• কোপা আমেরিকা
  • " />

     

    ভেনেজুয়েলাকে হারিয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল আর্জেন্টিনা

    ভেনেজুয়েলাকে হারিয়ে ব্রাজিলের বিপক্ষে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করল আর্জেন্টিনা    

    আর্জেন্টিনাকে ঘিরে সংশয় ছিল। কিন্তু সব সংশয় দূর করে ভেনেজুয়েলাকে ২-০ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে আর্জেন্টিনা। তাতে নিশ্চিত হয়ে গেছে একটা সুপারক্লাসিকোও। সেমিফাইনালেই তাই হয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই। আপাতত ভেনেজুয়েলাকে আর্জেন্টিনার হারানোর চেয়ে এটাই বড় খবর। ৩ তারিখ মিনেইরোতে সেমিফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী, কোপা আমেরিকায় এক যুগ পর।

    মার্চে প্রীতি ম্যাচে এই ভেনেজুয়েলার কাছেই ৩-১ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু কোপা আমেরিকাতে এ দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সবসময়ই জিতেছে লিওনেল স্কালোনির দল। ইতিহাসও তাই বদলায়নি আরেকবার। এই নিয়ে শেষ ৬ বারের ভেতর পাঁচবারই কোপার সেমিফাইনালে উঠেছে আর্জেন্টিনা।

    আগের ম্যাচের মতো ভেনেজুয়েলার বিপক্ষেও আর্জেন্টিনা পেয়েছে দ্রুত গোল, এবার ১০ মিনিটে। লিওনেল মেসির কর্নার ঠিকমতো ক্লিয়ার করতে পারেননি ভেনেজুয়েলা ডিফেন্ডার, সেখান থেকেই ডিবক্সের ভেতর বল পেয়েছিলেন সার্জিও আগুয়েরো। তিনি গোল বরাবরই লো শট করেছিলেন। সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথায় থাকা লাউতারো মার্টিনেজ দারুণ এক ফ্লিক করে সেই শট গোলে পরিণত করেছেন। এমনিতে কর্নার থেকে ভাগ্য খোলে না আর্জেন্টিনার। কোপা আমেরিকায় শেষ ৬১ গোলে এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয় বারের মতো কর্নার থেকে গোল পেয়েছে তারা।


    আরও পড়ুন : 'ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা?'


    মারাকানায় শুরুটাই দুর্দান্ত ছিল আর্জেন্টিনার। মার্টিনেজের গোলের আগেই আরও দুইবার তারা ভালো দুইটি সুযোগ পেয়েছিল তারা। মার্টিনেজের পাস থেকে ৩ মিনিটে সার্জিও আগুয়েরো নেয়ার পোস্টে শট করেছিলেন, কিন্তু ভেনেজুয়েলা গোলরক্ষকের পা দিয়ে করা দারুণ সেভ তাকে গোল পেতে দেয়নি। ৭ মিনিটে কর্নার থেকে মার্টিনেজের হেড ফাঁকায় থাকা জার্মান পেতজেলার সামনে পড়লেও তিনি ছিলেন না প্রস্তুত। নইলে তিনি হয়ত আরও আগেই এগিয়ে দিতে পারতেন আর্জেন্টিনাকে। পেতজেলা গোলের সুযোগ আরও একবার পেয়েছেন প্রথমার্ধে। ৩৭ মিনিটে মেসির ফ্রি কিক থেকে হেডটা লক্ষ্যে রাখলেই হয়ত গোল পেতেন, কিন্তু তিনি মেরেছেন বাইরে দিয়ে।


    প্রথমার্ধে আক্রমণে আর্জেন্টিনাই বেশি ধারালো ছিল। তবে ভেনেজুয়েলাও কাউন্টার অ্যাটাকে চেষ্টা করে গেছে। তাদের সেরা সুযোগও অবশ্য একটি কর্নার থেকে। ৪০ মিনিটে কর্নার থেকে বারের ওপর দিয়ে হেড করেছেন হুয়ান চ্যান্সেলর। আর বিরতির ঠিক আগে মার্কস আকুনিয়ার বাম প্রান্ত থেকে ক্রস মার্টিনেজকে গোল করতে না দিয়ে তিনিই অবশ্য ভেনেজুয়েলাকে টিকিয়ে রেখেছিলেন ম্যাচে।

    দুইদলের শারীরিক দক্ষতাও ছিল প্রথমার্ধে। ভেনেজুয়েলার তিন জন আর আর্জেন্টিনার- দুইজন মোট ৫ বার রেফারিকে হলুদ কার্ড দেখাতে হয়েছে বিরতির আগে। গত দুই কোপা মিলিয়েও এক অর্ধে এক ম্যাচে এতোগুলো কার্ডের রেকর্ড নেই।

