অতিরিক্ত সময়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে নেশনস লিগের ফাইনালে নেদারল্যান্ডস
ইংল্যান্ড, সেমিফাইনাল, প্রথমার্ধে লিড নেওয়ার উল্লাস, দ্বিতীয়ার্ধে লিড হারানোর হতাশা, আশা জাগিয়েও অতিরিক্ত সময়ে বিদায়। পুরো চিত্রনাট্য বেশ পরিচিত মনে হওয়ারই কথা। গত বছরই রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ইংলিশদের পথচলাটা ছিল ঠিক এমন। বছর ঘুরে আবারও কোনও টুর্নামেন্টের শেষ চারে ইংলিশরা, এবার ইউয়েফা নেশনস লিগে প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস। কিন্তু ফলাফল থাকল একই, আবারও শিরোপার আশা জাগিয়ে বিদায় নিল ইংল্যান্ড। পিছিয়ে পড়েও ৩-১ গোলের জয়ে ইংলিশদের বিদায় করে ১০ জুন নেশনস লিগের ফাইনালে পর্তুগালের মুখোমুখি হবে নেদারল্যান্ডস।
১৯৯৬ সালের ইউরোতে শেষবার প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড-নেদারল্যান্ডস। ৪-১ গোলের বড় জয় পেয়েছিল ইংলিশরা, মূল একাদশে ছিলেন ‘থ্রি লায়ন্স’দের বর্তমান ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট। প্রায় ২ যুগ পর আজ ডাচদের বিপক্ষে ‘৯৬-এর সুখস্মৃতিই অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছিল সাউথগেট এবং ইংল্যান্ডকে। কিন্তু এবার আর শেষ হাসি হাসা হয়নি তাদের। এজন্য অবশ্য ডাচদের যতটা কৃতিত্ব, তারচেয়েও বেশি হয়তো ইংলিশ রক্ষণভাগের ‘আত্মাহুতি’। অতিরিক্ত সময়ে জন স্টোনস এবং রস বার্কলির শিশুতোষ ভুলেই শেষ হয়ে গেছে ইংলিশদের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন।
৯৭ মিনিটে রক্ষণে বল হারান স্টোনস, প্রথম টাচেই শট নেন ডাচ ফরোয়ার্ড মেম্ফিস ডিপাই। সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ডের শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড, কিন্তু ফিরতি বলে কুইন্স প্রমিসের শট ক্লিয়ার করতে যেয়ে বল নিজের জালেই ঠেলে দেন রাইটব্যাক কাইল ওয়াকার। ইংলিশ রক্ষণের ভুলে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হয় ‘অরেঞ্জ’দের। হাতে তখনও প্রায় মিনিট বিশেক। সমতায় ফেরার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন হ্যারি কেইনরা। কিন্তু তখনই আবারও নিজেদের পায়ে কুড়াল মেরে বসে ইংলিশরা। বার্কলির ভুলে ডিবক্সে বল পেয়ে যান ডিপাই। পিকফোর্ডকে এগিয়ে আসতে দেখে প্রমিসকে পাস বাড়ান ডিপাই। ফাঁকা পোস্ট পেয়ে এবার ঠিকই গোল পেয়ে যান প্রমিস। আর তাতেই লেখা হয়ে যায় ইংলিশদের বিদায়গাঁথা।
শেষের মত শুরুটাও তেমন আশানুরূপ না হলেও লিড ঠিকই নিয়েছিল ইংলিশরা। প্রথমার্ধে ভার্জিল ভ্যান ডাইক এবং মাথিয়াস ডি লিটের সামনে বেশ বিবর্ণ ছিলেন স্টার্লিং-রাশফোর্ড-সানচোরা। কিন্তু একাধিক গোছানো আক্রমণের পরও গোলের সামনে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে লিড নেওয়ার সুযোগ হারিয়েছে রোনাল্ড কোম্যানের দল। নিজেদের ভুলে যেমন লিড নেওয়া হয়নি ডাচদের, তেমনি তাদের ভুলেই এগিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। যাকে দলে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে পুরো ইউরোপ, সেই ডি লিটের ভুলেই ৩১ মিনিটে পেনাল্টি পায় ইংল্যান্ড। বল হারিয়ে ডিবক্সে রাশফোর্ডকে ফেলে দেন আয়াক্স অধিনায়ক, ১২ গজ থেকে বার্সা গোলরক্ষক জ্যাসপার সিলিসেনকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি রাশফোর্ড। লিড নেওয়ার পর থেকেই স্বরূপে ফেরে ইংল্যান্ড। ৫৩ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণের দারুণ সুযোগও পেয়েছিল তারা। কিন্তু হেডে সিলিসেনকে পরাস্ত করতে পারেননি সানচো। ম্যাচে ফিরতে ডনি ভ্যান ডি বিক এবং কুইন্সে প্রমিসকে নামিয়ে দেন কোম্যান, ফলাফলটাও আসে হাতেনাতে।
৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে হেডে দলকে সমতায় ফিরিয়ে প্রথমার্ধের ভুলের শাপমোচন করেন ডি লিট। সমতায় ফেরার মিনিট পাঁচেক পরই লিড নিতে পারত ডাচরা। কিন্তু গোলের একেবারে সামনে থেকেও শট বাইরে মারেন ডি বিক। প্রথমার্ধে গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারার চড়া মূল্য দিতে হয়েছিল নেদারল্যান্ডসকে। দ্বিতীয়ার্ধে আরেকটু হলেই একই পরিণতি বরণ করে নিতে হত তাদের, কিন্তু এবার ভাগ্যের জোরে বেঁচে যান ভ্যান ডাইকরা। ৮৩ মিনিটে দুর্দান্ত এক দলগত প্রচেষ্টায় সিলিসেনকে পরাস্ত করেন জেসি লিনগার্ড। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, গোলের সময় অফসাইডে ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফরোয়ার্ড। 'ভিএআর'-এর শরণাপন্ন হয়ে সিদ্ধান্ত বদলান রেফারি।
‘ভিএআর’ নাটক শেষ হয়নি তখনও। ৮৭ মিনিটে মেম্ফিস ডিপায়ের ক্রস ইংলিশ লেফটব্যাক বেন চিলওয়েলের হাতে লাগা নিয়ে বিতর্ক হলে আবারও ভিডিও রেফারির দ্বারস্থ হন রেফারি, কিন্তু এবার সিদ্ধান্ত যায় গ্যারেথ সাউথগেটের দলের পক্ষেই। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ের একেবারে শেষদিকে আরেকটু হলেই জয় ছিনিয়ে আনত ইংল্যান্ড, কিন্তু বাঁ-প্রান্ত থেকে স্টার্লিংয়ের চমৎকার বাঁকানো শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে। শেষ পর্যন্ত হতাশা নিয়েই বিদায় নিতে হয়েছিল ইংলিশদের। ‘৬৬-এর পর বৈশ্বিক কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল ‘থ্রি লায়ন্স’দের। অন্যদিকে ২০১০-এর পর কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলবে ডাচরা। গত বছরের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে না পারার বছরখানেকের মাথায়ই এক ফাইনাল- ডাচ ফুটবলে উন্নতি গ্রাফটা যেন পূর্ণতা পেল আজ।