ব্যাটসম্যানদের 'ভুল' এবং সাকিবের 'আত্মপক্ষ সমর্থন'
এমন একটা ভুলে যাওয়া দিনের পর অধিনায়ক যখন সংবাদ সম্মেলনে আসবেন, স্বাভাবিকভাবেই সতীর্থদের হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করবেন। সাকিব আল হাসান সেটা করলেনও আজ। ব্যাটিং অর্ডারে ওলটপালট বা সেট হয়েও আউট হয়ে আসা- এসব নিয়ে তার মতো করেই ব্যাখ্যা দিলেন সাকিব। তবে এত কিছুর পরও আত্মবিশ্বাসী, এখনও এই ম্যাচ জেতা সম্ভব।
উইকেট নিয়ে সাকিব হতাশ হতে পারেন, তবে এই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দুর্দশা তাতে আড়াল হয়ে যাচ্ছে না। স্পিন বুঝতেই পারেননি কেউ, বিশেষ করে রশিদ খানকে কীভাবে সামলাবেন সেরকম পরিকল্পনা ছিল কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে। সাকিব অবশ্য বললেন, পরিকল্পনা থাকলেও সেটা তারা কাজে লাগাতে পারেননি, ‘হয়তো ভালোভাবে অ্যাপ্লাই করতে পারিনি। আমাদের মোসাদ্দেক-তাইজুল যেভাবে ব্যাটিং করেছে, এখানে রান করা সম্ভব, তাড়া করাও সম্ভব, সেটা প্রমাণ করেছে। ব্যাটসম্যানরা আরেকটু বেটার অ্যাপ্লিকেশন করলে রান আরও ভালো হত।’
বিশেষ করে মুমিনুল ও লিটন উইকেটে কিছুটা মানিয়ে নেওয়ার পরও যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে প্রশ্নটা আরও জোরেশোরেই উঠবে। সেট হয়েও বাজে শট খেলে উইকেট দিয়ে এসেছেন মুমিনুল। সাকিব যদিও বললেন, সিদ্ধান্তটা ঠিকই ছিল সতীর্থের, ‘মুমিনুল যতক্ষণ রান করেছে, এভাবেই রান করেছে। আমি বলব না, বলটা মারা উচিত ছিল না। কিন্তু এক্সিকিউশন বেটার করা উচিত ছিল। ছয় না হলেও যেন চার হতে পারত। ওরকম হলে ভালো হতো।’
লিটন অবশ্য রশিদের বলটা বুঝতেই পারেননি, বোল্ড হয়ে গেছেন। সাকিব অবশ্য এখানে কিছুটা টেকনিক্যাল সমস্যা দেখছেন, ‘লিটনের বেলায় বল এখানে নিচু হয়েছে। কালও ছিল, আজও ছিল। সেই হিসেবে প্ল্যান করা হয়তো উচিত ছিল। সেই হিসেবে ক্রস ব্যাটেড শট খেলার সময় আরেকটু পরিকল্পনা করা উচিত ছিল। কারণ ওর ব্যাটিং খুবই ভালো হচ্ছিল। ভালো অবস্থায়ও চলে গিয়েছিল। আমাদফের ভালো একটা জুটি হয়ে গেলে আমাদের উইকেট আটটার জায়গায় হয়তো পাঁচটা থাকত বা চারটা থাকত।’
মনযোগ বা টেকনিকের সমস্যা না হয় বাদ গেল। কিন্তু পরিকল্পনাও কি ঠিক ছিল? নইলে লিটনকে হুট করে তিনে উঠিয়ে আনা হবে কেন? যেখানে মুমিনুল তিনে অনেক দিন ধরেই থিতু। সাকিবের ব্যাখ্যা, ‘আসলে ওই সময় আমরা একজন ডানহাতি বাঁহাতি রাখতে চেয়েছিলাম। সেজন্যই লিটনকে তিনে নিয়ে আসা হয়। আর ও স্পিন ভালো খেলে। আর এমন নয়, যে মুমিনুল চারে খেলেনি। আর লিটন নবীকে ভালোও খেলছিল। ওই পরিকল্পনায় আমরা সফলও ছিলাম। নবী ভাই অবশ্যই বাঁহাতিদের জন্য বেশি কার্যকরী। যদিও টেস্ট ক্রিকেটে সেরকম ডানহাতি বাঁহাতি করা কঠিন, তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি যতক্ষণ এটা করা যায়।’
এরকম উইকেটে মুশফিক কেন ছয়ে ব্যাট করেছেন সেই প্রশ্নও উঠল। যেখানে এই দলের তিনি সেরা ব্যাটসম্যান। সাকিব বললেন, ‘দেখুন, মুশফিক ভাই উনার ক্যারিয়ারে পাঁচ বা ছয়ে বেশি ব্যাট করেছেন। এই দুই পজিশনে উনি আর নাইলে আমি ব্যাটিং করছি। আর এই জিনিসটা গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে হয়ে আসছে। আবার কিপিং না করলে উনি ওপরেও ব্যাটিং করেছেন। একটা প্লেয়ারের কমফোর্ট জোন থাকতেই পারে। আমার মনে হয়, উনি পাঁচ বা ছয়েই সেটা পছন্দ করেন। অবশ্যই সেটা কিপিং করলে। নইলে ওপরে ব্যাট করার সুযোগ থাকে। আজ যেহেতু লম্বা সময় কিপিং করেছে, একটু বিশ্রামের দরকার ছিল তার।
ম্যাচের এখন যে অবস্থা, তাতে অধিনায়কের জয়ের আশার করাও কঠিন। তবে তাইজুল-মোসাদ্দেক যেভাবে ব্যাট করেছেন, সাকিব তাতে আস্থা হারাচ্ছেন না, ‘আমি তো আশা করব এই দুই উইকেট অন্তত এক সেশন ব্যাট করে। ৭০-৮০ রান পর্যন্ত রান কমিয়ে আনতে পারলে সেটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুবিধা হতো। যদিও কাজটা কঠিন হবে, যেভাবে ব্যাট করেছে আমি বিশ্বাস করতেই পারি। এরপর ভালো বোলিং তো করতেই হবে। বিশ্ব ক্রিকেটে পিছিয়ে থাকার পরও কামব্যাক অনেকেই করেছে। ওরকম ম্যাজিকাল কিছু আমাদের বোলাররা স্পেশালি করতে পারলে এরপর আমাদের ব্যাটসম্যানদের ওপর নির্ভর করতে হবে। সবার অবদান দরকার হবে। এমন একটা পরিস্থিতিতে আছি, সবাই যে জায়গার থেকে ভালো কিছু করতে পারলেই এই ম্যাচ বাঁচানো সম্ভব। এক দুজন কিছু করতে পারবে কি না আমার সে নিয়ে সন্দেহ আছে।’