বাংলাদেশে এসে বাস্তবতা বুঝতে শিখছেন ডমিঙ্গো
রাসেল ডমিঙ্গো মানুষটা এমনিতে বেশ হাসিখুশি। বাংলাদেশে আসার পর প্রথমদিকে সেই হাসির রেশটা একটু বেশিই ছিল। প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বিস্তর মজাটজা করেছিলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়েও বেশ কিছু স্বপ্ন টপ্নের কথা বলেছিলেন। দুই সপ্তাহের মধ্যেই বাস্তবতা বোধ হয় বুঝতে পেরেছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। বিশেষ করে স্পিননির্ভর জয়ের রেসিপিতে পেসারদের যে অবদান রাখার সুযোগ নেই, আপাতত এই সত্যটা ভালোমতোই বুঝে গেছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।
মধুচন্দ্রিমা যে কেটে গেছে ব্যাপারটা আসলে ঠিক তা নয়। মাত্রই তো দুই সপ্তাহের মতো হলো, এর মধ্যে বাংলাদেশ মাঠে নামেনি। আফগানিস্তানের সঙ্গে টেস্টে জয় পেলে ভালো সময়টা আরও কিছুদিন বাড়বে নিশ্চিতভাবেই। তবে ডমিঙ্গো কম দিন তো দক্ষিণ আফ্রিকাকে কোচিং করাননি! নিজে শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট না খেললেও ছাত্রদের দৌড় বোঝার মতো মেধা তার সম্ভবত আছে। বিশেষ করে পেসারদের দিয়ে যে আপাতত বড় কিছু হচ্ছে না, সেই আভাস আজ সংবাদ সম্মেলনেই দিয়ে রেখেছেন এই কোচ।
বাংলাদেশে পা রাখার পর মোটামুটি দিন আটেকের মতো পূর্ণ সেশন পেয়েছেন ডমিঙ্গো। একটা ব্যাপার অবশ্য একটু সুবিধে হয়েছে, তিনজন স্বদেশীকে কোচিং স্টাফ হিসেবে পেয়েছেন। ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক আগে থেকেই ছিলেন, বোলিং কোচ শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট তার সঙ্গেই যোগ দিয়েছেন। আর নতুন ফিজিও জুলিয়ান কালেফাতো এসেছেন মাত্র দিন দুয়েক হলো। বাংলাদেশ দলের অনুশীলনেও আক্ষরিক অর্থেই এখন একটা দক্ষিণ আফ্রিকান আবহ। কুক তো এমনিতেই পরিশ্রমী, ডমিঙ্গো আর ল্যাঙ্গেভেল্টও প্রচুর সময় কাটাচ্ছেন অনুশীলনে। গতকাল যেমন অনুশীলনে দম ফেলার সুযোগ পাননি কেউ। ফিল্ডিং সেশনের পর পরেই শুরু হয়ে গেছে নেট সেশন, তিনটি আলাদা নেটে টানা ব্যাটিং বোলিং করেছেন সবাই। ডমিঙ্গো নিজে ঘুরেঘুরে দেখেছেন, মাঝে মধ্যে সৌম্য-মোসাদ্দেকদের ব্যাটিং টেকনিক নিয়ে টুকটাক কথা বলেছেন। ল্যাঙ্গেভেল্টেরই মাথায় ভাজ জমেছে বেশি, তিন পেসারের বোলিং দেখে প্রধান কোচ আর বোলিং কোচ যে ঠিক সন্তুষ্ট হননি, সেটা তাদের শরীরী ভাষাতেও বোঝা যাচ্ছিল।
শেষ পর্যন্ত পেসার ছাড়াই নামবে বাংলাদেশ?
ডমিঙ্গো যদিও আজ সংবাদ সম্মেলনে শুরুতে বললেন, নতুন ছাত্রদের নিবেদন দেখে তিনি সন্তুষ্ট, ‘আমি গত সপ্তাহ সবািকে অবিশ্বাস্যরকম খাটুনি করতে দেখেছি। ওদের উদ্যম, মানসিকতা আর কাজের আগ্রহ আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমাদের পদ্ধতির ওপর ভরসা রাখতে হবে এবং ধৈর্য ধরতে হবে।’
তবে অনুশীলনে সবাই যেভাবে খেটেছে, সেটা যে তার চাওয়াতেই, সেটা পরের কথায় বুঝিয়ে দিলেন, ‘আমি জানি না আগে বাংলাদেশের অনুশীলন কীরকম হতো। রায়ান কুকের কাজের আগ্রহ অনেক বেশি। বোলারদের কাছ থেকে শার্লের (ল্যাঙ্গেভেল্ট) চাওয়া অনেক বেশি। আমরা চাই অনুশীলনে তারা আরও বেশি ঢেলে দিক নিজেদের, সেরকম উদ্যম আমরা আশা করি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই তারা লম্বা স্পেল বল করতে পারে। আমার মনে হয় দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্পেল একই গতিতে বল করার জন্য ফিটনেসের মান অনেক বাড়াতে হবে।’
এটুকু পর্যন্ত আসলে ঠিকই ছিল। কিন্তু ল্যাঙ্গেভেল্টের পরের কথাতেই বিশেষ করে পেসারদের নিয়ে হতাশাটা আর গোপন রইল না, ‘ফাস্ট বোলারদের ফিটনেস নিয়ে আসলে আপোস করার কোনো সুযোগ নেই। আপনি বিশ্বের সেরা পেসারদের দেখুন, তারা দিনে ১৮-২২ ওভার বল করতে পারে। আমার মনে হয় না আমাদের এরকম বল করার মতো খুব বেশি তরুণ পেসার আছে। এটা অবশ্য চলমান একটা প্রক্রিয়া।’
তাহলে কি গত বছরের মিরপুর টেস্টেরই পুনরাবৃত্তি হবে চট্টগ্রামে? কোনো স্পেশালিস্ট পেসার ছাড়া নেমেছিল সেবার বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ইনিংস ব্যবধানে হারাতে অবশ্য তাতে সমস্যা হয়নি। এবারও সেরকম কিছু হতে পারে, সেই আভাস দিয়ে রাখলেন কোচ, ‘বাংলাদেশের হয়ে এটা আমার প্রথম টেস্ট। আমি দেখতে চাই তারা কীভাবে পারফর্ম করে। গত কয়েকটা টেস্টে ভালো করেছে, এমন একটা দলের আগাপাশতলা পরিবর্তন করাও কঠিন। আমি দেখতে চাই প্রথম টেস্টে সবকিছু কীভাবে কাজ করে। নির্বাচক ও সাকিব আমাকে একটা ভাবনার খোরাক দিয়েছে। নিজের কিছু প্রয়োগ করার আগে সেটার ওপর আমার আস্থা আছে।’
এই টেস্টেও তাই পেসারবিহীন একাদশ দেখার জন্য আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন।