বিপিএল হ-য-ব-র-ল : পর্ব এক?
ফ্র্যাঞ্চাইজি পদ্ধতি নেই, এবারের বিপিএল তাই শুরুর আগেই আগের আসরগুলির চেয়ে আলাদা। তবে বিপিএলের আয়োজনে- অন্তত শুরুর আগে- থাকলো অগোছালো ব্যবস্থাপনার ছাপ। অবশ্য সময়ের ফ্রেম বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বরাবরের মতোই।
টুর্নামেন্ট শুরুর পর বিপিএলে ফিরবে শৃঙ্খলা? নাকি হ-য-ব-র-ল বিপিএলের আরও পর্ব লিখতে হবে প্যাভিলিয়নকে?
শুধু একটি মাঠ
জহুরুল ইসলাম করিডোরটা পেরিয়ে একাডেমি মাঠের ভেতরে ঢুকে যেন মুহুর্তের জন্য হারিয়ে গেলেন। হাতে ধরে বিশাল কিটব্যাগটা টেনে আনছিলেন। জহুরুলের সামনে তখন কয়েকটি দল আর তাদের অনুশীলন- রংপুর রেঞ্জার্সের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান বাঁদিক যেতে শুরু করে ফিরলেন ডানদিকে। খুঁজে পেয়েছেন নিজের দল।
বিপিএল শুরুর আগে শের-ই-বাংলার একাডেমি মাঠে গেলে জহুরুল কেন, হারিয়ে যেতে পারেন যে কেউই। এখানেই চলেছে সাত দলের অনুশীলন, একটু এদিক-ওদিক করা সময়ে। এক দল নেট করছে তো অন্য দল স্ট্রেচিং, হয়তো তার সামনে বা পেছনে চলছে কারও ক্যাচিং বা থ্রোয়িং অনুশীলন। সঙ্গে আছে সংবাদকর্মীদের ভীড়। শুধু ভজকট অবস্থা নয়, আছে যে কোনও সময় যে কোনও দিক থেকে উড়ে আসা বলের আঘাতের শঙ্কাও।
অনুশীলনে চোখ রাখতে তাই দুটি চোখ আপনার জন্য যথেষ্ট হবে না। এক মাঠে এতো দল কেন একসঙ্গে অনুশীলন করছে, সেটি নিয়ে আপনার বিস্ময় যদি না থাকে, তবে কেন দুই চোখের বেশি আপনার নেই- সেটি আপনাকে বিস্মিত করতেই পারে।
রংপুর কোচ মার্ক ও’ডনেল প্রথমদিন এসে নিজের বিস্ময়টা লুকাতে পারেননি। ভদ্রলোক বাংলাদেশে এসেছেন এই প্রথমবার, তাও আবার এসেছেন নিউজিল্যান্ড থেকে। এবং এসে পড়েছেন বিপিএলের এই অনুশীলনমেলায়! ব্যাপারটা একবার ভাবুন শুধু!
অধিনায়ক কই?
“দেরি আছে এখানে, চল নামাজটা পড়ে আসি”।
মুমিনুল হককে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। একাডেমি মাঠের এক কোণে অধিনায়কদের অফিসিয়াল ফটোসেশনে হাজির চট্টগ্রাম অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, সঙ্গে ঢাকা ‘প্রতিনিধি’ মুমিনুল। তবে তখনও ফটোসেশন শুরুর নামগন্ধ নেই, আয়োজন শুরু হয়েছে তখন মাত্র। অবশেষে যখন শুরু হলো, তখনও এসে পৌঁছাতে পারেননি রংপুর অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি।
অধিনায়কদের এ ফটোসেশন বিপিএলে এবার অধিনায়ক নির্বাচনের চিত্রটাই যেন ফুটিয়ে তোলে- এক কথায় যাকে বলে ‘অনিশ্চয়তা’।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগেরদিনেরও অনেকটা সময় জুড়ে নিশ্চিত ছিল না সাত দলের অধিনায়ক। ঢাকা অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজার নাম ঘোষণা করেছিল আগেই। এদিন সংবাদমাধ্যমের সামনে অধিনায়ক হিসেবে প্রথমে আসলেন সিলেটের মোসাদ্দেক হোসেন, জার্সি উন্মোচনের সঙ্গে অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি ও আন্দ্রে রাসেলকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে রংপুর। বাকি তিন দলের অধিনায়ককে অফিসিয়ালি জানা গেল ওই ফটোসেশনেই।
অবাক রদবদল (অথবা শুধু বদল)
সবকিছু নিয়ে আপনি ট্রেনযাত্রার জন্য প্রস্তুত। ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগমুহুর্তে জানলেন, আপনার সিটটা অন্য আরেকজনকে দিয়ে দিয়েছে রেল-কর্তৃপক্ষ। আপনি অন্য কোনও সিটে যাবেন নাকি এটিই ‘শেয়ার’ করবেন, নিশ্চিত নয় সেটিও। বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির সঙ্গে গেম ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খানের অবস্থা হয়েছে এমনই।
