• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    কুতিনিয়োর জোড়া গোলে ব্রাজিলের স্বস্তির শুরু

    কুতিনিয়োর জোড়া গোলে ব্রাজিলের স্বস্তির শুরু    

    নেইমারের অনুপস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল ফিলিপ কুতিনিয়োর। কোপা আমেরিকার একেবারে শুরুর ম্যাচেই দায়িত্বটা আপন করে নিলেন তিনি। বলিভিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ 'এ' এর ম্যাচে গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর খানিকটা অস্বস্তি ভর করেছিল সাও পাওলোতে। এরপর চার মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করে ব্রাজিলকে স্বস্তি এনে দিয়েছিলেন কুতিনিয়ো। শেষদিকে বদলি এভারটন করেছেন আরও এক গোল। বলিভিয়া ৩-০ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকা শুরু করেছে ব্রাজিল।

    ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকা উপলক্ষ্যে প্রথম কোপা জয়ী ব্রাজিল দলের সম্মানে সেই আমলের সাদা জার্সি ফেরত এনেছিল ব্রাজিল। ১৯৫০  বিশ্বকাপে মারাকানাজো এর পর রীতিমত ক্যাম্পেইন করে সাদা জার্সি বিলুপ্ত করেছিল ব্রাজিলিয়ানরা। তখন থেকেই হলুদ ব্রাজিলের জার্সি। ৬৯ বছর সাদা জার্সিটি ছিল ব্রাজিলের জাদুঘরেই। বলিভিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই সেই জার্সি পরে মাঠে নেমে আরও একবার ধন্ধে পড়ে গিয়েছিল ব্রাজিল।

    লাতিন আমেরিকার দলগুলোর ভেতর সবচেয়ে পেছনে থেকে কোপায় খেলছে বলিভিয়া। শেষ ১৬ ম্যাচে তাদের জয় একটি। আর গত বিশ্বকাপের পর থেকেই এক ম্যাচও  হারেনি ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে তিতের দলের জয় নিয়ে সংশয় ছিল না তাই। তবে সেই জয়টা শেষ পর্যন্ত যতখানি সহজ হওয়ার কথা ছিল হয়েছে তার চেয়ে কিছুটা কঠিন। কারণ বিরতির সময় গোলশুন্য থেকেই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল ব্রাজিলকে।

    এরপর ৪৯ মিনিটে ব্রাজিলের কপাল খোলে পেনাল্টি থেকে। ডিবক্সের ভেতর ডানদিকে রিচার্লিসন ক্রস করার চেষ্টা করেছিলেন। আর সেটা ব্লক করতে গিয়েছিলেন বলিভিয়া ডিফেন্ডার আদ্রিয়ান জুসিয়ানো। বল তার পায়ে লেগে পরে আবার হাতে লাগে। আর্জেন্টাইন রেফারি নেস্তর পিতানা পরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে বাজান পেনাল্টির বাঁশি। ফিফার নতুন নিয়ম অনুযায়ী ডিবক্সের ভেতর প্রতিপক্ষের হাতে বল লাগলেই এখন থেকে পেনাল্টি পেয়ে যাবে অ্যাটাকিং দল। নতুন আইন অনুযায়ী তাই প্রাপ্যই ছিল ব্রাজিলের পেনাল্টি। ডানদিকে বটম কর্নারে বল জড়িয়ে স্পটকিক থেকে গোল করে কুতিনিয়ো এগিয়ে দেন ব্রাজিলকে।

    বলিভিয়ার বিপক্ষে তিতে ভরসা রেখেছিলেন রবার্তো ফিরমিনোর ওপর। গ্যাব্রিয়েল হেসুস নেমেছেন পরে। ৫৩ মিনিটে ফিরমিনো পরের গোলে অবদান রেখেছেন। সাবেক দুই লিভারপুল সতীর্থ মিলে জয় নিশ্চিত করেছেন ব্রাজিলের। ডিবক্সের ভেতর ডানদিক থেকে ফিরমিনো ক্রস করেছেন সিক্স ইয়ার্ড বক্সের ভেতর। গোল থেকে কয়েক ফুট দূরে থাকা কুতিনিয়ো এরপর সহজ হেডে গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।

    প্রথমার্ধে অবশ্য সুযোগ তৈরি নিয়ে ভাবতে হয়নি ব্রাজিলকে। প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল সেলেসাওরা। তবে ১০ মিনিটে থিয়াগো সিলভা প্রথম ভালো সুযোগটি পেয়েছিলেন কর্নার থেকে। লাফিয়ে উঠে হেড করেছিলেন এ সেন্টারব্যাক, তবে তখন অল্পের জন্য মিস করেন লক্ষ্য। এরপর রিচার্লিসন একবার বলিভিয়ার গোলরক্ষক কার্লোস লাম্পের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ডিবক্সের বাইরে। তখনও ফাঁকা বারে গোলে শট করতে পারেননি তিনি। তবে ব্রাজিলের বাকিদের চেয়ে রিচার্লিসনই ছিলেন বেশি উজ্জ্বল। পুরো খেলার নিয়ন্ত্রণ ব্রাজিলের কাছে থাকলেও অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছিল ব্রাজিলের আক্রমণগুলো। লাম্পেকেও এরপর আর পরীক্ষা দিতে হয়নি প্রথমার্ধে। আর বলিভিয়া রক্ষণে আরও মনযোগী হয়ে দারুণ কিছুর স্বপ্ন দেখছিল বিরতির সময়েও।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আক্রমণে উঠে এরপর কাঙ্ক্ষিত ফল পায় ব্রাজিল।  পেনাল্টিও আসে সেখান থেকেই। দুই গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর অবশ্য ব্রাজিলের জয় নিয়ে আর কোনো সন্দেহ ছিল না। তিতেও তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাকিদের বাজিয়ে দেখেছেন। ফিরমিনো পুরো ম্যাচে গোলে শট নিতে পারেননি, বেশিরভাগ সময় সুযোগ তৈরিতে ব্যস্ত ছিলেন। মিডফিল্ডে সৃজনশীলতার অভাব আরও একবার ভুগিয়েছে ব্রাজিলকে। ইনজুরির কারণে শেষ মুহুর্তে বাদ পড়েছিলেন আর্থার মেলো। ব্রাজিলের মিডফিল্ডে ফার্নান্দিনহোর সঙ্গে নেমেছিলেন কাসেমিরো।

    ৬৫ মিনিটে তাকে উঠিয়ে গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে নামান ব্রাজিল কোচ। তবে ৮১ মিনিটে তিতের পরিবর্তনটা প্রভাব রেখেছে ম্যাচে। গ্রেমিওর ২৩ বছর বয়সী স্ট্রাইকার মাঠে নেমেই দুর্দান্ত এক গোল করেছেন। ৮৫ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির কোণাকুণি শটে করা এভারটনের গোলটি টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা হয়ে যেতে পারে। গোলের আগাগোড়া কৃতিত্বই এভারটনের। ডানদিকে বল পেয়ে বলিভিয়ার দুইজন ডিফেন্ডারকে কাট করে ঢুকে পড়েছিলেন ভেতরের দিকে। এরপর ডান পায়ে নিয়েছেন দারুণ এক শট। সাও পাওলোতে শেষটা তাই মনমতোই হয়েছে ব্রাজিলিয়ানদের।

    ১৯ তারিখ এল সালভাদোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ভেনেজুয়েলার মুখোমুখি হবে ব্রাজিল।

    ব্রাজিল একাদশ
    অ্যালিসন, দানি আলভেজ, থিয়াগো সিলভা, মার্কিনহোস, ফিলিপে লুইস, কাসেমিরো, ফার্নান্দিনহো, ফিলিপ কুতিনিয়ো, ডেভিড নেরেস, রবার্তো ফিরমিনো, রিচার্লিসন