নাটক জমিয়ে সাত গোলের ম্যাচে জুভেন্টাসের কাছে হারল নাপোলি
৮১ মিনিটে হোসে মারিয়া কায়েহনের ফ্রিকিকে জুভেন্টাস গোলরক্ষক ওয়েচেক শেজনিকে পরাস্ত করলেন নাপোলির দি লরেঞ্জো। জুভেন্টাস স্টেডিয়ামে তখন পিনপতন নীরবতা। দানিলো লুইজ, গঞ্জালো হিগুয়াইন এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গোলে দ্বিতীয়ার্ধের একটা সময় ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েও সমতায় ফিরেছে কার্লো আনচেলত্তির দল। কিন্তু প্রত্যাবর্তনের গল্পটা আর লেখা হয়নি নাপোলির, হয়েছে চরম পরিণতি। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে পাউলো দিবালার ক্রস ক্লিয়ার করতে যেয়ে বল নিজেদের জালে ঠেলে দেন কালিদু কুলিবালি। সাত গোলের থ্রিলারে শেষ পর্যন্ত নাপোলি তাই ফিরেছে খালি হাতে। গত সপ্তাহে ৪-৩ গোলে ফিওরেন্তিনার বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে এনেছিল নাপোলি, এবার একই ব্যবধানে জুভেন্টাসের কাছে হারল তারা।
অথচ কুলিবালির গোলের আধ ঘণ্টা আগেও তুরিনে হয়তো নাপোলির এমন দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের আশা করেননি তাদের কট্টর সমর্থকেরাই। ৬২ মিনিটে ডগলাস কস্তার মাইনাসে বাঁ-পায়ের চমৎকার শটে নাপোলি গোলরক্ষক অ্যালেক্স মেরেতকে পরাস্ত করলেন রোনালদো, ব্যবধান তখন ৩-০। ডাগআউটে আনচেলত্তির শূন্যদৃষ্টি, মাঠে লোজানো, মার্টেনসদের মাথায় হাত। কিন্তু কে জানতো, আলিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে তখনও নাটক শুরুই হয়নি! ৬৬ মিনিটে প্রত্যাবর্তনের শুরুটা হল নতুন সাইনিং কস্তাস মানোলাসের গোলে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি হিসেবে নামা মারিও রুইয়ের ফ্রিকিকে হেড করে নাপোলিকে আশার আলো দেখালেন তিনি। দুই ডিফেন্ডার মাথিয়াস ডি লিট এবং লিওনার্দো বনুচ্চির মাঝে লাফিয়ে উঠে দারুণ হেডে শেজনিকে পরাস্ত করলেন গ্রিক ডিফেন্ডার। মানোলাসের গোলে আশার আলো দেখা নাপোলি সমর্থকেরা গলার জোর খুঁজে পায় মিনিট দুয়েক বাদেই।
৬৮ মিনিটে দুর্দান্ত এক প্রতি-আক্রমণে বাঁ-প্রান্ত থেকে পিওতর জিয়েলিন্সকির ক্রসে পা ছুঁয়ে ব্যবধান ৩-২ করেন নাপোলির আরেক নতুন সাইনিং হার্ভিং লোজানো। বনে যান সিরি আ-এর ইতিহাসে গোল করা প্রথম মেক্সিকান। অবশ্য নাপোলির প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারত ৭০ মিনিটেই। ম্যাচে জুভেন্টাসের মূল কারিগর কস্তার ডানপ্রান্ত থেকে কাট করে নেওয়া শট মেরেতকে পরাস্ত করলেও ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে। ম্যাচে ফেরার স্বপ্নে তখন আরও বিভোর নাপোলি। ডি লরেঞ্জোর গোলে স্বপ্ন সত্যি হয় ৮১ মিনিটে। তার সমতাসূচক গোলের পরই ক্যামেরা খুঁজে নেয় দর্শকসারিতে বসা জুভেন্টাসের ইনজুরিতে পড়া অধিনায়ক জর্জিও কিয়েলিনিকে। পুরো ম্যাচে, বিশেষ করে সেটপিসে ডি লিট-বনুচ্চির মার্কিং হতাশই করেছে মরিজিও সারির দলকে; কিয়েলিনির অভাবটাও যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে প্রমাণ করেছে একাধিকবার। দলের এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো দেখে ডাগআউটে নিজের চিরাচরিত গাম্ভীর্য ফেলে আনচেলত্তিও মেতে ওঠেন ইয়ুর্গেন ক্লপ বা ডিয়েগো সিমিওনের মত শিশুসুলভ উদযাপনে।
