দলে জায়গার নিশ্চয়তা 'বদলে দেয়' ইমরুলকে
“এই আপনাদের বলার পরই ফর্ম থেকে হারিয়ে যাই আমি। ফর্মে থাকতে থাকতেও হারিয়ে যাই।”
ইমরুল কায়েস কথাটা বলার পর একটা হাসির রোল উঠল সংবাদ সম্মেলনে। ইমরুল কথাটা বললেন অবশ্য বেশ সিরিয়াস হয়েই। প্রশ্ন ছিল, বিপিএলের মতো মঞ্চে নিয়মিত পারফর্ম করলেও জাতীয় দলে কেন পারেন না। অবশ্য এ কথার পিঠে অন্য প্রশ্নের জবাবে ইমরুল বলেছেন, বিপিএলে তার জায়গা নিশ্চিত জেনে একটা বাড়তি স্বাধীনতা পান। তাকে বদলে দেয় সেটাই। নিজের ক্রিকেট জীবন নিয়ে কখনোই হতাশ হন না বলেও জানিয়েছেন তিনি।
“জাতীয় দলের চাপ নিয়ে যেটা বললেন, সারা বছর আমরা একটা বা দুটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলি”, ব্যাখ্যা করেছেন ইমরুল, “টেস্ট কিংবা ওয়ানডের পর দেখা যায় আমরা টি-টোয়েন্টি খেলি। দেখা যাচ্ছে দুটো-তিনটা ম্যাচ খেলে আমি টি-টোয়েন্টি খেলছি। জাতীয় দলে হয় কি, একটা ম্যাচ রান না পেলে পরের ম্যাচগুলোর জন্য চাপ হয়ে যায়। এখানে আমি জানি আমি ভালো খেলি খারাপ খেলি সবগুলো ম্যাচ খেলবো। এ স্বাধীনতা যখন আপনার কাছে থাকবে তখন আপনার মধ্যে একটা পরিবর্তন আসবে।”
সে পরিবর্তনের ফল- দুঃস্বপ্নের ভারত সফরের পর বিপিএলের শুরুর ম্যাচে চাপে পড়া চট্টগ্রামকে উদ্ধার করেছে ইমরুল কায়েসের ৩৮ বলে ৬১ রানের ইনিংস। ২০ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল চট্টগ্রাম, চ্যাডউইক ওয়ালটনের সঙ্গে দারুণ এক জুটিতে তাদেরকে পথ দেখিয়েছেন ইমরুল। ভারত সফরে ব্যর্থতার জন্য নিজেদের প্রস্তুতির ঘাটতিকে দুষেছেন তিনি। বলেছেন, জাতীয় লিগের বোলারদের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতি যথেষ্ট নয় তাদের, “দুই-তিন সপ্তাহ ধরে একটা প্রস্তুতি নিয়ে তবেই বিশ্বমানের একটা দলের সাথে খেলতে হবে, তিন-চারদিনের প্রস্তুতি আর জাতীয় লিগের বোলারদের মুখোমুখিই হয়ে টেস্ট খেলা অনেক কঠিন। আমার জন্য না বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের জন্যও কঠিন। এ জায়গাগুলোতে আমাদের জন্য উন্নতি জরুরী, বোলার হিসেবে কাকে বল করবো কাকে খেলবো এসব এখান থেকে প্রস্তুত হয়ে গেলে সবার জন্যই ভালো।”
|
ম্যাচজেতানো ইনিংস খেলেছেন ইমরুল কায়েস।
তবে জাতীয় দলে সুযোগ পেলে নিজেকে ভাগ্যবানই মনে করেন তিনি সবসময়ই, “না না, আমি আমার ক্রিকেট জীবন নিয়ে কখনোই হতাশ নই। এখন অনেক ভাল, জাতীয় দলে যখনই সুযোগ পাই খেলতে পারলে ভাগ্যবান মনে করি। হতাশ না, (আসলে) আমার ক্যারিয়ারটা আরও ধারাবাহিক হতে পারতো হয়নি এটা নিয়ে আফসোস করে লাভ নাই। সামনে যে কয় বছর খেলবো চেষ্টা থাকবে ভালো ক্রিকেট খেলার।”
গত বিপিএলের চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক ইমরুল হতাশ নন মাহমুদউল্লাহর অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব না পেয়েও, “এটা আসলে পুরোটাই টিম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপার। উনারা যেটা ভালো মনে করেছেন সেটাই করেছেন। হয়তো ওকে দিয়ে দলের ভাল কিছু হবে ভেবেই অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়েছে। আর নিজের পারফরম্যান্সে অবশ্যই খুশি কারণ চাপের মুখে খেলার চেষ্টা করেছিলাম। প্রত্যেকটা মুহুর্ত উপভোগ করেছি, কোন চাপ নেইনি। চেষ্টা করেছি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়ার।”
সে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার পেছনে তার পরিকল্পনা ছিল, স্থানীয় বোলারদের ওপর চড়াও হবেন। রানতাড়ায় নিজের খেলা সাজিয়েছেন সেভাবেই “পরিকল্পনা বলতে আমি আমার স্থানীয় ক্রিকেটারদের ভালো করেই জানি কী করবে। পরিকল্পনা ছিল আমি যদি ১৮ ওভার পর্যন্ত টিকতে পারি তাহলে প্রয়োজনীয় রান আমি পুষিয়ে দিতে পারবো। একটা বোলারকে আমি লক্ষ্য করবো, ওর ওভারেই খেলাটা বদলে যাবে। সবমিলিয়ে আমাদের ওয়ালটন ভালো ব্যাট করেছে, শ্রীলঙ্কান ফার্নান্ডো ভালো শুরু করে দিয়েছে। সবার অবদানেই এমন জয় সম্ভব হয়েছে।”
আর তার বিপক্ষে ওঠা সমালোচনার জবাবে ইমরুল বলেছেন, “মানুষ বিখ্যাত না হলেতো সমালোচনা হয়না, ভালো হোক খারাপ হোক সমালোচনা হয়। জিনিসটা কী দেখেন ভাই, ভারত সিরিজে আমি খারাপ করেছি যেটা আমি নিজেও হতাশ কারণ আমাদের টেস্ট ম্যাচের প্রস্তুতিটা আরও ভালো হওয়া দরকার একজন খেলোয়াড় হিসেবে বলছি।”