সাকিবদের সতর্কসংকেত দেখালেন আফগান স্পিনাররা
আফগানিস্তান ১ম ইনিংস ৯৯ ওভারে ২৮৯/৯ ডিক্লে
বিসিবি একাদশ ১ম ইনিংস ৪৪.৩ ওভারে ১২৩ অলআউট
আফগানিস্তান ২য় ইনিংস ৩.৫ ওভারে ১৪/০
ম্যাচ ড্র
চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে তখন চা বিরতি। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে ড্রেসিংরুমে ঢুকছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। দেখা হতেই বললেন, এরা তো স্পিন খেলতেই পারছে না। দুই আফগান স্পিনার রশিদ খান ও জাহির খান আজ বিসিবি একাদশকে কতটা ভুগিয়েছে তার খানিকটা সাক্ষ্য দেবে স্কোরবোর্ড। আর আপনার চোখ বলবে, স্পিন জুজুতে কাঁপতে থাকা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা আসলে ভয়েই দিয়ে এসেছেন উইকেট।
এমনিতে দুইদিনের এই প্রস্তুতি ম্যাচের জয় পরাজয়ের কোনো গুরুত্ব নেই। বিসিবি একাদশেও এমন কেউ নেই, যাকে এই ম্যাচে ভালো করার পরেই টেস্টে নামিয়ে দেওয়া হতে পারে। এনামুল হক বিজয় বা নুরুল হাসান সোহানদের মতো যারা জাতীয় দলে খেলেছেন, তারাও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না। তবে নিজেদের ব্যাটিংয়ের চেয়ে প্রতিপক্ষ স্পিনাররা কেমন বল করল, সেটার ওপরেই চোখ হয়তো বেশি ছিল বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। সেই হিসেবে রশিদ আর জহির দশ মহাবিপদসংকেত না হলেও বড় একটা বিপদ সংকেত ঠিকই দেখিয়েছেন।
রশিদ খানকে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। সাদা বলে এখন বিশ্বসেরাদের একজন, লাল বলে যদিও অতটা পরীক্ষিত নন। আজ সকালে অবশ্য আগে ব্যাট হাতে কিছুক্ষণ চালিয়ে নিয়েছেন নিজেকে। আফসার জাজাই ও রশিদ মিলে আগের দিনের ২৪২ রানের সঙ্গে আজ যোগ করেছেন আরও ১৫ রান। এরপর রশিদ আউট হয়েছেন সুমন খানের বলে, ম্যাচে এটি ছিল তার তৃতীয় উইকেট। কাইস আহমেদ এসে ঝটপট ৩১ বলে ২৩ রান করে আরও কিছুক্ষণ হতাশ করে গেছেন বিসিবি বোলারদের। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ২৮৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে আফগানিস্তান।
তবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই নিয়মিত উইকেট হারাতে শুরু করে বিসিবি একাদশ। প্রথম ধাক্কাটা অবশ্য দিয়েছেন শাপুর জাদরান, ৪ রানে ফিরিয়ে দিয়েছেন ওপেনার সাব্বির হোসেনকে। এরপর স্পিনারদেরই জয়জয়কার। রশিদ খান শুরুতেই বল নিয়েছিলেন, ১৯ রানে ফিরিয়েছেন এনামুল হক বিজয়কে। যদিও সেই সিদ্ধান্তে বিজয়কে খুব খুশি মনে হয়নি। ফজলে রাব্বিকে এরপর তুলে নিয়েছেন বাঁহাতি পেসার সায়েদ শিরজাদ, এরপর আর কোনো উইকেটই পাননি আফগান পেসাররা।
ওদিকে এসে গেছেন জাহির খান, এরপরেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়তে শুরু করে বিসিবি একাদশের ব্যাটিং। নাঈম ইসলামকে ইব্রাহীম জাদরানের ক্যাচ বানিয়ে নিয়েছেন প্রথম উইকেট, আনলাকি থার্টিনেই কাটা পড়েছেন নাঈম। আল আমিন জুনিয়রই যা একটু ভালো খেলছিলেন স্পিনারদের, ২৯ রানও তুলে ফেলেছিলেন। তাকেও তুলে নিয়েছেন জাহির।
ইরফান শুক্কুরের জন্য ছাতার মতো ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন রহিস, শেষ পর্যন্ত অফ স্টাম্পের বাইরের গুগলিটা টেনে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন শর্ট কাভারে। অধিনায়ক সোহানও তেকেননি বেশিক্ষণ, জাহিরের বল বুঝতে না পেরে হয়ে গেছেন এলবিডব্লু। বাকি টেল এন্ডাররাও সেই স্পিনের ফাঁদেই পা দিয়েছেন। ৫ উইকেট নিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন জাহির, রশিদ নিয়েছেন ৩ উইকেট। ১২৪ রানেই অলআউট হয়ে গেছে বিসিবি একাদশ।
চা বিরতির পর অবশ্য আবারও মাঠে নেমেছিল আফগানিস্তান। খেলা দেখতে আসার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজমেন্টেরও। কিন্তু এরপরেই এমএ আজিজের আকাশ কালো হয়ে এসেছে বৃষ্টি, দিনের বাকি সময়টা ভাসিয়ে গেছে তাই। তবে স্বস্তি নিয়েই শেষ পর্যন্ত দিন শেষ করেছে আফগানিস্তান, স্পিনে নিজেদের বার্তাটা যে দিয়েছে ভালোমতোই!