বিপিএলের এ আসরকে ‘বিশেষ সংস্করণ’ বলে বিসিবি প্রতিটি দলের সঙ্গেই ঠিক করে দিয়েছে একজন করে ডিরেক্টর। আর স্পন্সর না পাওয়া দলগুলির সবকিছুই থাকার কথা ছিল বিসিবির অধীনে। সোমবার পর্যন্ত এমন দল ছিল দুটি- রংপুর রেঞ্জার্স ও কুমিল্লা ওয়ারিয়রস। রংপুরের পরিচালক ছিলেন আকরাম। সঙ্গে ছিলেন হাবিবুল বাশার। প্লেয়ারস ড্রাফটের সময়ও ছিলেন এ দুজন।
তবে মঙ্গলবার রংপুর জার্সি উন্মোচন করলো, সেখানে তাদের পরিচালক হিসেবে থাকলেন ওয়ার্কিং কমিটির চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন সিরাজ। শেষ মুহুর্তে এসে রংপুরের স্পন্সর হয়েছে ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ‘ইনসেপটা’, যে কোম্পানি সিরাজেরই। এর আগে তিনি ছিলেন রাজশাহী রয়্যালসের পরিচালক, তবে স্পন্সর-স্বত্বর সঙ্গে বিসিবি পরিচালক হিসেবে রংপুরে চলে এসেছেন তিনি।
আর আকরাম খানের অবস্থান পড়ে গেছে অনিশ্চয়তায়। সংবাদ সম্মেলনে সিরাজ বললেন, আকরাম রাজশাহী বা অন্য কোনো দলে যাবেন কিনা তিনি নিশ্চিত নন। তবে আকরাম থাকতে পারেন তার সঙ্গে রংপুরেও। আর পরে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরিও নিশ্চিত করতে পারেননি, আকরাম কোন দলের সঙ্গে থাকবেন, “আকরাম ভাই যে এটি জানেন না, সেটি আমি জানি না।”
লেগস্পিনার খেলানো- বিসিবির নিয়ম নাকি চাওয়া?
শুধু স্কোয়াডে নয়, প্রতি একাদশেই একজন করে স্পিনার খেলানো বাধ্যতামূলক- বিপিএলে এবার এমন নিয়মের কথা বলে আসছিল বিসিবি। সঙ্গে ১৪০ কিলোমিটারের ওপর গতিতে বোলিং করতে পারেন- এমন একজন বিদেশী পেসারকে স্কোয়াডে রাখা। তবে রংপুরে নেই কোনো লেগস্পিনার।
তেমন প্রশ্ন করা হলে অধিনায়ক মোহাম্মদ নবি ফিরলেন সিরাজের দিকে, “এমন কোনও নিয়ম আছে নাকি?”
সিরাজ অবশ্য বললেন, এটি ‘জাতীয় স্বার্থে’ বলা, তবে আবশ্যক নয়।
“প্রথম কথা হলো- ১৪০ কিলোমিটার গতির বোলিং চাইলে তেমন উইকেট বানাতে হবে তো, (নাকি)?
দ্বিতীয় কথা হলো- টিম কম্বিনেশনের ব্যাপার আছে। আমরা লেগস্পিনার খেলানোর চেষ্টা করবো। এটা “প্রায়োরিটি”, “ম্যান্ডাটরি” না। আমার মনে হয় না নিয়মের মধ্যে এমন কিছু আছে।”
এবং ওগো বিদেশিনী...
দলের ড্রাফটে উপস্থিত ছিলেন, তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই রংপুর রেঞ্জার্সকে ‘না’ করে দিয়েছেন তাদের হতে-হতে-হলো-না হেড কোচ গ্রান্ট ফ্লাওয়ার। তার জায়গায় মার্ক ও’ডনেল এসেছেন প্রথম ম্যাচের দুদিন আগে, মানে অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছেন দুইটি সেশনে। এর মাঝে অধিনায়কত্ব নির্বাচনের মিটিং-ও করতে হয়েছে তার।
সিলেট ও কুমিল্লা কোচ যথাক্রমে হার্শেল গিবস ও ওটিস গিবসন অনুশীলনে এসেছেন নিজের প্রথম ম্যাচের আগেরদিন। তাদের অধিনায়কও ঘোষণা করা হয়েছে এদিনই। বিদেশী ক্রিকেটারদের নিয়েও আছে ধোঁয়াশা- কারা আসছেন, কারা আসছেন না- প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
দলের অনুশীলনে শুধু বিদেশী নন, যোগ দেননি স্থানীয় ক্রিকেটারদের একটা অংশও। সোমবার কুমিল্লার অনুশীলন করেছেন ৪-৫ জন মিলে, এদিন সে সংখ্যা বাড়লেও ছিলেন না সৌম্য সরকার, ইয়াসির আলি রাব্বী, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ও সুমন খান। এসএ গেমসে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে গিয়েছিলেন তারা, ফিরে এসে তারা কি সরাসরি নেমে পড়বেন কুমিল্লার প্রথম ম্যাচ খেলতে?