• সিরি আ
  • " />

     

    কোথায় যাবেন দিবালা?

    কোথায় যাবেন দিবালা?    

    জুলাই মাসের শেষে এসে দলদবলের বাজার হয়ে দাঁড়িয়েছে 'গেসিং গেম'। গুঞ্জন তো আছেই, কিন্তু সেই গুঞ্জনও ডালপালা মেলার আগেই নতুন গুঞ্জনে পরিস্থিতি বাঁক খাচ্ছে নতুন দিকে। মাত্র কয়েকদিন আগেও জুভেন্টাসের নতুন ম্যানেজার মাউরিসিও সারি বেশ প্রশংসাই করেছিলেন পাউলো দিবালার। সপ্তাহ না ঘুরতে শোনা যাচ্ছে ক্লাবই ছাড়তে পারেন দিবালা। নতুন ঠিকানা হিসেবে ইংল্যান্ডের দুই ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও টটেনহাম হটস্পারের নাম জোরালো হয়েছে শেষ দুইদিনে।

    শুরু হয়েছিল স্কাই স্পোর্টসের একটি রিপোর্ট দিয়ে, সে অনুযায়ী কোপা আমেরিকার পর ছুটি কাটিয়ে তুরিনে ফিরে নতুন কোচের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা দিবালার। সারির দলে নিজের ভূমিকা নিয়ে জানতে চান দিবালা। এরপর নেবের সিদ্ধান্ত। আর যদি ক্লাব ছাড়তেই হয় তাহলে ইতালির বাইরে নতুন ক্লাব খুঁজবেন বলে জানিয়েছিল তারা। পরদিন ইতালিয়ান মিডিয়া ইন্টার মিলান টার্গেট রোমেলু লুকাকুর সঙ্গে দিবালার জুভেন্টাস-ইউনাইটেড অদল-বদলের খবর বেশ গুরুত্ব দিয়েই প্রকাশ করেছে।

    কেন ক্লাব ছাড়বেন দিবালা? 
    দিবালার ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনের কারণ গত মৌসুমে তার পারফরম্যান্সের হাল। পুরো মৌসুমে মাত্র ১০ গোল করেছেন দিবালা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সংযোজনের পর একাদশেও অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। রোনালদোর বয়স এখন ৩৪। অবশ্য খেলার ধরন ও প্রবল মনোবল বলছে অন্তত আরও দুই মৌসুম এই দলের আক্রমণে মূল আকর্ষণ হয়ে থাকার কথা তার। আর দিবালার পারফরম্যান্স শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ারও এটাই মোক্ষম সময়। সারির পরিকল্পনায় নিজের মন না ভরলে দিবালা ক্লাব ছাড়ার কথা ভাবলে সেটা খুব বেশি অযৌক্তিকও হবে না হয়ত। সে কারণেই গুঞ্জনটা বেশ জোরালো এবার।

    এর মানে কি জুভেন্টাস-দিবালার পথ ভাগ হয়ে যাওয়া? 
    দিবালা ক্লাব ছাড়তে চাইলে তার অর্থ এছাড়া আর কিছু হওয়ারও সুযোগ নেই। কিন্তু যে সম্ভাবনার কথা ভেবে ক্লাব বদলাতে চাইতে পারেন আর্জেন্টাইন, সেটাই আবার কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে তার জন্য। গাজাতে দেলো স্পোর্টের মতে লুকাকুর দাম ধরা হয়েছে ৮৫ মিলিয়ন ইউরো, আর দিবালার ১০০ মিলিয়ন ইউরো। ইউনাইটেডে গেলে দিবালার তার এখনকার বেতন দ্বিগুণও দাবি করবেন বলে জানাচ্ছে তাঁরা। অবস্থাচিত্তে মনে হচ্ছে দিবালাকে ম্যানচেস্টারে আসার ব্যাপারে রাজি করাতে বেশ কাঠ-খড় পোড়াতে হবে ইউনাইটেডকে। আর শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেডে গেলেও যাবেন অনেক সংশয় নিয়ে। 

    দিবালার খেলার ধরন প্রিমিয়ার লিগের সঙ্গে মানানসই কী না সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আক্রমণাত্মক দলে অ্যাটাকিং থার্ডে তিনি দারুণ। ড্রিবলিং, গতি, দুর্দান্ত ফিনিশিং সবই আছে তার ঝুলিতে। কিন্তু আশে পাশে সে ধরনের ফুবটলারও দরকার তার সতীর্থ হিসেবে। ইউনাইটেডের বর্তমান অবস্থা তাঁকে সে ধরনের পরিবেশ দিতে পারবে না বলেই ইঙ্গিত করছে। ব্যর্থ হওয়ার ভয়টাও তাই কাজ করবে দিবালার। সবদিক থেকেই তাই দিবালা-ইউনাইটেড সম্পর্কটা সফল হওয়ার পথে বাধা রয়েছে  বেশকিছু। তবে সেগুলো উতরে যেতে পারলে দিবালা হতে পারেন ইউনাইটেডের কাণ্ডারি। 

