টেস্টের সংক্ষিপ্ত যাত্রার আগে আফগানিস্তানের হয়ে লম্বা যাত্রাটাই তৃপ্তি নবির
একবার গার্ড অফ অনার দিলেন সতীর্থরা। মোহাম্মদ নবি সেটা পেরিয়ে এদিক এলেন, আবার তাকে যেতে হলো ওপাশে, আবার শুরু হলো গার্ড অফ অনার। আগেরবার যে দাঁড়াতে পারেননি রশিদ খান ও আসগর আফগান। আফগান ক্রিকেটের কিংবদন্তী নবিকে সম্মান জানানোর সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাননি রশিদ, আসগররা। রশিদ তো পরে নিজের ম্যাচসেরার পুরস্কার উৎসর্গ করলেন নবিকে, ট্রফি নিতে গেলেন তাকে সঙ্গে নিয়েই। সবকিছুই বলছিল, আফগান ক্রিকেটে নবি কত বড় নাম।
আইসিসি ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটের ডিভিশন ফাইভে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের যাত্রাটা শুরু করেছিল আফগানিস্তান, ২০০৮ সালে। সে টুর্নামেন্টে খেলেছিলেন মোহাম্মদ নবি। এদিন চট্টগ্রামে যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের এক ফরম্যাট থেকে অবসর নিলেন, ততদিনে আফগানিস্তান পেয়ে গেছে প্রথম ‘অ্যাওয়ে’ টেস্ট জয়ের স্বাদ, তাও আবার মাত্র তৃতীয় ম্যাচে এসেই। এই তিন ম্যাচেই থেমে গেল নবির টেস্ট-যাত্রা, তবে যাওয়ার আগে যাচ্ছেন তৃপ্তি নিয়ে। যে তৃপ্তি দৃঢ় এক ঘরোয়া কাঠামো থাকার, যে তৃপ্তি টেস্টের মতো কঠিনতম ফরম্যাটে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেওয়ার।
বয়স ৩৪, চাইলে চালিয়ে যেতে পারতেন টেস্ট ক্রিকেটটা। পারফর্মও করছেন, চট্টগ্রাম টেস্টেও রশিদের অন্যতম বড় অস্ত্র ছিলেন তিনি, এমনকি তার কথা ভেবেই দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ বদলে ফেলেছিল ব্যাটিং অর্ডারও। তবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুযোগ করে দিতে চান তিনি, “স্বপ্ন ছিল আফগানিস্তানের হয়ে টেস্ট ক্রিকেট খেলার। আমরা সংক্ষিপ্ত সময়ে কঠোর পরিশ্রম করেছি, শেষ ১৩-১৪ বছর নয়, আমরা এ লক্ষ্যটা অর্জন করেছি ৭-৮ বছরে। আমাদের ভুগতে হয়েছে, মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হয়েছে, টিম কম্বিনেশন ঠিক করতে হয়েছে।”
“তিনবার ইন্টার-কন্টিনেন্টাল কাপ খেলে দুইবার চ্যাম্পিয়ন, একবার রানার্স-আপ হয়েছি। দারুণ একটা ফল, এবং এ কারণেই আইসিসি আমাদের টেস্ট স্ট্যাটাস দিয়েছে। আফগানিস্তানের এই প্রজন্মের অংশ হতে পেরে আমি খুশি। আমার পরিকল্পনা হলো, উঠতি ক্রিকেটাররা যাতে টেস্টের জন্য প্রস্তুত হয়, তারাই তো আমাদের ভবিষ্যত। এ কারণেই আমি টেস্ট ছেড়ে শুধু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির দিকে পুরো নজরটা দিতে চাই।
“এটি ঐতিহাসিক জয়, কারণ আমরা এই ফরম্যাটে নতুন। মাত্র তিনটি ম্যাচ খেললাম আমরা- ভারত, আয়ারল্যান্ড ও বাংলাদেশের বিপক্ষে, এর মাঝে দুটিই জিতেছি। এর মানে হলো, আমরা এই ফরম্যাটে ভাল, এর মানে হলো আমাদের ঘরোয়া কাঠানো শক্তিশালি। তরুণরা যেভাবে খেলছে, কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, এটা দারুণ মেধাবি একটা দল। হয়তো তরুণদের এই ফরম্যাটে উজ্জ্বল ভবিষ্যত অপেক্ষা করে আছে।”
যে জয়কে ঘিরে এতো কিছু, সে জয়ের জন্য দারুণ প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছেন নবি। আরব আমিরাতে ১০ দিন প্রচন্ড গরমের অনুশীলন তাদেরকে সহায়তা করেছে বাংলাদেশে এসে মানিয়ে নিতে। আর চট্টগ্রামের উইকেট দেখে তো খুশিই হয়েছিলেন তারা, “পিচ দেখেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ম্যাচ চারদিনের মাঝেই শেষ হবে। কারণ দুই দলেরই ভাল স্পিনার আছে। আমাদের স্পিনাররা বাংলাদেশের চেয়ে ভাল, এ কারণেই পিচ দেখে খুশি হয়েছিলাম আমরা।”
বৃষ্টি বাগড়া বাধালেও শেষ পর্যন্ত ফলটা খুশিরই হয়েছে আফগানিস্তানের জন্য, যেরকম কোনও ফল বিশ্বকাপে পায়নি তারা। অধিনায়কত্বের কারণেই এমন হয়েছে বলে মত তার, “এটা দলের কম্বিনেশনের ব্যাপার। বিশ্বকাপের আগে টিম ম্যানেজমেন্ট পুরোনো অধিনায়ককে বদলে ফেলেছিল, যেটা কাজে দেয়নি। সেই অধিনায়ক কখনোই অধিনায়কত্ব করেনি এর আগে। আমরা দল হিসেবে খেলতে পারিনি। এখানে রশিদ অধিনায়কত্ব করেছে, তার নেতৃত্ব দেওয়ার সামর্থ্য আছে। পাশাপাশি আমি ও আসগর (আফগান) তাকে অনেক সমর্থন দিয়েছি।”
অবশ্য এরপর আর নবির সহায়তাটা টেস্টে পাবেন না রশিদ। তবে যাওয়ার আগে তাকে দারুণ একটা তৃপ্তি দিতে পারলেন রশিদরা, ম্যাচশেষের গার্ড অফ অনারের সঙ্গে।