আর্থারকে কথা দিয়েও কথা রাখেনি মিসবাহদের ক্রিকেট কমিটি
সমীকরণের ধাপগুলি এমন- পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট কমিটিতে মিসবাহ-উল-হক ও ওয়াসিম আকরামের নাম প্রস্তাব করলেন কোচ মিকি আর্থার। সেই কমিটির সামনে নিজের কাজ নিয়ে জবাবদিহিতা করতে হাজির হতে হলো আর্থারকে। আর্থার পাকিস্তান জাতীয় দলের কোচিংয়ের কাজটা চালিয়ে যেতে চাইলেন। তাদেরকে 'বিশ্বাস করে' বললেন এমন কিছু কথা, যেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই ক্রিকেট কমিটি তার মেয়াদ না বাড়ানোর পরামর্শ দিল। আর্থার কাজটা হারিয়ে ফেললেন। তার জায়গায় নতুন হেড কোচ হিসেবে এলেন মিসবাহ।
এই অদ্ভুত চক্রপূরণে সমীকরণ থেকে ছিটকে গেল আর্থার নামের চলকের নাম। সেই আর্থার বলছেন, পাকিস্তানকে কোচিং করানোর সময় কোনও কিছু নিয়ে আক্ষেপ নেই তার, শুধু একটি বিষয় ছাড়া- ক্রিকেট কমিটির সদস্যদের ‘বিশ্বাস’ করে কিছু কথা বলেছিলেন আর্থার, তবে ‘তারা সে অনুযায়ী কাজ করেননি’।
বিশ্বকাপের পর আর্থারের মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় পিসিবি। কোচের বিজ্ঞপ্তির দেওয়ার পর প্রথমে প্রস্তুতি ক্যাম্প চালানোর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মিসবাহকে, যিনি আবার শুরুতে পাকিস্তানের কোচের জন্য আবেদন করেননি আনুষ্ঠানিকভাবে। এরপর পিসিবি তাকে অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয় কোচিংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার। মিসবাহ এরপর আবেদন করেন, কোচ হন, সঙ্গে হয়ে যান প্রধান নির্বাচকও।
ইএসপিএনক্রিকইনফোর এক পডকাস্টে আর্থার বলেছেন, পুরো মেয়াদটা দারুণভাবে উপভোগ করেছেন তিনি, দলটাকে গুছিয়ে এনেছিলেন বলে চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কাজটা। তবে পারেননি শেষ পর্যন্ত, “একমাত্র হতাশার ব্যাপার- আমি কিছু মানুষকে বিশ্বাস করেছিলাম যারা সে অনুযায়ী কাজ করেনি। আমি (পিসিবির) কর্তাব্যক্তিদের কথা বলছি না, আমি ক্রিকেট কমিটির লোকদের কথা বলছি যাদের আমি বিশ্বাস করেছিলাম, যারা একটা কথা বলে করেছে আরেকটা। এটাই হতাশার দিক।”
ক্রিকেট কমিটিতে মিসবাহর নাম প্রস্তাব করেছিলেন আর্থারই
সেই ক্রিকেট কমিটিতে মিসবাহদের নাম প্রস্তাব করার ব্যাপারটিও জানিয়েছেন তিনি, “আমি বলেছিলাম, মিসবাহ অসাধারণ হবে (সে কমিটিতে), কারণ সে পাকিস্তান ক্রিকেটের একজন ‘গডফাদার’ ছিল এবং আছে। মিসবাহ অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব, এ ব্যাপারে কোনও ভুল নেই। এবং এমনও বলেছিলেন, আমি ভেবেছিলাম ওয়াসিম আকরাম ক্রিকেট কমিটিতে ভাল করবে, কারণ সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খুব ভাল বুঝে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ভাবমূর্তি দারুণ।”
অবশ্য কাজ হারিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও মিসবাহ দারুণ করবেন বলে বিশ্বাস তার, “এরাই সেসব মানুষ, যাদের আমি সমর্থন দিয়েছিলাম, এবং যাদের সঙ্গে কাজ করা উপভোগ করেছি। যেমনটি বলেছি, তাদেরকে একটা কাজ দেওয়া হয়েছিল, তারা পাকিস্তান ক্রিকেটের স্বার্থরক্ষায় নতুন কাউকে চেয়ে সে কাজটিই করেছে। মিসবাহ আমাদের চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া কমিটিতে ছিল, এবং পরে সে-ই আমার উত্তরসূরি হয়েছে- এই ব্যাপারটা ঘটে গেছে। মিসবাহ ভাল কাজ করবে, সে ভাল মানুষ, আর পাকিস্তান ক্রিকেট তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি এই কাজের প্রতিটি মুহুর্ত উপভোগ করেছি বলেই (কাজ চালিয়ে যেতে না পেরে) হতাশ।”
ক্রিকেট কমিটির সামনে হাজির হয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে জানিয়ে আর্থার বলেছেন, কিছু কিছু তথ্য পুরো সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি, “অনেক প্রশ্নই করা হয়েছে, যেগুলো নিয়ে বিতর্কের সুযোগ আছে। এটা ব্যক্তিগত মতামতের ব্যাপার। কিছু ব্যাপার আছে, যেগুলো ঘটে যাওয়ার পর প্রশ্ন তোলা হয়েছে- কিছু ক্রিকেট নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে। এবং অনেক তথ্যই তারা আমাকে দিয়েছে, যেগুলো আংশিক ভুল। এবং আমার ধারণা, সেসব তথ্যের ভিত্তিতেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
“তবে আবারও বলি, এটা দারুণ একটা সময় ছিল। হ্যাঁ, দিনের শেষে আমি হতাশ, তবে পাকিস্তানের সঙ্গে অসাধারণ তিনটি বছর আমি কাটিয়েছি।”