ইকুয়েডরের জালে আর্জেন্টিনার ছয় গোল
নিজেদের শেষ নয় ম্যাচে কেবল এক ম্যাচই হেরেছিল আর্জেন্টিনা। জার্মানির বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত এক দ্বিতীয়ার্ধে ড্র ছিনিয়ে আনা আর্জেন্টিনা আজও জানান দিল তাদের তারুণ্যের শক্তির। বহিষ্কারাদেশের কারণে ছিলেন না লিওনেল মেসি, ছিলেন না আনহেল ডি মারিয়াও। কিন্তু তারপরও জয় বা গোল পেতে সমস্যা হয়নি লিওনেল স্কালোনির দলের। ইকুয়েডরকে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে 'আলবিসেলেস্তে'রা। গোল পেয়েছেন লুকাস আলারিও, লুকাস ওকাম্পোস, নিকোলাস ডমিঙ্গেজের মত তরুণরা।
জার্মানির বিপক্ষে মাঠে নেমেই খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন মার্কোস আকুনিয়া, লুকাস ও’কাম্পোস এবং লুকাস আলারিও। ইকুয়েডরের বিপক্ষে তিনজনকেই একাদশে রেখেছিলেন আর্জেন্টাইন কোচ লিওনেল স্কালোনি। রক্ষণে ফিরেছিলেন জার্মান পেৎজেলা এবং ওয়াল্টার কানেমান। ইকুয়েডর ফরোয়ার্ড লাইনকে পুরো প্রথমার্ধ রীতিমত পকেটবন্দি করে রেখেছিলেন তারা। মাঝমাঠ থেকে ‘আলবিসেলেস্তে’দের আক্রমণের কলকাঠি নেড়েছেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস এবং রড্রিগো ডি পল। ম্যাচের ১২ মিনিটেই লিড নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল স্কালোনির দল।
দলকে লিড এনে দেওয়ার পর আলারিওর উদযাপন
কিন্তু পারেদেসের মাপা মাইনাসে লাউতারো মার্টিনেজের শট ইকুয়েডর গোলরক্ষক পেদ্রো ওরটিজকে পরাস্ত করলেও চলে যায় গোলবারের ওপর দিয়ে। তবে মার্টিনেজের মিসের জন্য খুব একটা ধুঁকতে হয়নি আর্জেন্টিনাকে, ২০ মিনিটেই লিড নেয় তারা। জার্মানির বিপক্ষে আকুনিয়ার ক্রসেই গোল করেছিলেন আলারিও, ইকুয়েডরের বিপক্ষেও এই জুটিতেই লিড নেয় আর্জেন্টিনা। বাঁ-প্রান্ত থেকে আকুনিয়ার ক্রসে দুই ইকুয়েডরিয়ান ডিফেন্ডারের ওপর লাফিয়ে উঠে হেডে গোল করেন আলারিও। ম্যাচের শুরু থেকেই আর্জেন্টিনার খেলা আত্মবিশ্বাসের ছাপটা ছিল স্পষ্ট, গোলের পর আরও জ্বলে ওঠেন আলারিওরা। ব্যবধান দ্বিগুণ করতেও সময় নেননি তারা, আর্জেন্টিনার এই গোলের উৎসও আকুনিয়াই।
২৭ মিনিটে বাঁ-প্রান্ত থেকে তার জোরাল নিচু ক্রস ক্লিয়ার করতে যেয়ে বল নিজেদের জালে ঠেলে দেন এস্পিনোজা। পুরো ম্যাচ বাঁ-প্রান্ত থেকে ক্রসে ইকুয়েডরকে তটস্থ রেখেছেন আকুনিয়া, তৃতীয় গোলটাও এসেছে তার কারণেই। ৩১ মিনিটে আকুনিয়ার ডিবক্সে ক্রস নিয়ন্ত্রণে আনার সময় মার্টিনেজকে ডিবক্সে ফেলে দেন দারিও আইমার, ১২ গজ থেকে ভুল করেননি পারেদেস। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার আক্রমণ রুখতে ব্যস্ত থাকা ইকুয়েডরকে পুরোটা সময়ই মনে হয়েছে অগোছালো, আর্জেন্টিনার গোলে একবারও শটও নিতে পারেননি তারা।
ওকাম্পোসের গোল উদযাপনে ব্যস্ত আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা
দ্বিতীয়ার্ধে গোলের আশায় আনহেল মেনিয়াকে নামিয়ে দেন কোচ হোর্হে সেলিকো। প্রথমার্ধে নিজেদের ছায়া হয়ে থাকা ইকুয়েডর অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মেনিয়ার হাত ধরেই পেয়ে যায় ম্যাচে ফেরার লাইফলাইন। কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে মাত্র তিন মিনিট নেন মেনিয়া, অবশ্য সেজন্য আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক অগোস্তিন মার্চেসিনকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন তিনি। ৪৯ মিনিটে বাঁ-প্রান্তে ফ্রিকিক পায় ইকুয়েডর। আনহেল মানিয়ার ফ্রিকিকের ফ্লাইটই বুঝতে পারেননি তিনি, বাঁ-প্রান্ত থেকে মেনিয়ার ফ্রিকিক মার্চেসিনের মাথার ওপর দিয়ে জড়ায় আর্জেন্টিনার জালে।
গোলের পর থেকে আক্রমণে সুযোগ পেতে থাকে ইকুয়েডর। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ভুলে সমতায় ফিরতে পারেনি তারা। ৫৮ এবং ৬২ মিনিটে মার্চেসিনকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছেন এরিক কাস্তিও। দুই গোলেই তাকে মার্ক করতে ভুল করেছিলেন পেৎজেলা। দুবারই বেঁচে গেলেও মিনিট চারেক পর অন্যপ্রান্তে গোল করে ভুলের শাপমোচনটাও দারুণভাবে করেন পেৎজেলা। ৬৬ মিনিটে দ্বিতীয়ার্ধের বদলি ফরোয়ার্ড পাউলো দিবালার ফ্রিকিকে হেড করে তিন গোলের লিড পুনরুদ্ধার করেন ফিওরেন্তিনার ডিফেন্ডার। এই গোলের পরই মূলত ম্যাচে ফেরার অনুপ্রেরণা হারিয়ে ফেলে ইকুয়েডর।
নিষ্প্রাণ ইকুয়েডরকে পেয়ে আবারও গোল করে আর্জেন্টিনা, আবারও স্কালোনির দলের নতুন অস্ত্র সেই সেটপিসেই ঘায়েল হয় তারা। ৮১ মিনিটে দিবালার ফ্রিকিকে ডিবক্সে বল পান বদলি মিডফিল্ডার গুইদো রদ্রিগেজ। ইকুয়েডর ডিফেন্ডারদের চার্জে ডিবক্সের বাইরে থাকা আরেক বদলি নিকোলাস ডমিঙ্গেজকে পাস বাড়ান তিনি, ডানপায়ের জোরাল নিচু শটে দেশের হয়ে প্রথম গোল করেন ডমিঙ্গেজ। পাঁচ গোলের পরও থেমে থাকেনি আর্জেন্টিনা, আগের ম্যাচে আলারিওর মত গোল পাওয়া ও’কাম্পোস আজও পেয়েছেন গোল। ৮৬ মিনিটে ভার্গাসের দূরপাল্লার বাঁকানো শট ফিরিয়ে দেন ওরটিজ, কিন্তু ফিরতি বল ডিবক্সে পেয়ে ভুল করেননি সেভিয়া ফরোয়ার্ড। বিশাল জয়ে স্কালোনির তরুণ দল যেন জানান দিল; মেসি-ডি মারিয়া ছাড়াও স্বপ্ন দেখতে পারেন তাদের সমর্থকেরা।