• বিশ্বকাপ বাছাই
  • " />

     

    ঘরের মাঠে ড্র করে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূল পর্বে বাংলাদেশ

    ঘরের মাঠে ড্র করে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূল পর্বে বাংলাদেশ    

    বাংলাদেশের  দরকার ছিল হার এড়ানো। পুরো ম্যাচে জেতার সুযোগও বারবার এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। তবে সেসব কাজে না লাগিয়ে, কঠিন পথটাই বেছে নিয়েছিলেন জামাল, মাহবুবরা। গোল করেনি বাংলাদেশ, গোল করতে দেয়নি লাওসকেও। প্রথম লেগে রবিউল হাসানের করা ওই গোলেই তাই টাই নির্ধারণ হলো। দুই লেগ মিলিয়ে লাওসকে হারিয়ে অবশ্য পুরস্কারটা আরও বড় পেল বাংলাদেশ। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ২০২৩ এশিয়া কাপের মূল বাছাই পর্বে জায়গা করে নিয়েছে লাল সবুজের দল।  

    এশিয়ার র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ ৩৪ দল আগে থেকেই ছিল মূল বাছাইপর্বে। এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরও ৬ দল। তার একটি বাংলাদেশ। ৪০ দেশকে মোট ৮ গ্রুপে ভাগ করে শুরু হবে বিশ্বকাপ ২০২২ বাছাই পর্ব। আপাতত তাই আগামী দুই বছর বাংলাদেশকে আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে না। আর হেরে একরকম নির্বাসনে পড়তে হচ্ছে লাওসকে। আগামী অন্তত দুই বছর এএফসির ফিক্সচারে কোনো খেলা নেই তাদের। হেরে গেলে বাংলাদেশকে পড়তে হত এই গ্যাড়াকলে। তাই বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গোলশূন্য ড্রটাই যেন জয়ের চেয়েও বেশি আনন্দের হয়ে এসেছে দেশের ফুটবলে।


    আরও পড়ুনঃ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা?




    প্রথমার্ধ আর দ্বিতীয়ার্ধ মিলিয়ে অন্তত চারটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশ। যার দুইটি পেয়েছিলেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। দুটোই প্রথমার্ধে। তবে একবারও সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি তার। শুরুটা অবশ্য নড়বড়ে ছিল বাংলাদেশ গোলরক্ষকের জন্য। লাওস সেভাবে আক্রমণের ঢেউ তোলেনি, তবে গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা বলের গ্রিপ পাচ্ছিলেন না ঠিকঠাক। তবে ২৪ মিনিটে ইয়াসিন খানের ব্যাক পাস আরেকটু হলেই কপাল পোড়াতে বাংলাদেশের। তখন অবশ্য এগিয়ে গিয়ে বল ক্লিয়ার করেছেন। একপ্রান্তে যখন রানা কিছুটা থিতু হয়েছেন, অন্যপ্রান্তে লাওস গোলরক্ষক জায়াসাভাথ ততোক্ষণে পথ হারিয়েছেন। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে জীবনকেই উপহার দিয়ে দিয়েছিলেন। গোলের সামনে ছিল না কেউই, জীবন তখন ডিবক্সের ডান দিক থেকে মেরেছেন বাইরে দিয়ে।  

    ঘরের মাঠেও সেটপিস ছিল বাংলাদেশের টোটকা। এদিন লং থ্রো গুলো নিয়েছেন একাদশে নামা রবিউল হাসান। দুই পরিবর্তন এনেছিলেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। মামুনুল ইসলামও ফিরেছিলেন। তবে রবিউল যতখানি উজ্জ্বল ছিলেন, মামুনুল তার তুলনায় অনেকটাই ছিলেন ধূসর। ৩০ মিনিটে রবিউলের লং থ্রো ঠিকমতো মাথায় লাগাতে পারলে তখনই হয়ত এগিয়ে যেত বাংলাদেশ। তবে ওপেন প্লে থেকেও সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের। ৩৮ মিনিটে রবিউল এবার মিডফিল্ড থেকে লং বল পাঠিয়েছিলেন জীবনের উদ্দেশ্যে। এগিয়ে আসা লাওস গোলরক্ষককে আরও একবার বাঁচিয়ে দিয়েছেন জীবন। তখনও শট মেরেছেন বাইরে দিয়ে।

     

     

    প্রথমার্ধে লাওস সেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠেনি। দ্বিতীয়ার্ধেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি তারা। তবে বারবার মাথায় হাত পড়েছে মাঠে উপস্থিত হাজার ১২ দর্শকের। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পরিবর্তন এনেছিলেন জেমি ডে। বিপলুর জায়গায় নেমেছিলেন ইব্রাহিম। নেমেই দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি। ডানদিক থেকে ক্রস করেছিলেন সিক্স ইয়ার্ড বক্সের একেবারে সামনে থাকা জীবনের কাছে। হেডটা লক্ষ্যে রাখতে পারলেই হয়ত গোল হয়ে যেত, কিন্তু তখনও আরেকবার ব্যর্থ জীবন। ইব্রাহিম নিজেও অবশ্য প্রায় একই রকম সুবর্ন সুযোগ নষ্ট করেছেন খেলা শেষের দুই মিনিট আগে। আরেক বদলি মাহবুবুর রহমান সুফিল বামদিক থেকে দারুণ এক ক্রস করেছিলেন, জীবনের মতো প্রায় একই জায়গায় ছিলেন ইব্রাহিম। তিনিও হেড করেছেন বাইরে দিয়ে।

    এর আগে জীবনের একটি লে অফ থেকে সুফিলও খেলা বদলে দিতে পারতেন। কিন্তু সেটাও হয়নি। দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে অনুমিতভাবেই ম্যাচে ফিরতে আক্রমণে জান প্রাণ ঢেলে দিয়েছে লাওস। কিন্তু রক্ষণে মনোযোগী হয়ে আর পথ হারাতে হয়নি বাংলাদেশকে। ম্যাচ শেষে তাই কোচ জেমি বলছেন, আজকের ম্যাচে কী হয়েছে, কী হতে পারত, কী হয়নি এসব নিয়ে এখন মাথা ঘামানোর দরকার নেই। শেষ কবে বাংলাদেশ টানা তিন ম্যাচ জিতেছে সেটাও জানতে চাইলেন বাকিদের কাছে। জবাব পাননি জেমি ডে। কিন্তু এক বছর আগেও যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূলপর্বে খেলবে সেই স্বপ্নই কেউ দেখতে পারত না, সেটা মনে করিয়ে দিয়েছেন ঠিকই। এমন এক জয়ের পর তো সেসব দিনের কথা মনে করে একটু স্বস্তি খুঁজে পাওয়াই যায়!  

    একাদশ
    আশরাফুল ইসলাম রানা, রহমত মিয়া, ইয়াসিন খান, টুটুল হোসেন বাদশা, বিশ্বনাথ ঘোষ, জামাল ভূঁইয়া, মামুনুল ইসলাম, বিপলু আহমেদ, মাশুক মিয়া জনি, রবিউল হাসান, নাবিব নেওয়াজ জীবন