    দ্বিতীয়ার্ধেও প্রথমার্ধের শুরুটাই টেনে এনেছিল লা আলবিসেলস্তেরা। লিয়ান্দ্রো পারেদেসের ফ্রি কিক বিপদ বাড়ানোর আগেই পাঞ্চ করে ক্লিয়ার করতে হয়েছিল উইলকার ফারিনাজকে। এরপর পারেদেসের একটি থ্রু পাস ধরেই মার্টিনেজ গোল পেয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু মার্টিনেজ সে দফায় মেরেছেন বাইরে দিয়ে। আর্জেন্টিনার আধিপত্য অবশ্য ওখানেই শেষ ম্যাচে। এরপর পুরোটা সময় বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ভেনেজুয়েলা, আর নিজেদের অর্ধে ব্যস্ত ছিল আর্জেন্টিনা। তবে সেভাবে কোনো আক্রমণ সাজাতে ব্যর্থ হচ্ছিল রাফায়েল দুদামেলের দল। ৭০ মিনিটে রিঙ্কনের উড়িয়ে মারা বল ডিবক্সের ভেতর ডান কোণায় রিসিভ করে হার্নান্দেজ প্রথম গোলে শট নেন ভেনেজুয়েলার হয়ে। ফ্রাঙ্কো আর্মানিও ভুল করেননি, শক্ত হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন হার্নান্দেজকে। চাপে পড়ে যাওয়া আর্জেন্টিনা এর ৫ মিনিট পরই জয় নিশ্চিত করে ফেলে। তাতে অবশ্য ভেনেজুয়েলার গোলরক্ষকেরও অবদান আছে।

    মার্টিনেজের বদলি নামা অ্যানহেল ডি মারিয়া ভেনেজুয়েলার অর্ধে প্রেস শুরু করেছিলেন। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন মেসিও। তাতে বল হারিয়ে বসেন ভেনেজুয়েলার রবার্তো রোসালেস। ডানদিক নিয়ে এরপর রদ্রিগো ডি পল সেই বল নিয়ে, ক্রস করেন ডিবক্সের ঠিক ভেতরে। আগুয়েরো ছিলেন সেখানে। তার শট ফারিনাজের ধরেই ফেলার কথা ছিল। কিন্তু গড়বড় পাকিয়ে ফেললেন তিনি। হাত ফস্কে বল চলে গেল বাইরে, পেছন থেকে দৌড়ে এসে আরেক বদলি জিওভানি লো সেলসো ফাঁকা বারে গোল করে আর্জেন্টিনার সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন ম্যাচের ১৫ মিনিট বাকি থাকতেই।


    বাকি সময়ে অবশ্য আর্মানিকে বেশ কয়েকটি সেভ করতে হয়েছে। কর্নার থেকে চ্যান্সেলরের হেড ফিরিয়েছেন তিনি। পেতজেলাও পরে একবার বল ক্লিয়ার করেছেন হেড করে। ভেনেজুয়েলার তাই আর সেখান থেকে অবিশ্বাস্য কিছু করে আর ফেরা হয়নি। ভেনেজুয়েলার চেয়ে বল পজিশনে পিছিয়ে থেকেও কাজের কাজটা সময়মতো করায় আর্জেন্টিনাকে তেমন একটা ভুগতে হয়নি পুরো ম্যাচেই। তবে লা ভিনোতিন্তোরা চাইলে বড় একটা অনুপ্রেরণা পেতে পারে এখান থেকেই। গত দশ বছরে এবারই প্রথম আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হয়ে বল পজিশনে এগিয়ে ছিল তারা। এই আর্জেন্টিনা যে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আলাদা তারই আরেকটা প্রমাণ যেন সেটা।

    কাতারের বিপক্ষে এক জয় নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা আর্জেন্টিনা তাই তেমন কোনো পরীক্ষা না দিয়েই উঠে গেছে সেমিফাইনালে। তৃপ্তি পেতেই পারেন লিওনেল স্কালোনি। তবে একটা অস্বস্তি এতোক্ষণে জেঁকে বসার কথা তার। দলের হাল ধরার কথা যার, সেই মেসি এদিনও নিজের ছায়া হয়ে। কোপায় এখন পর্যন্ত আর্জেন্টিনার করা সবগুলো গোলেই অবদান আছে আগুয়েরোর। সেটা যেমন স্বস্তির, মেসির অফ ফর্মে থাকাটা তার চেয়েও বেশি অস্বস্তির আর্জেন্টিনার জন্য। পরের ম্যাচটা যখন টুর্নামেন্ট ফেভারিট ব্রাজিলের বিপক্ষে, তখন মেসির জ্বলে ওঠা ছাড়া বোধ হয় আর কোনো পথও খোলা নেই আর্জেন্টিনার সামনে।   


    আর্জেন্টিনা একাদশ
    আর্মানি, ফয়েথ, পেতজেলা, অটামেন্ডি, টালিয়াফিকো, পারেদেস, রদ্রিগো ডি পল, আকুনিয়া, মেসি, মার্টিনেজ, আগুয়েরো