পেসারদের 'জায়গামতো' ভূমিকা পালন করতে বললেন সাকিব
আগের দুই দিন অনুশীলনে দম ফেলার সুযোগ পাননি কেউ। আজ সকালে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে একটু ঢিলেঢালাই হলো। সূচি অনুযায়ী বেলা দশটা থেকে একটা পর্যন্ত ছিল, তবে বারটার পর সেভাবে আর কেউ করেননি। পেসাররা অবশ্য ঘাম ঝরিয়েছেন। তবে সেটা থেকে যদি ধরে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম টেস্টে পেসারদের বড় ভূমিকা রাখতে হবে তাহলে ভুল বার্তা পেতে পারেন। সাকিব আল হাসান বিস্তর রাখঢাক করেছেন, তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগামীকাল থেকে শুরু টেস্টে পেস-নির্ভর আক্রমণ দেখার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন।
কিছুতা আভাস কাল কোচ রাসেল ডমিঙ্গোই দিয়েছিলেন। টেস্টে ১৮-২০ ওভার করে দিনে বল করার মতো পেসার যে বেশি নেই, সেটা মেনে নিয়েছেন বাংলাদেশ কোচ। পুরনো রেসিপিতে আস্থা রাখার আভাসও দিয়েছেন। সাকিব অবশ্য সরাসরি কিছু বললেন না। নিজের পরিকল্পনাও ফাঁস করতে চাইলেন না। তার কথা সহজ, পরিকল্পনা বলে ফেললে সেটা করে লাভ কী? তবে পেসারদের নিয়ে যেসব কথা হলো তাতে সাকিবের ভাবনার একটা ছবি পাওয়া গেল।
২০১৬ সাল পর্যন্তও দেশের মাটিতে দুজন স্পেশালিস্ট পেসার নিয়ে নামত বাংলাদেশ। সেবার মিরপুর টেস্টে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর বদলে যায় ভাবনা। এরপর দেশের মাঠে টার্নিং ট্র্যাকই বানানো হয়েছে, আর নইলে একদম ফ্ল্যাট উইকেট। এই দুই জায়গাতেই পেসারদের অবদান রাখার সুযোগ প্রায় নেই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চট্টগ্রামে চার উইকেট নিয়েছিলেন, শ্রীলংকার বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন মোস্তাফিজ- সেটাই হয়ে থেকেছে দেশের মাটিতে এরপর পেসারদের বলার মতো সাফল্য।
এরপর গত বছর তো কোনো পেসার ছাড়াই মিরপুর টেস্টে নামল বাংলাদেশ। সেটা নিয়েতখন কথাও হয়েছিল বেশ। সেবার যা বলেছিলেন, সমালোচনার জবাবটা এবারও একইভাবে দিলেন সাকিব, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে পাত্তা দেই না (স্পিনিং ট্র্যাক নিয়ে সমালোচনা)। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় চার সিমার নিয়ে খেললে তখন তো আমরা সমালোচনা করি না। আমার কাছে মনে হয় না এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু আছে। আমি এই বিষয়ে একদমই চিন্তা করি না। আমাদের চেষ্টা থাকবে ম্যাচটা জেতার। সেটা দুইটা সিমার বা তিনটা সিমার নিয়ে খেলতে হলেও সেটা করতে হবে। একটা সিমার নিয়ে খেলতে হলে সেটা খেলতে হবে। যেটা আমরা প্ল্যান করব ওটাতে স্টিক থাকার চেষ্টা করব। ’
তবে সাকিবের এই কথায় কিছুটা অস্পষ্টতা থেকে যায়। সেটা সাকিব পরিষ্কার করলেন পরের কথায়, জেতার জন্য যা করা দরকার সেটা করতে তিনি প্রস্তুত, ‘আপনি এটা বলতে পারেন, এ কারণেই যে আমরা যখন দেশে খেলি, এখন খুব বেশি ব্যবহার করি না পেসারদের। কারণ এখন আমরা জেতার কথা চিন্তা করি। আগে যখন খেলেছি, তখন আমরা সবসময় ২টা পেসার খেলিয়েছি। তখন আমরা সেভাবে সাফল্য পাইনি। সে কারণেই আমরা পরিকল্পনা বদলেছি এবং আমার মনে হয় না এটাতে ভুল সিদ্ধান্ত যে আমরা জেতার জন্য অন্য কিছু চিন্তা করছি।’
সাকিব এরপর যে কথা বললেন, সেটা তাসকিন-রাহীদের জন্য বড় একটা বার্তা, ‘গুরুত্বপূর্ণ হলো যে পেসাররা যখনই সুযোগ পাবে, তখন যেন ভালো করতে পারে। তারা যেন এটা দলকে বোঝাতে পারে যে তাদের জায়গাটা প্রাপ্য। তাহলে ভালো হবে। বিদেশে গেলে তো বেশির ভাগ সময় ২-৩ পেসারই খেলে। ওই জায়গায় ওদের পারফরম্যান্স বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশে স্পিনারদের পারফরম্যান্স বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই টেস্টের পরই আমাদের ভারত ও পাকিস্তানে সিরিজ, দুটিই দেশের বাইরে। তখন আমাদের পেস বোলারদের বড় ভূমিকা পালন করতে হবে যদি টেস্ট জিততে হয়। ওদের ভূমিকা নাই, এটা তাই নয়। তবে জায়গামতো ভুমিকা পালন করতে হবে।’
কিন্তু বিদেশেও তো পেসারদের পারফরম্যান্স দেশের মতোই ভুলে যাওয়ার মতো। ডমিঙ্গো কাল বলেছেন, পেসারদের লম্বা স্পেলে বল করার প্রক্রিয়াটা চলমান। পেসারদের এই সমস্যার কারণ সাকিব অবশ্য নিজে খুঁজতে চাইলেন না আপাতত, ‘বলাটা মুশকিল আসলে। কারণ আমি যেহেতু পেসার না। মন মানসিকতা বোঝা কঠিন। ঘরোয়াতে অত বোলিং করে অভ্যস্ত না। ফিটনেসের অভাবও হতে পারে। তবে যেটাই হোক, আমি নিশ্চিত পেস বোলিং কোচ বোলারদের সাথে এ ব্যাপারে কাজ করবে, এ জায়গায় উন্নতি করবে।’