ম্যাচের বাকি সময় রোনালদোদের ভালভাবেই দমিয়ে রেখেছিল নাপোলি। কিন্তু ৯২ মিনিটে এক মুহূর্তের ভুলে চাপা পড়ে যায় তাদের বীরত্বগাঁথা। গত আট বছরে সিরি আ জিততে জুভেন্টাসের সবচেয়ে কষ্ট হয়েছিল খুব সম্ভবত ২০১৭-১৮ মৌসুমে। সেবার তাদের একেবারে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিল নাপোলি। আলিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে ঐ মৌসুমে নাপোলির জয়সূচক গোলটি করেছিলেন কুলিবালিই। নাপোলির একাধিক বড় জয়ের সাক্ষী কুলিবালি অন্তত আজকের জন্য ‘হিরো’ থেকে বনে গেলেন ‘জিরো’।
আলিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে নাপোলির বিপক্ষে শুরুটা দারুণ হয়েছিল জুভেন্টাসের। ৪ মিনিটে রোনালদোর বাঁ-পায়ের আগুনে শট মেরেত ফিরিয়ে না দিলে তখনই লিড নিতে পারত সারির দল। ১৬ মিনিটে রাইটব্যাক মাথিয়া ডি শিলিওর ইনজুরির কারণে জুভেন্টাসের জার্সিতে হোম অভিষেক হয়ে যায় দানিলোর। অভিষেকটা খুব সম্ভবত এর চেয়ে স্মরণীয় করে রাখতে পারতেন না তিনি।
মাঠে নামার মাত্র ২৯ সেকেন্ড পর প্রতি-আক্রমণে স্বদেশি কস্তার ক্রসে পা ছুঁয়ে দলকে লিড এনে দেন তিনি। সারির অধীনে নাপোলিতে রীতিমত দুর্ধর্ষই ছিলেন হিগুয়াইন। কিন্তু গত দুই মৌসুম জুভেন্টাস থেকে ধারে এসি মিলান এবং চেলসিতে খেলতে হয়েছিল তাকে। সারি যোগ দিলেন জুভেন্টাসে, তুরিনের বুড়িদের একাদশে ফিরলেন হিগুয়াইনও; ফিরলেনও স্বরূপেই। ২১ মিনিটে আবারও সেই কস্তার পাসে ডিবক্সে বল পান ‘এল পিপিতা’, দুর্দান্তভাবে কুলিবালিকে কাটিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন তিনি। নাপোলি ছেড়ে জুভেন্টাসে যাওয়ায় দুয়ো শুনতে হয়েছিল তাকে, সেজন্যই হয়তো সাবেক দলের বিপক্ষে উদযাপনে পিছপা হননি হিগুয়াইন। প্রথমার্ধে রীতিমত নাপোলির ধরাছোঁয়ার বাইরেই চলে যেতে পারত জুভেন্টাস। ৩২ মিনিটে স্যামি খেদিরার আগুনে শট ফিরিয়ে দেন মেরেত। ৩৫ মিনিটে নাপোলি গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও খেদিরার শট এবার ফিরে আসে বারপোস্টে প্রতিহত হয়ে।
ম্যাচে দু’বার বারপোস্টের কারণে গোল পাওয়া হয়নি জুভেন্টাসের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেজন্য হা-হুতাশও করার প্রয়োজন হচ্ছে না তাদের। খুব সম্ভবত সিরি আ শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার পথে তাদের সবচেয়ে বড় বাধা নাপোলিকে অতিক্রম করলেও রক্ষণভাগ নিয়ে হয়তো দুশ্চিন্তায়ই থাকবেন সারি। একই কারণে হতাশ হতে পারেন আনচেলত্তিও; মানোলাস-কুলিবালি থাকার পরও ২০১৯-২০ সিরি আ-এর প্রথম দুই ম্যাচে মোট ৭ গোল হজম করেছে তার দল।