• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    কোপা আমেরিকার জন্য কতটা প্রস্তুত ব্রাজিল?

    কোপা আমেরিকার জন্য কতটা প্রস্তুত ব্রাজিল?    

    আমেরিকার মাটিতে আগামী ২১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে কোপা আমেরিকা। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মোট ১৬টি দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিতব্য এই আসরের চতুর্থ দিনে মাঠে নামবে বর্তমান রানার্সআপ ব্রাজিল। তবে কোপা আমেরিকার আগে আর কোন আন্তর্জাতিক বিরতি না থাকায় প্রস্তুতির জন্য দলকে একসাথে পাচ্ছেন না কোচ ডরিভাল জুনিয়র। চলুন, দেখে নেওয়া যাক, টুর্নামেন্ট শুরুর প্রায় আড়াই মাস আগে ঠিক কেমন অবস্থায় আছে টিম ব্রাজিল, কোচ ডরিভালই বা মনোযোগ দিতে চাইবেন কোন কোন ক্ষেত্রে।

     বিস্ময়বালক এনদ্রিক

    ইংল্যান্ড ও স্পেনের বিপক্ষে গোল পেয়েছেন এনদ্রিক; Image Source: Getty Images

    প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এনে দেওয়া, দ্বিতীয় ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে ড্র করতে সাহায্য করা, ব্রাজিলের জার্সিতে এনদ্রিকের প্রথম দুটো গোলের জন্য যেন এর চেয়ে ভালো সময় আর হতেই পারতো না।! ১৭ বছর বয়সী এই সেন্টার ফরোয়ার্ডের হলুদ জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে, কিন্তু গোলটা আর পাওয়া হয়ে ওঠেনি। নতুন কোচ ডরিভাল তবুই স্কোয়াডের সাথেই রেখেছিলেন এনদ্রিককে, আর নিয়মিত স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসের অনুপস্থিতিতে সেন্টার ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলা রদ্রিগোর বদলি হিসেবে অভিজ্ঞ রিচার্লিসন নন, বরং এনদ্রিককে নামিয়েছেন দুটো ম্যাচেই। এনদ্রিকও করেছেন বাজিমাত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েম্বলিতে ম্যাচে ৮০ মিনিটে গোল করে দলকে দেখিয়েছেন জয়ের পথ, স্পেনের বিপক্ষে বার্নাব্যুতে ৫০ মিনিটে গোল করে ম্যাচে এনেছেন সমতা। আর গা থেকে যেহেতু এখনো কৈশোরের ছাপ মুছে যায়নি, ব্রাজিল আর রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকেরা তাই অসীম স্বপ্নের জাল বুনতেই পারেন এই বিস্ময়বালককে ঘিরে!

    নতুন মুখের সমাহার

    চোটের কারণে নিয়মিত খেলোয়াড়দের অনেককেই পাননি কোচ ডরিভাল। লিভারপুল এবং ম্যানচেস্টার সিটির দুই গোলরক্ষক আলিসন এবং এডারসনের অনুপস্থিতিতে গোলরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন অভিষিক্ত বেন্তো। রক্ষণে সুযোগ পেয়েছেন অনভিজ্ঞ সেন্টারব্যাক জুটি লুকাস বেরালদো এবং ফ্যাব্রিসিও ব্রুনো, এদের সাথে লেফট ব্যাক ওয়েন্ডেল। বদলি হিসেবে নেমেছেন ইয়ান কৌতো। 

    লুকাস বেরালদো এবং ফ্যাব্রিসিও ব্রুনো, ব্রাজিলের নতুন সেন্টারব্যাক জুটি; Image Source: Getty Images

    মাঝমাঠেও দেখা গেছে নতুন কিছু মুখ। অভিষিক্ত জোয়াও গোমেজ ছিলেন দুটো ম্যাচেরই শুরুর একাদশে। বদলি হিসেবে নেমেছিলেন নবাগত সাভিও, পাবলো মাইয়া, আন্দ্রে, ওয়েন্ডারসন গ্যালেনোরা। এই নতুন মুখদের নিয়েই ইংল্যান্ড এবং স্পেনের মতো দুই পরাশক্তির বিপক্ষে অপরাজিত থেকে বিরতি শেষ করলো ব্রাজিল। সেলেসাওদের দুঃসময়ের শেষটাও হয়তো লিখবেন এরাই!

