেছিল- 
    দক্ষিণ আফ্রিকার ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছিল অধিনায়ক শন পোলককে, সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাকে। শ্রীলঙ্কা গিয়েছিল সেমিফাইনালে, সেখানে তারা হেরেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে।