বিপিএলের অধিনায়কনামা : এবার কোন চমক?
গাড়ি থেকে নেমে রীতিমতো ছুটছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ‘দেরি হয়ে গেছে’ বলে ঢুকে গেলেন মিরপুরের ড্রেসিংরুমের দিকে। হয়তো টিম মিটিংয়ে দেরি করে ফেলেছেন, হয়তো সেখানে অধিনায়কত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে খুলনা টাইগার্সের। মুশফিকুর রহিমকে বাদ দিয়ে কি মিরাজকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেবে খুলনা? নাকি হবেন অন্য কেউ? বিপিএল শুরুর দুইদিন আগেও তাই দলগুলির অধিনায়ক নিয়ে আছেন আলোচনা, একটি দল বাদে যে কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি কারও নাম।
মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল থেকে শুরু করে ড্যারেন স্যামি, কুমার সাঙ্গাকারা বা ব্র্যাড হজ- বিপিএলে এখন পর্যন্ত অধিনায়কত্ব করেছেন মোট ৩৭ জন। কমপক্ষে ১০ ম্যাচ অধিনায়ক করা ক্রিকেটার ১৪ জন। সবচেয়ে বেশি ৭৩ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন মাশরাফি, শিরোপা জিতেছেন ৪ বার। মাশরাফির পরই এ তালিকায় আছেন মাহমুদউল্লাহ, ৬৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, তবে শিরোপা জেতা হয়নি তার। ৬৪ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করা সাকিব শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন ১ বার, ১৩ ম্যাচ নেতৃত্ব দেওয়া ইমরুল কায়েসের ঝুলিতেও আছে শিরোপা।
একাধিকবার শিরোপা জেতা একমাত্র অধিনায়ক তাই মাশরাফিই। সাকিব এবার বিপিএল খেলতে পারছেন না আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে, ফলে সে তালিকায় যুক্ত হওয়ার আপাতত সুযোগ নেই তার। ইমরুল খেলছেন চট্টগ্রামে, তবে সূত্রমতে তিনি আপাতত দ্বিতীয় পছন্দের অধিনায়ক তাদের।
নিয়মিত ফ্র্যাঞ্চাইজি নেই এবার বিপিএলে, তবে দুটি ছাড়া বাকি দলগুলি মোটামুটি আছে স্পন্সরদের হাতে। এখন পর্যন্ত চারটি দলের অধিনায়ক ঠিক হওয়ার তথ্য আছে প্যাভিলিয়নের কাছে, তবে মাত্র একজনের নাম এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। টুর্নামেন্ট শুরুর দুইদিন আগেও বাকি দলগুলির অধিনায়ক নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। তবে সব মিলিয়ে এবার অধিনায়কত্বের তালিকায় থাকতে পারে চমক।
যেমন মোসাদ্দেক হোসেন। প্যাভিলিয়ন নিশ্চিত হয়েছে, সিলেট থান্ডারের নেতৃত্ব পাচ্ছেন এই অলরাউন্ডার। এর আগে চিটাগং ভাইকিংস ও ঢাকা ডায়নামাইটের হয়ে বিপিএলে মোট ৪৭ ম্যাচ খেলেছেন মোসাদ্দেক, তবে নেতৃত্ব দেননি একবারও। গতবার রাজশাহী কিংস চমক দিয়েছিল মিরাজকে অধিনায়ক করে। এবার রাজশাহীর অধিনায়ক হতে পারেন শোয়েব মালিক, এর আগে ২৭টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি বিপিএলে, ২০১৭ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে এক ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
গতবার নেতৃত্ব দেননি তামিম, এবার তিনি খেলবেন মাশরাফির অধীনে
মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে অবশ্য চমক থাকার কথা নয় মোটেও। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে একজন অধিনায়ককে নিশ্চিত করেছে দলগুলি, অনুমিতভাবেই তিনি মাশরাফি। এর আগে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও রংপুর রাইডার্সকে শিরোপা জেতানো মাশরাফি নেতৃত্ব দেবেন ঢাকা প্লাটুনকে। তার দলে আছেন তামিম ইকবাল, শাহিদ আফ্রিদির মতো সাবেক বিপিএল অধিনায়করা। গতবারের মতো এবারও তাই নেতৃত্ব ছাড়াই খেলবেন তামিম।
গতবার স্টিভ স্মিথ চলে যাওয়ার পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অধিনায়ক ছিলেন ইমরুল, ফাইনালে সেঞ্চুরি করা তামিম ছিলেন নেতৃত্ব থেকে দূরে। ইমরুল এবারও অধিনায়কত্ব করবেন, তবে সেটি হবে খন্ডকালিন দায়িত্ব। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের অধিনায়ক হিসেবে মাহমুদউল্লাহকে বেছে নিচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট, প্যাভিলিয়নকে জানিয়েছে তাদের এক সূত্র। তবে প্রথম দুই ম্যাচে চোটের কারণে অনিশ্চিত মাহমুদউল্লাহ, তার জায়গায় অধিনায়কত্ব করার কথা ইমরুলের।
খুলনার নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা রয়েছে মুশফিকুর রহিমের। বিপিএলে এর আগে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন দলের হয়ে খেলেছেন তিনি, নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রতিটি দলকেই। এবার অধিনায়কত্ব পেলে মুশফিকের দলের সঙ্গে পূরণ হবে অধিনায়কত্বের সপ্তকও। অবশ্য গতবার রাজশাহীকে নেতৃত্ব দেওয়া মিরাজের দিকেও ঝুঁকতে পারে তাদের টিম ম্যানেজমেন্ট।
রংপুরের অধিনায়ক কে হবেন, সে সম্পর্কে এখনও কিছু জানেন না কোচ মার্ক ও’ডনেল। সোমবার অনুশীলন শেষে তিনি প্যাভিলিয়নকে জানিয়েছেন, এদিন রাতে অধিনায়ক ঠিক করার আলোচনায় বসবেন তারা। তাদের অধিনায়ক হিসেবে থাকতে পারেন ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ অভিজ্ঞ নাদিফ চৌধুরি। এছাড়া আছেন আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবিও।
গতবারের চ্যাম্পিয়ন দল কুমিল্লার অধিনায়কও ঠিক হয়নি এখনও। এ দলের চারজন ক্রিকেটার খেলেছেন এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে, সোমবারও তাদের অনুশীলনে শুরুর দিকে ছিলেন আল-আমিন হোসেন, আবু হায়দার রনি, সানজামুল ইসলাম ও সাব্বির রহমান। স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে বিপিএলে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা নেই এ দলের কারোরই। সেক্ষেত্রে সৌম্য বা স্থানীয়ের মধ্যে যিনিই অধিনায়ক হন- মোসাদ্দেকের মতো অভিজ্ঞতা হবে তারও।