চট্টগ্রামে রশিদের ঘূর্ণিপাকে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ
২য় দিনশেষে, আফগানিস্তান ১ম ইনিংস ৩৪২ অল-আউট (রহমত ১০২, আসগর ৯১, আফসার ৪১; তাইজুল ৪/১১৬, সাকিব ২/৬৪) ; বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ১৯২/৮* (মুমিনুল ৫২, মোসাদ্দেক ৪৪*, তাইজুল ১৪*, রশিদ ৪/৪৭, নবি ২/৫৩)
বাংলাদেশ ২ উইকেটে ১৪৮ রানে পিছিয়ে
রশিদ খানের স্বপ্নের দিনে চট্টগ্রাম টেস্টে ধুঁকছে বাংলাদেশ। স্পিন-অস্ত্রে আফগানিস্তানকে ঘায়েল করার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের, উলটো তারাই পড়ে গেছে আফগান স্পিনের ঘূর্ণিপাকে। ব্যাটিংয়ে ঝড়ো ফিফটির পর বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিয়ে স্বাগতিকদের মূল ক্ষতিটা করেছেন আফগান অধিনায়ক রশিদ খানই। ৮৮ রানে ৫ উইকেটের পর একসময় ১৪৬ রানে ৮ উইকেটে পরিণত হওয়া বাংলাদেশের সামনে এখনও অকূল পাথার। মোসাদ্দেক হোসেন ও তাইজুল ইসলামের ৮ম উইকেটে ৪৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি আপাতত একটু অক্সিজেন দিয়েছে তাদের, তবে চট্টগ্রাম টেস্টে ফিরে আসতে হলে তাদের প্রয়োজনও আরও অনেক কিছু।
দিনের শুরুতে বাকি থাকা ৫ উইকেটে আফগানিস্তান যোগ করেছিল আর ৭১ রান, যার ৫১ রানই করেছেন রশিদ। এরপর বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা একে একে ঘায়েল হয়েছেন, কেউ দারুণ ডেলিভারির শিকার, কেউবা উইকেট বিলিয়ে এসেছেন স্বেচ্ছায়। আফগানিস্তান তাদের রিভিউ ঠিকঠাক ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশের অবস্থা হতে পারতো আরেকটু বেশি বাজে।
শুরুটা হয়েছিল সাদমান ইসলামের ডাক দিয়ে, ইয়ামিনের অফস্টাম্পের বাইরের বলে তিনি খোঁচা দিয়েছেন ইনিংসের চতুর্থ বলেই। তিনে আসা লিটন ও সৌম্য লাঞ্চের আগে-পরে প্রায় ১৫ ওভার স্কোরিংয়ের চেয়ে টিকে থাকাই শ্রেয় মনে করেছিলেন। জাহির খানকে ছয়ের পরের ওভারে চার মেরে সে শেকল ভাঙার ইঙ্গিত দিলেন লিটন, ওপাশে সৌম্য মনযোগের শেকলটা নবির বলে ছিঁড়ে যাওয়াতেই ঘটল বিপত্তি। ক্রিজের অনেক পেছনে গিয়ে খেলতে গিয়ে মিস করে গেছেন বলটা, রিভিউয়ের কথাও ভাবেননি। নবি এদিন ছিলেন নীরব ঘাতকের মতো, রশিদকে দারুণ সমর্থন দিয়ে গেছেন তিনি তার আঁটসাঁট ও লাইন-লেংথের সূক্ষ্ণ তারতম্য ঘটিয়ে, যে দুই উইকেট নিয়েছেন, দুটি দারুণ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে।
বাংলাদেশের ওপর চাপটা ফিরে এসেছে বারবার। লিটন শট খেলেছেন আরও কিছু, রশিদকে আর সামলাতে পারেননি। শর্ট অফ আ লেংথ বলটা ব্যাকফুটে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে পুরোপুরি মিস করে লিটন হয়েছেন বোল্ড। সাকিবের সঙ্গে রশিদেরে একটা খন্ডযুদ্ধ চলেছে ফ্লাইট, গুগলি নিয়ে, শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়েছে সাকিবকে। সামনে ঝুঁকে ডিফেন্ড করতে গিয়ে মিস করে বাংলাদেশ অধিনায়ক হয়েছেন এলবিডব্লিউ, রিভিউও রক্ষা করতে পারেনি তাকে। এক বল পর বাংলাদেশের বিপদ বেড়েছে আরও, মুশফিকের উইকেটে।
যেমন ছিল বাংলাদেশের দিন/বিসিবি
ডিফেন্ড করেছিলেন মুশফিক, বল তার বুটে লেগে উঠেছিল শর্ট লেগে ক্যাচ। অন-ফিল্ডের আউটের সফট সিগন্যাল ওভারটার্ন করতে পারেননি টিভি আম্পায়ার, চা-বিরতির আগেই ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ ধুঁকছিল তখন। বিরতির পর মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে নতুন শুরুর আশা ভেস্তে গেছে মুমিনুলের। রশিদের গুগলি পড়তে পারেননি মাহমুদউল্লাহ, নিচু হওয়া বলটায় ব্যাটও সময়মতো না নামাতে পেরে হয়েছেন বোল্ড।
মোসাদ্দেক-মিরাজ আসতে বাকি তখনও, তবে মুমিনুল প্রতি-আক্রমণ ছাড়া অন্য কোনও উপায় খুঁজে পেলেন না। মুহুর্তের জন্য কাজেও দিল সেটি, ৪৪১৪৪-ফরম্যাটের স্কোরিং শটে ফিফটি হয়ে গেল মুমিনুলের। তবে নবির ঝুলিয়ে দেওয়া বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অনে ধরা পড়লেন মুমিনুল, ৫২ রান করেই। কাইস আহমেদ, আফগানিস্তানের পঞ্চম বোলার হিসেবে এসেছিলেন ৪৩তম ওভারে। তার লেগস্পিনে অ্যারাউন্ড দ্য লেগে বোল্ড হয়ে মিরাজ ফিরেছেন মোসাদ্দেককে কিছুক্ষণ সঙ্গ দেওয়ার পর। ১৩ রানে উইকেটকিপারের হাতে জীবন পাওয়া মোসাদ্দেক শুরুটা করেছিলেন মুমিনুলের মতোই আক্রমণাত্মক। পরে নিজেকে সামলে নিয়েছেন তিনি, থেকেছেন সুযোগের অপেক্ষায়। তাইজুল ২ চারে করেছেন ১৪ রান, এখন পর্যন্ত খেলেছেন ৫৫ বল। এখন পর্যন্ত মোসাদ্দেককে নিজের মতো খেলতে দিয়েছেন তিনি, মোসাদ্দেক অপরাজিত আছেন ৭৪ বলে ৪৪ রানে।
সকালে তাইজুলের বোলিংয়েই দিনের শুরুটা দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের, তিনি ফিরিয়েছেন আগের দিনের দুই সেট ব্যাটসম্যানকে-- স্লগ করতে গিয়ে খাড়া ওপরে ক্যাচ তুলে ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন আসগর, মিডলস্টাম্প লাইনে পড়ে টার্ন করে যাওয়া বলে বোল্ড হয়ে ৯ রানের জন্য ফিফটি মিস করেছেন আফসার জাজাই।
এর আগেই নেমেছেন রশিদ। প্রথমে সুইপের দিকেই সব মনযোগ ছিল তার, এরপর শুরু করেছেন বড় শট খেলা। সাকিব ওপাশে কাইস আহমেদ ও ইয়ামিনকে ফেরালেও রশিদ তার সহজাত হিটিং সামর্থ্য দেখিয়ে গেছেন। ৩৩ রানে আউট হতে পারতেন, তবে বাংলাদেশের রিভিউটা বৃথা গেছে তাইজুল ওভারস্টেপিং করায়।
ক্ষণিকের জন্য চট্টগ্রামে ফিরেছিল ওল্ড ট্রাফোর্ডের স্মৃতি, স্মিথ-স্টাইলে বারদুয়েক বল লিভ করে সেটি আবার মনে করিয়ে দিলেন রশিদ। ২ চার ও ৩ ছয়ে ৬১ বলে ৫১ রান করে থেমেছেন ফিরতি ক্যাচ দিয়ে, মিরাজ যেটি নিয়েছেন একাধিকবারের চেষ্টায়।
ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়েও রশিদকে শীঘ্রই থামাতে পারেনি বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্ট হাত থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চোখরাঙানি ভালভাবেই দিচ্ছে তাই।