• আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট
  • " />

     

    স্পিনেই আফগানদের পালটা ভোগালেন আল আমিনরা

    স্পিনেই আফগানদের পালটা ভোগালেন আল আমিনরা    

    আফগানিস্তান ৮৮.১ ওভারে ২৪২/৬ ( ইহসানউল্লাহ ৬২, ইব্রাহীম ৫২, নবী ৩৩; আল আমিন ৪/৫১, সুমন ২/২১ )


    ভাদ্র মাসে চট্টগ্রামের রোদ্দুরটা একটু অন্যরকম। রোদের তেজ খুব না থাক, আর্দ্রতার জন্য গরম আপনাকে ভীষণ ভোগাবে। তা বিসিবি একাদশের বোলারদের খাটিয়ে নেওয়ার কাজটা সকাল থেকে ভালোই করে যাচ্ছিলেন দুই আফগান ওপেনার ইব্রাহীম জাদরান ও ইহসানউল্লাহ জিনাত। প্রতিপক্ষের সঙ্গে নিজেদেরও বিস্তর ঘাম ঝরালেন, শেষ পর্যন্ত যথেষ্ট অনুশীলনের পর দুজন স্বেচ্ছায় অবসরে গেলেন। এরপরেই বিসিবি একাদশ একটু চেপে ধরার সুযোগ পেল, আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে পার্ট টাইম স্পিনার আল আমিন জুনিয়রই সেই কাজটা করলেন। শেষ বিকেলে যখন আফগানদের ৬ উইকেট তুলে নিয়ে বিসিবি একাদশ মাঠ ছাড়ছিল, আল আমিনের জন্য বড় একটা হাততালিও হয়ে গেল। 

    অথচ সকালের শুরুটা এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের মতোই নিষ্প্রাণ ছিল। একে তো দল আফগানিস্তান, তার ওপর বিসিবি একাদশেও সেই অর্থে বড় কোনো তারকা নেই। তাও মাঠে শখানেকের মতো দর্শক হলো। সকালে অবশ্য তাদের উৎসাহ দেওয়ার কোনো উপলক্ষ মিলছিল না, টসে জিতে ব্যাট করতে নামার পর আফগান দুই ওপেনার সেই সুযোগই দেননি। বিসিবি একাদশ চারজন পেসার নিয়ে নেমেছিল, নতুন বলে শুরুটা করলেন মেহেদী হাসান রানা ও মানিক খান। সেরকম কোনো সাফল্য এনে দিতে পারেননি, অন্য পাশ থেকে অন্য দুই পেসার সালাউদ্দিন শাকিল ও তরুণ সুমন খানের হাতেও বল তুলে দিতে খুব দেরি করেননি অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। রানের গতি স্লথ হলেও আফগান দুই ওপেনার আসলে অস্বস্তিতে ছিলেন না একদমই। শাকিলের বলে স্লিপে বারদুয়েক বল বেরিয়ে যাওয়া ছাড়া ‘আহা, উহু’ করার মতো মুহূর্তও আসেনি বিসিবি একাদশের।  লাঞ্চের আগে বল পেয়েছেন লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন। সেভাবে কিছু করতেও পারেননি, বুঝিয়ে দিয়েছেন কেন বছর চারেকের বেশি সময় ধরে তিনি জাতীয় দলের বাইরে। লং হপ করেছেন অনেকগুলো, লাইন লেংথের ওপরও ছিল না নিয়ন্ত্রণ। লাঞ্চের আগে কোনো উইকেট নিতে পারেনি বিসিবি একাদশ, দুই ওপেনার জাদরান ও জিনা।

    লাঞ্চের পর একটু সুযোগ তৈরি করতে থাকে বিসিবি একাদশ। লিখনও একটু গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন। ৩৭তম ওভারে গিয়ে ইব্রাহীম জাদরানের ক্যাচ মিস করলেন স্লিপে, জুবায়ের হোসেন লিখনের বলে। ৫১ রানে ব্যাট করছিলেন ইব্রাহীম। পরের ওভারেই সুমন খানের বলে জীবন পেলেন ইহসানউল্লাহ জিনাত। দুজন অবশ্য ফিফটি পেয়ে গেছেন, যথেষ্ট অনুশীলন হয়ে গেছে মনে করে এরপর বাকিদের সুযোগ দেওয়ার জন্য নেমে গেছেন। বিসিবি একাদশের ফিরে আসার শুরুও সেখান থেকেই।

    অবশেষে ৪৬তম ওভারে গিয়ে প্রথম উইকেট পেল বিসিবি একাদশ। ডানহাতি পেসার সুমন খানের বলটা ছিল লেগ স্টাম্পের ওপর। ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন জাভেদ আহমাদি। ৩ রানে ফিরেছেন, ১৩১ রানে বিসিবি একাদশ পেয়েছে প্রথম উইকেট। দ্বিতীয়টির জন্য এরপর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। আল আমিন জুনিয়রের অফ স্পিনকে ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে মারতে গিয়েছিলেন রহমত শাহ, ধরা পড়লেন এনামুল হক বিজয়ের হাতে। মজা করে পরে বিজয় বলছিলেন, নয়-দশ ম্যাচ পর অবশেষে তার হাতে একটা ক্যাচ এলো!

    চা বিরতির পর আবারও আল আমিনের আঘাত। এবার তার বলটা কাট করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে গেছেন আশগর আফগান, ফিরেছেন ১৬ রানে। হাশমতউল্লাহ শহিদি বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফেলেছিলেন, কিন্তু আল আমিনের বলে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন ২৬ রানে। বিশ্বকাপে খেলা উইকেটকিপার ইকরাম আলিখিলও টেকেননি বেশিক্ষণ। এবারও সেই আল আমিন, সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে দারুণ একটা ফিরতি ক্যাচ ধরেছেন। পেয়েছেন চার উইকেট। অথচ ৪০ ম্যাচের প্রথম শ্রেণীর ক্যারিয়ারে আল আমিনের উইকেট সাকুল্যে ১৫টি।

     

     

    এর মধ্যে আরও গোটাদুয়েক ক্যাচ ছেড়েছে বিসিবি একাদশ, নইলে আফগানদের স্কোরকার্ড আরেকটু বেশি হতশ্রী দেখাতে পারত। মোহাম্মদ নবী ঠিক করলেন একটু চড়াও হবেন, কাউ কর্নার দিয়ে আল আমিনকে একবার আছড়ে ফেললেন সীমানার ওপারে। এরপর অবশ্য রয়েসয়েই খেলছিলেন, এমএ আজিজের আকাশ তখন হয়ে এসেছে কালো। কিন্তু শেষ বিকেলে নবী দিনটা শেষ করে আসতে পারলেন না। তরুণ পেসার সুমন খানের দ্বিতীয় শিকার হয়ে এলবিডব্লু হলেন ৩৩ রানে। ৬ উইকেটে ২৪২ রান প্রথম ইনিংস শেষ করল আফগানিস্তান। আউটফিল্ড ঘাসে ভর্তি না হলে অবশ্য রান আরও অন্তত ৩০-৪০ বেশি হতেই পারত।