    আর টটেনহাম হটস্পার মাত্র কয়েকদিন আগেই নিজেদের দলবদলের রেকর্ড ভেঙে টাঙ্গুয়ে এনদমবেলেকে ৬২ মিলিয়ন ইউরোতে দলে ভিড়িয়েছে। সেখানে আছেন হ্যারি কেইন, হিউং মিন সনরা। আছেন তাদের আর্জেন্টাইন ম্যানেজার মাউরিসিও পচেত্তিনোও। নতুন করে ফর্ম খুঁজে পেতে টটেনহাম হতে পারে দিবালার আশ্রয়। তবে টটেনহামের সে ধরনের বড় ট্রান্সফার বাজেট নেই বলেই খবর। একমাত্র ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন বড় অঙ্কের টাকায় অন্য কোনো ক্লাবে গেলে হয়ত দিবালাকে কেনার টাকা উঠবে টটেনহামের। তবে তার আগে এরিকসেনকে দলেই রাখতে চাইবে তাঁরা।



    জুভেন্টাসে থেকেই যাওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত?
    হ্যাঁ, আপাতদৃষ্টিতে সেটাই সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হওয়ার পেছনে বেশ কিছু যুক্তি দাঁড় করানো যায়। পালের্মো থেকে চার বছর আগে জুভেন্টাসে এসেছিলেন দিবালা। প্রথম দুই মৌসুমে ক্রমান্বয়ে উন্নতি করেছেন। 'লা জয়া'বা ডায়মন্ড নামকরণ যে কারণে সেটার প্রমাণ সবচেয়ে ভালো রাখতে পেরেছিলেন ২০১৬-১৭ মৌসুমে। প্রথম মৌসুমে ২৩ গো, পরেরবার ১৯, তৃতীয়বারে ২৬। তৃতীয় মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল পেলেও অধিক কার্যকর ছিলেন নিজের দ্বিতীয় মৌসুমে।সেবার জুভেন্টাস খেলেছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে, কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে দিবালার জোড়া গোল নতুন করে চিনিয়েছিল তাঁকে। এরপরের তৃতীয় মৌসুমে হুট করেই হারিয়ে ফেললেন নিজেকে। সেটার একটা বড় কারণ ছিল জুভেন্টাসের রক্ষণাত্মক অ্যাপ্রোচ আর রোনালদো নির্ভরতা। সারি বিখ্যাত তার আক্রমণাত্মক ফুটবলের কারণে। রোনালদোই আক্রমণের মূল নেতা, তবে তাঁকে সাহায্য করতেও তো শেয়ানা কাউকে দরকার! দিবালাকে তিনি রোনালদোর পেছনে ফলস নাইন হিসেবে খেলাতে চান বলে জানিয়েছিলেন। এই পজিশনে গত দুই মৌসুমে খুব বেশি খেলার সুযোগ হয়নি তার। সারির পরিকল্পনা দিবালা নেই এমন কোনো খবরও এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। আর প্রিমিয়ার লিগের দলবদলের সময় ফুরিয়ে আসছে প্রায়, আগস্টের ৮ তারিখ শেষ ইংল্যান্ডের দলবদল। এর আগে অল্প সময়ে তাই দিবালার ইংল্যান্ড যাত্রাটা আপাতত দুর্গম গিরি কান্তার মরুর পথ। 

    খেলার ধরন, মানসিকতা সবকিছু মিলিয়ে জুভেন্টাসের জন্য দারুণ সই দিবালা। সেটার প্রমাণ আগেও মিলেছে। ২৫ বছর বয়সে ক্লাবের দ্বিতীয় অধিনায়ক এখন তিনি। দিবালা যখন দুর্দান্ত তখন তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো খেলোয়াড় কমই আছে। আর আপাতত রোনালদো ভরসা যোগালেও ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হচ্ছে জুভেন্টাসকে। আর এবার যে ধরনের দল জুভেন্টাস গড়েছে সেটার অংশ হয়ে না থাকতে পারলেই বরং হয়ত পরে আফসোস করতে হতে পারে দিবালাকে। সবমিলিয়ে তাই শেষ পর্যন্ত তুরিনের ঠিকানাটা হয়ত বদলাতে হবে না দিবালাকে। 

    তবে আমরা কথা বলছি দলবদলের বাজার নিয়ে, হয়ত দুইদিন পরই গল্পটা পালটে যেতে পারে অদ্ভুতভাবে!