শানাকা ৭৫*, রংপুর ৬৮
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ১৭৩/৭, ২০ ওভার
রংপুর ১৪ ওভারে ৬৮ অলআউট
ফলঃ কুমিল্লা ১০৫ রানে জয়ী
১৭ ওভার শেষেও কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের রান ছিল ১০৮, দাসুন শানাকা অপরাজিত ১৪ বলে ১৫ রানে। সেখান থেকে কুমিল্লা গেল ১৭৩ রান পর্যন্ত, শনাকা পরের ১৫ বলে ৪০০ স্ট্রাইক রেটে তুললেন ৬০ রান! মিরপুরে শেষদিকে শনাকার ঝড়ে সাজানো বাগান হঠাৎ করে এলোমেলো হয়ে গেছে রংপুরের। প্রথম ৩ ওভারে ১১ রানে ২ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ বোলিং শেষ করেছেন ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে।
সেই রানের জবাব তো দূরে থাক, মুখ ফুটে কিছু বলতেই পারেনি রংপুর রেঞ্জার্স। অলআউট হয়ে গেছে ৬৮ রানেই। প্রথম ম্যাচে বড় পরাজয়ে রান রেটেও তারা পিছিয়ে গেছে অনেকখানি।
কুমিল্লার ইনিংসে ছিল দুই ভাগ- শানাকার ওই ঝড়ের আগে ও পরে। আগে ব্যাটিং নিয়ে ৪ জন ব্যাটসম্যান করলেন ১৫-২৬ রানের ভেতর, ইনিংস বড় করতে পারলেন না কেউই। অসময়ে উইকেট হারালেন তারা, আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু পেয়ে তাদেরকে চেপে ধরলেন সনজিত-মোস্তাফিজ-গ্রেগরিরা। শনাকা ইনিংস বড় করলেন, আর তাতে কুমিল্লা পেয়ে গেছে লড়াইয়ের মতো দারুণ স্কোর।
১৮তম ওভারে গ্রেগরির ওপর চড়াও হয়ে ঝড়টা শুরু করেছিলেন শানাকা। এর আগের ওভারে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে স্লোয়ারে বোল্ড করে কুমিল্লাকে ১০০ রানের নিচেই ৬ উইকেট হারানো অবস্থায় ঠেলে দিয়েছিলেন গ্রেগরি। তার সেই ওভারে শানাকা মারলেন দুই ছয়, উঠলো ১৬ রান।
বড় ঝড়টা গেল পরের ওভারে মোস্তাফিজের ওপর দিয়ে। চারটি ছয় মারলেন তিনি মিডউইকেট থেকে লং-অনের মাঝ দিয়ে, এর মাঝে একটিতে তো গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের ওপর উঠে হারিয়েই গেল বল। শেষ ছয়টি দিয়ে শানাকা ফিফটি পেয়ে গেছেন মাত্র ২৩ বলে। সে ওভারে ২৬ রানের পর শেষ ওভারে জুনাইদের কাছ থেকে শানাকা নিলেন আরও ২৩ রান। শেষ তিন বলের স্কোরলাইন ছিল এমন- চার, ছয়, ছয়!
অথচ শুরুটা ছিল পুরো বিপরীত। ইনিংসের প্রথম বলেই টার্ন না বুঝে খেলতে গিয়ে নবির বলে স্টাম্পে বলে ডেকে এনেছিলেন ইয়াসির রাব্বি। পরের ৪ ওভারে ৪০ রান তুলেছিল কুমিল্লা, মোস্তাফিজের বলে সৌম্য ক্যাচ দেওয়াতে আবার থমকে গিয়েছিল তারা।
ডেভিড মালান ও সাব্বির রহমানের ৩৮ রানের জুটির আগে-পরে সনজিত সাহা নিয়েছিলেন দুই উইকেট- রিভিউয়ের সহায়তায় রাজাপাকসে হয়েছিলেন এলবিডব্লিউ, বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে স্টাম্পড মালান। এরপর সাব্বির পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েছিলেন মোস্তাফিজের বলে, আর অঙ্কন গ্রেগরির বলে হয়েছিলেন বোল্ড। এরপর রনিকেও বোল্ড করেছিলেন গ্রেগরি, তবে ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিল শানাকা ঝড়।
সেই ঝড়ের ঝাপটা থেকে ব্যাট হাতেও বের হতে পারেনি রংপুর। মুজিব উর রেহমান দেখালেন, কেন নতুন বলে বিশ্বের সেরা স্পিনারদের একজন। শুরু থেকেই বেঁধে রাখলেন রংপুরকে, সেই চাপ নিতে না পেরে আফগান সতীর্থ মোহাম্মদ শাহজাদ ক্যাচ তুলে দিলেন স্লগ করতে গিয়ে। আনলাকি থার্টিনে শাহজাদের ফেরার পর শুধুই পথ হারিয়েছে রংপুর। জহুরুল ৫ রানে রনির বলে ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে।
ফজলে মাহমুদকে ১ রানে বোল্ড করেছেন আল আমিন, পরের বলে লুইস গ্রেগরিকে কাভারে ক্যাচ দিতে বাধ্য করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। সেটা ঠেকিয়েছেন মোহাম্মদ নবী, কিন্তু বড় কিছু করতে পারেননি। সৌম্যের বল কাট করতে গিয়েছিলেন, পয়েন্টে দারুণ এক ক্যাচ নিয়েছেন মালান। নবী ফিরেছেন ১১ রানে। ৫০ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছে রংপুর।
এরপর তাদের পতনটা হয়েছে দ্রুত। সঞ্জিত কোনো রান না করেই বোল্ড হয়ে গেছেন সানজামুলের বলে। মোহাম্মদ নাঈম ধুঁকছিলেন শুরু থেকেই, সৌম্য আল আমিনের ভুল বোঝাবুঝি না হলে আউট হয়ে যেতে পারতেন আগেই। শেষ পর্যন্ত সৌম্যের বলেই এলবিডব্লু হয়েছেন ২৭ বলে ১৭ রানের সংগ্রামী ইনিংস খেলে। এরপর তাসকিন ও জুনাইদও ফিরেছেন দ্রুত। ৩ উইকেট নিয়ে আল আমিন সফলতম বোলার, সৌম্য ও সানজামুল নিয়েছেন দুইটি করে উইকেট।