     ভিনির চলমান দুর্দশা

    হলুদ জার্সিতে ভিনির দুর্দশা চলছেই; Image Source: Getty Images

    নেইমারের পর ভিনিসিয়াসের কাঁধেই ব্রাজিলের আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দেখছিলেন সবাই। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ভিনি যতটা উজ্জ্বল, ব্রাজিলের হয়ে সম্ভবত ততটাই ম্রিয়মাণ। ব্রাজিলের হয়ে এই পর্যন্ত ২৮ ম্যাচে মাত্র ৩ গোল আর ৪ অ্যাসিস্ট করেছেন ভিনি, এর মধ্যে সর্বশেষ গোল গিনির বিপক্ষে, ২০২৩ সালের ১৭ জুন। ইংল্যান্ড-স্পেনের বিপক্ষেও গোল-অ্যাসিস্ট পাননি তিনি, আর তাঁকে আটকে দেওয়াও প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের জন্য খুব কঠিন কাজ হয়নি। স্পেনের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ব্রাজিলের নেতৃত্বের বাহুবন্ধনী পরেছিলেন তিনি, তবে তাতেও দুর্দশা কাটেনি ভিনির।

    রক্ষণে দুশ্চিন্তা

    ওয়েন্ডেলকে বারবার ভুগিয়েছেন লামিন ইয়ামাল; Image Source: Getty Images

    ইংল্যান্ড এবং স্পেনের বিপক্ষে ব্রাজিলের শুরুর একাদশের রক্ষণভাগ ছিল হুবহু একই। দুই সেন্টারব্যাক বেরালদো এবং ব্রুনো, লেফটব্যাক ওয়েন্ডেল এবং রাইটব্যাক অভিজ্ঞ দানিলো। দুটো ম্যাচেই ব্রাজিলের রক্ষণকে সময়ে সময়ে ধুঁকতে দেখা গেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেশ কিছু ভুল করেছিলেন সেলেসাও ডিফেন্ডাররা, সুযোগগুলো নিতে পারেননি বেলিংহাম-ফোডেনরা। স্পেনের বিপক্ষেও দুর্দশা দেখা গেছে ব্রাজিলের, বিশেষত স্প্যানিশ রাইট উইঙ্গার তরুণ লামিন ইয়ামালকে সামলাতে বারবার হিমশিম খেয়েছেন লেফটব্যাক ওয়েন্ডেল। ম্যাচে সর্বসাকুল্যে প্রতিপক্ষকে দুটো পেনাল্টি উপহার দিয়েছেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা, দুটো থেকেই লক্ষ্যভেদ করেছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি। অনভিজ্ঞ রক্ষণের এই দুর্দশাটা নিশ্চিতভাবেই ভাবাবে কোচ ডরিভাল জুনিয়রকে।

     ডরিভালের শুভসূচনা

    আন্তর্জাতিক ফুটবলে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা না থাকলেও ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলের অত্যন্ত পরিচিত মুখ ডরিভাল জুনিয়র। প্রায় ২৪ বছর ধরে কোচিং করিয়েছেন ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলের নামকরা ক্লাবগুলোতে। বিভিন্ন সময়ে সাও পাওলো, ফ্ল্যামেঙ্গো, অ্যাথলেটিক পিআর, সান্তোস, ফ্লুমিনেন্স, ভাস্কো দা গামা, ইন্টারন্যাসিওনাল, ক্রুজেইরো, করিতিবার মতো ক্লাবগুলো পরিচালিত হয়েছে তাঁর অধীনে। সেই ৬১ বছর বয়সী ডরিভালকেই ব্রাজিলের ফুটবলের দায়িত্ব অর্পণ করা হলো, ফার্নান্দো দিনিজকে সরিয়ে। দিনিজের অধীনে সবশেষ চার ম্যাচে ব্রাজিল ছিল হতশ্রী, জয়হীন ছিল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ভেনেজুয়েলা, উরুগুয়ে, কলম্বিয়া আর আর্জেন্টিনার বিপক্ষের ম্যাচে।

    ডরিভালের সূচনাটা ভালোই হয়েছে; Image Source: Getty Images

    ডরিভাল এসেই এখনো সব খোলনলচে পাল্টে ফেলেননি। নেইমার, জেসুস, ক্যাসেমিরো, মার্কিনিওসদের মতো খেলোয়াড়দের নিয়ে এখনো কাজ করা হয়নি তাঁর। তাঁদের অনুপস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত তরুণদের নিয়েই সেরেছেন তাঁর প্রথম ‘অ্যাসাইনমেন্ট’, ইউরোপ সফরে জয় পেয়েছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, দারুণ লড়েছেন স্পেনের সাথে। তবে নেইমার-ক্যাসেমিরোদের মতো খেলোয়াড়েরা ফিরলে ঠিক কী পরিকল্পনা এগোবেন ডরিভাল, সেই প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।