জার্মানির সঙ্গে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও ড্র নিয়ে ফিরল আর্জেন্টিনা
আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ
ফলাফল জার্মানি ২-২ আর্জেন্টিনা
২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনাল। এরপর স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আরেকবার প্রীতি ম্যাচে দেখা হয়েছিল দুইদলের। সেই ম্যাচের পর কেটে গেছে পাঁচ বছর, আন্তর্জাতিক ফুটবলের শীর্ষ দুই দলের পতনের গ্রাফটা অনেকটা একই রকম। পাঁচ বছর বাদে প্রীতি ম্যাচে আবারও দেখা দু’দলের। ব্রাজিলে সেই ম্যাচের নিষ্পত্তি হয়েছিল শেষ মুহূর্তের গোলে, এবারও জার্মানি-আর্জেন্টিনা ম্যাচের ফলাফল নির্ধারিত হল শেষদিকের গোলেই। ম্যাচের মাহাত্ম্যে অবশ্য বিরাট ফারাক। ‘আলবিসেলেস্তে’দের জার্সিতে অভিষেকেই গোল করে জার্মানির বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলের ড্র ছিনিয়ে এনেছেন লুকাস ও’কাম্পোস।
ডর্টমুন্ডের সিগনাল ইদুনা পার্কে নিছক আনুষ্ঠানিকতার ম্যাচ হলেও দু’দলের কেউই ছাড় দেয়নি এতটুকু। প্রথমার্ধটা খেলেছে জার্মানি, পরের অর্ধে আর্জেন্টিনা। ১৫ আর ২২ মিনিটে জার্মানি দুই গোল করে বড় জয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে শক্তির পরীক্ষা দিয়ে হার এড়িয়েছে আর্জেন্টিনা।
জার্মানির মাঠে কোচ লিওনেল স্কালোনির অধীনে নিজেদের সেরা খেলাটাই হয়তো খেলল আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন ২৭ বছর বয়সী বেয়ার লেভারকুসেন স্ট্রাইকার লুকাস আলারিও। দুই গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচে ফেরার আশায় ৬৩ মিনিটে পাউলো দিবালাকে তুলে তাকে নামিয়ে দিয়েছিলেন স্কালোনি। কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে আলারিও সময় নিয়েছেন মাত্র তিন মিনিট। ৬৬ মিনিটে মার্কাস আকুনিয়ার বাঁ-প্রান্ত থেকে করা ক্রসে হেড করে জার্মান গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগানকে পরাস্ত করেন আলারিও।
অবশেষে জার্মানির জার্সিতে প্রথম গোল, উল্লাসের চেয়ে স্বস্তিটাই হয়তো বেশি কাই হাভের্টসের
দ্বিতীয়ার্ধের বাকিটা সময় আক্রমণে এগিয়ে ছিল স্কালোনির দলই, একের পর এক আক্রমণে জার্মান রক্ষণদুর্গ কাঁপিয়ে দিচ্ছিল তারা। প্রথমার্ধে জ্বলে ওঠা কাই হাভের্টসদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না দ্বিতীয়ার্ধে। জার্মান রক্ষণভাগকে চেপে ধরলেও গোলটাই পাওয়া হচ্ছিল না লাউতারো মার্টিনেজদের। শেষ পর্যন্ত দলকে সমতায় ফেরানোর পথটাও দেখিয়ে দিয়েছেন আলারিওই। ৮৬ মিনিটে দুর্দান্ত এক সোলো রানে জার্মানির তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডিবক্সের বাঁ-প্রান্তে থাকা ওকাম্পোসকে পাস বাড়ান তিনি। বল নিয়ন্ত্রণে এনে ডানপায়ের ঠান্ডা মাথার ফিনিশে দলকে সমতায় ফেরান ওকাম্পোস। অভিষেকটা এর চেয়েও দারুণভাবে হয়তো স্মরণীয় করে রাখতে পারতেন না তিনি।
সমতায় ফেরার পর শেষ পর্যন্ত জয়সূচক গোলের খোঁজে ছুটেছে আর্জেন্টিনাই। জার্মানির গোলবারের পাহারায় ছিলেন মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান। জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে অবশ্য রাতটা শেষ পর্যন্ত খুব ভালো যায়নি তার। যদিও টের স্টেগানকে আর তৃতীয়বারের মত পরাস্ত করা হয়নি স্কালোনির দলের।
