নেইমারময় ম্যাচে শুধু জয়টাই পাওয়া হল না ব্রাজিলের
৬ জুন কাতারের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে অ্যাঙ্কেলের ইনজুরিতে পড়ে ব্রাজিলের কোপা আমেরিকা স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। ঠিক তিন মাস পর ইনজুরি কাটিয়ে ‘সেলেসাও’দের একাদশে ফিরলেন নেইমার; গোল করলেন, করালেনও। কিন্তু ফেরাটা ঠিক স্মরণীয় করে রাখতে পারলেন না তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লোরিডার হার্ডরক স্টেডিয়ামে প্রীতি ম্যাচে কলম্বিয়ার সাথে ২-২ গোলে ড্র করেছে ব্রাজিল।
নেইমারের ফেরার ম্যাচে কলম্বিয়ানদের বিপক্ষে রীতিমত ‘অল স্টার’ ফরোয়ার্ড লাইন নামিয়েছিলেন ব্রাজিল কোচ তিতে। নেইমারের সাথে একাদশে ছিলেন ফিলিপ কুতিনিয়ো, রিচার্লিসন এবং রবার্তো ফিরমিনো। ব্রাজিল পূর্ণশক্তির দল নামালেও কলম্বিয়া কোচ কার্লোস কুইরোজের একাদশ ছিল তারুণ্য নির্ভর। ছিলেন না রাদামেল ফালকাও বা হামেস রদ্রিগেজ; আক্রমণে নেমেছিলেন দুভান জাপাতা এবং লুইস মুরিয়েল। কিছুটা খর্বশক্তির হলেও ম্যাচে প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল কলম্বিয়াই। ১৩ মিনিটে রাইটব্যাক হুয়ান কুয়াদ্রাদোর ক্রস থেকে জাপাতার হেড চলে যায় ব্রাজিল গোলরক্ষক এডারসন মোরায়েসের গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে। ব্রাজিলের মত দলের বিপক্ষে সহজ সুযোগ হাতছাড়া করার চড়া মাশুলই দিতে হয়েছে কলম্বিয়াকে।
জাপাতার মিসের মিনিট ছয়েক পর নেইমারের কর্নারে হেড করে দলকে লিড এনে দেন কাসেমিরো। তবে হার্ডরক স্টেডিয়ামে লিড নেওয়ার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। ২৪ মিনিটে বল ক্লিয়ার করতে যেয়ে মুরিয়েলের বুকে পা দিয়ে আঘাত করে বসেন লেফটব্যাক অ্যালেক্স সান্দ্রো, পেনাল্টির বাঁশি দেন রেফারি। ১২ গজ থেকে এডারসনকে পরাস্ত করতে ভুল করেননি তিনি। ২৯ মিনিটে আবারও ব্রাজিলের বল পাঠিয়েছিল কলম্বিয়া, কিন্তু ইয়েরি মিনার হেড জালে জড়ালেও অফসাইডে বাতিল হয় গোলটি। তবে লিড ঠিকই নিয়েছিল কুইরোজের দল। ৩৪ মিনিটে দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে ডিবক্সে জাপাতার পাস নিয়ন্ত্রণে এনে টপ কর্নারে আগুনে এক শটে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন মুরিয়েল। ব্রাজিলের মত আরেকটু হলেই এগিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ বাদেই লিড হারাতে হত কলম্বিয়াকে।
৩৯ মিনিটে কাসেমিরোর থ্রু পাসে কলম্বিয়া গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনাকে একা পেয়ে যান রিচার্লিসন; কিন্তু দারুণভাবে ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডকে রুখে দেন দেশের হয়ে শততম ম্যাচ খেলতে নামা ওসপিনা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে ব্রাজিলকে আর আটকাতে পারেননি ওসপিনা। ৪৮ এবং ৫৩ মিনিটে দুটি সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু কোনবারই জাল খুঁজে পাওয়া হয়নি। অবশেষে ৫৮ মিনিটে কাসেমিরোর ডিফেন্সচেরা লম্বা পাসে অধিনায়ক দানি আলভেজের ক্রস বাঁ-পায়ের আলতো টোকায় জালে পাঠান নেইমার। গত বছরের নভেম্বরের পর আবার ব্রাজিলের জার্সিতে গোল পেলেন তিনি। সমতায় ফিরে কলম্বিয়ানদের রীতিমত আক্রমণ জোয়ারে ভাসিয়ে দেয় ব্রাজিল। ৬৮ মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে কুতিনিয়োর শট ফিরিয়ে দেন ওসপিনা। ‘সেলেসাও’দের আক্রমণ দমাতে ৫-৪-১ ফর্মেশনে খেলতে থাকে কুইরোজের দল। কাজও অবশ্য হয় তাতে।
৭৭ মিনিটে নেইমারের ফ্রিকিক অল্পের জন্য হাওয়ায় ভাসানো ফ্রিকিক ছাড়া শেষদিকে পজেশন ধরে রাখলেও ওসপিনাকে আর তেমন পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি ব্রাজিল। উল্টো ৮৮ মিনিটে জয় ছিনিয়ে আনার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়া। কিন্তু ডিবক্সে বল পেয়ে দিয়াজের শট চলে যায় গোলের বাইরে দিয়ে। শেষ পর্যন্ত নেইমারময় ম্যাচে ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় দুই দলকে। ফেরাটা স্মরণীয় করে রাখলেন নেইমার। হাজারো বিতর্কের জবাবটা আরও একবার মাঠেই দিলেন তিনি। ব্রাজিলের জার্সিতে নেইমারের গোলসংখ্যা এখন ৬১। আর ২ গোল করলেই রোনালদো লিমাকে (৬২) টপকে বনে যাবেন ব্রাজিলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা, সামনে থাকবেন কেবল পেলে (৭৭)। খুব শীঘ্রই হয়তো কালো মানিককেও ছাড়িয়ে যাবেন নেইমার।