• আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট
  • " />

     

    চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ আফগানদের হাতে, বাংলাদেশের দরকার অলৌকিক কিছু

    চট্টগ্রামের নিয়ন্ত্রণ আফগানদের হাতে, বাংলাদেশের দরকার অলৌকিক কিছু    

    ৩য় দিনশেষে, আফগানিস্তান ১ম ইনিংস ৩৪২ অল-আউট (রহমত ১০২, আসগর ৯১, আফসার ৪১; তাইজুল ৪/১১৬, সাকিব ২/৬৪) ও ২য় ইনিংস ২৩৭/৮ (ইব্রাহিম ৮৭, আসগর ৫০, সাকিব ৩/৫৩) ; বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ২০৫ অল-আউট (মুমিনুল ৫২, মোসাদ্দেক ৪৮*, রশিদ ৫/৫৫, নবি ৩/৫৬)
    আফগানিস্তান ২য় ইনিংসে ৩৭৪ রানে এগিয়ে


    পরিসংখ্যানের ভক্ত হতে পারেন আপনি। সেটি বলছে, বাংলাদেশের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রানতাড়া করে জেতার রেকর্ডটি ২০০৯ সালের, ২১৫ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশের ৩০০-পেরুনো স্কোর আছে তিনটি, যার শেষটি ২০১০ সালে। তবে তিনটি ম্যাচই হেরেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে তৃতীয় দিন আলোকস্বল্পতায় খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার আগে আফগানিস্তানের ২য় ইনিংসে লিড ৩৭৪, পরিসংখ্যান ও ইতিহাস অনুযায়ী যা বাংলাদেশের নাগালের বাইরে। এ টেস্টে বাকি এখনও দুই দিন, সামনে রশিদ খানসহ আফগানিস্তানের স্পিন-বৈচিত্র। আবহাওয়ায় বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে, এ ম্যাচে হার ঠেকাতে বাংলাদেশের তাকিয়ে থাকতে হবে আবহাওয়ার দিকে। অথবা, করতে হবে অলৌকিক কিছু। 

    ২য় ইনিংসের শুরুতে সাকিবের জোড়া আঘাত সামলে আসগর আফগানের ম্যাচে দ্বিতীয় ফিফটি ও ইব্রাহিম জাদরানের ৮৭ রানে ভর করে চট্টগ্রাম টেস্টের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে আফগানিস্তান। প্রথম ইনিংসের বড় লিড ও আসগর-ইব্রাহিমের জুটি মিলিয়ে বাংলাদেশের ওপর চেপে বসেছে তারা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ঠিক সুবিধা করে উঠতে পারেননি বাংলাদেশের স্পিন-সর্বস্ব বোলিং আক্রমণ, খুব বেশি আলগা বলের সুবিধা তুলেছে আফগানিস্তান। 

     

     

    ১৩৭ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামা আফগানিস্তান শুরুতে চাপেই পড়েছিল, সাকিব প্রথম ওভারেই পরপর দুই বলে নিয়েছিলেন দুই উইকেট। ইহসানউল্লাহ এলবিডব্লিউ হয়েছেন ট্র্যাপড ইন ফ্রন্ট হয়ে, পরের বলে রহমত একটু বেরিয়ে এসে চিপ করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন। ইব্রাহিমের সঙ্গে কিছুক্ষণ ঝুলে ছিলেন হাসমতউল্লাহ শাহিদি, নাঈমের ৭.২ ডিগ্রী টার্ন করা বলে স্লিপে ক্যাচ দেওয়ার আগে। 
     


    ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে এসে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট হয়ে গেছে রশিদের/বিসিবি


    তিন উইকেটের পর আফগানিস্তানকে কম রানে বেঁধে ফেলার একটা সম্ভাবনা তৈরি করেছিল বাংলাদেশ, প্রথম ইনিংসের মতোই। তবে আবারও চতুর্থ উইকেটে আসগরের সঙ্গে একটা জুটি ভেস্তে দিয়েছে সে সম্ভাবনা। প্রথম ইনিংসে আসগরের সঙ্গে ছিলেন হাসমতউল্লাহ, এবার ইব্রাহিম। যতক্ষণে সে জুটি ভেঙেছে তাইজুলের বলে আসগর ইনসাইড-এজে লেগস্লিপে ধরা পড়ায়, ততক্ষণে আফগানিস্তানের লিড হয়ে গেছে ২৭৩। 

    এমনিতে এ দুজনের জুটি রীতিমতো শাসন করেছে বাংলাদেশ বোলারদের। স্টাম্পের বাইরে বা লেংথের দিক থেকে জায়গামতো পেলে তারা শাস্তি দিয়েছেন সেগুলোকে। বাংলাদেশ স্পিনাররাও দিয়েছেন হাফভলি, লং-হপ। ক্লোজ-ইনে কঠিন কিছু সুযোগ গিয়েছিল, তবে বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না ভাগ্য। আসগর শেষ পর্যন্ত ১২২ বলে করেছেন ৫০ রান, ৪ চার ও ২ ছয়ে। ইব্রাহিম করেছেন প্রথম ফিফটি, ছিলেন দারুণ দৃঢ়চেতা। ৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ৪টি ছয়, আফগানিস্তান ইতিহাসের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটা পেয়ে যাওয়ার খুব কাছেই গিয়েছিলেন। 

    চা-বিরতির পর মনযোগে ছেদ পড়েছে তার, তাইজুলকে তুলে মারতে গিয়ে মুমিনুলের হাতে ধরা পড়েছেন ৮৭ রান করে। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে আফগানিস্তান, তবে উঠেছে রানও। আক্রমণাত্মক মানসিকতায় সুইপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছেন মোহাম্মদ নবি, মিরাজের বলে, নিজের শেষ টেস্ট ইনিংসে। নাঈম হাসানকে এক ওভারে পাঁচ চার মারার পর তাইজুলের তীক্ষ্ণ টার্নে বোল্ড হয়েছেন ২২ বলে ২৪ রানের ক্যামিও খেলা রশিদ খান। আর দ্বিতীয় নতুন বলে কাইস আহমেদকে এলবিডব্লিউ করেছেন সাকিব।  

    এর আগে সকালে বাকি থাকা ২ উইকেট হারাতে বাংলাদেশের লেগেছিল মিনিট সতেরো, ২৩ বল। তাইজুল আত্মাহুতি দিয়েছেন নবিকে বড় শট খেলতে গিয়ে, বোল্ড হয়েছেন তিনি। নাঈম হাসান এলবিডব্লিউ হয়েছেন রশিদের বল লিভ করতে গিয়ে, আগের ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল না নিলেও পরের ওভারে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক নাঈমকে দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। এ উইকেট দিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে দ্বিতীয়বার পাঁচ উইকেট হয়ে গেছে রশিদের।

    কৌশল, মাঠের খেলায় এভাবেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ বারবার। পরিসংখ্যান আর ইতিহাসও আশা জোগাচ্ছে না। চট্টগ্রামে ঘটবে অলৌকিক কিছু?