গড়পড়তা এক দ্বিতীয়ার্ধের আগে জার্মানি নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছিল প্রথমার্ধে। দুর্দান্ত চকিত পাসিং, তড়িৎ গতির কাউন্টার অ্যাটাকে নিকোলাস অটামেন্ডিদের রীতিমত নাকানিচুবানি খাইয়েছেন সার্জ গ্যানাব্রিরা। ১৫ মিনিটে দলকে লিড এনে দেন গ্যানাব্রিই।
অভিষেকেই দেশের হয়ে ম্যাচ বাঁচানো গোল, তাও জার্মানির বিপক্ষে। উল্লাসটা বাধভাঙাই লুকাস ওকাম্পোসের
ক্লস্টারম্যানের ক্রসে আর্জেন্টিনার তিন ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বল ডিবক্সে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি। এগিয়ে আসা আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক অগাস্তিন মার্চেসিনকে ডানপায়ের আলতো টোকায় পরাস্ত করেন গ্যানাব্রি। দেশের হয়ে গোল করার রেকর্ডটা রীতিমত ঈর্ষণীয় তার। ২০১৯ সালে জার্মানির জার্সিতে গ্যানাব্রির (৬) চেয়ে বেশি গোল করেননি কেউই। ‘ডি ম্যানশ্যাফট’দের হয়ে ১১ ম্যাচে ১০ গোল করলেন বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ড, সমান সংখ্যাক গোল করতে কিংবদন্তী মিরোস্লাভ ক্লোসার লেগেছিল ১৩ ম্যাচ। গোল করেই অবশ্য ক্ষান্ত দেননি গ্যানাব্রি, জার্মানি ব্যবধান দ্বিগুণ করেছে তার পাসেই।
২২ মিনিটে চমৎকার এক প্রতি-আক্রমণে ডানপ্রান্ত থেকে গ্যানাব্রির ক্রসে জার্মানির জার্সিতে নিজের প্রথম গোলের দেখা পান হাভের্টস। অবশ্য প্রথমার্ধেই ম্যাচ আর্জেন্টিনার ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যেতে পারত জার্মানি। কিন্তু ৩১ মিনিটে হালস্টেনবার্গের ফ্রিকিক মার্কেসিনকে ফাঁকি দিলেও প্রতিহত হয় ক্রসবারে। অবশ্য বারপোস্টের কারণে সমতায় ফেরা হয়নি আর্জেন্টিনারও। ৩৩ মিনিতে রদ্রিগো ডি পলের আগুনে শট হাওয়ায় ভেসেও ধারেকাছে যেতে পারেননি টের স্টেগান, কিন্তু বল ফিরে আসে বারপোস্টে লেগে।
ডি পলের সাথে আর্জেন্টাইন আক্রমণভাগে নেমেছিলেন মার্টিনেজ; লিওনেল মেসি, আনহেল ডি মারিয়া দের অনুপস্থিতিতে অধিনায়ক ছিলেন পাউলো দিবালা। কিন্তু কয়েকদিন আগেই ডার্বি ডি ইতালিয়ায় গোল করা দিবালা-মার্টিনেজদের কেউই নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি এদিন। আক্ষরিক অর্থেই ‘আ টেল অফ টু হাভস’-এর ম্যাচে জেতা হয়নি কারোই। প্রথমার্ধের জার্মানির ইটের জবাবটা দ্বিতীয়ার্ধের পাটকেল দিয়ে দারুণভাবেই দিয়েছে আর্জেন্টিনা। প্রীতি ম্যাচ হলেও দু’দলই জানান দিল; ম্যাচ যেমনই হোক, প্রতিপক্ষকে এতটুকু ছাড় দিতে রাজি নয় কেউই।
জার্মানি একাদশ
টের স্টেগান, এমরে চান, রইন কোচ, নিকলাস সুলে, ক্লস্টেরমান, কাই হাভার্টস, কিমিচ, হালস্টেনবার্গ, হুলিয়ান ব্রান্দত, ভাল্ডস্মিত, সার্জ গ্যানাব্রি
আর্জেন্টিনা একাদশ
অগাস্তিন মার্চেসিন, হুয়ান ফয়েথ, নিকোলাস অটামেন্ডি, মার্কোস রোহো, নিকোলাস টালিয়াফিকো, রদ্রিগো ডি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, অ্যানহেল কোরেয়া, পাউলো দিবালা, লাউতারো মার্টিনেজ